নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার পরিণতির ভয় দেখিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘এমনও শোনা যাচ্ছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য নির্বাচন কমিশনারদের বলা হয়েছে আপনারা যদি আমাদের কথা ও সরকারের কথা না শোনেন তাহলে আপনাদের সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার পরিণতি হবে। এই ভয় দেখিয়েই তপশিল ঘোষণা করা হয়েছে। সর্ব মহলে এই কথা প্রচারিত আজকে।’

রিজভী বলেন, ‘সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে নিজের সিংহাসন ধরে রাখার জন্য। জুলুম নির্যাতনের এমন কোনো মাত্রা নেই যেটা তারা গণতন্ত্রকামী মানুষের ওপর নামিয়ে আনছে না। অত্যাচার নির্যাতনের পৈশাচিকতা দিনকে দিন নতুন মাত্রায় যোগ হচ্ছে। নিষ্পাপ কিশোর তরুণদের ধরে নিয়ে নিরুদ্দেশ করা হচ্ছে। এ কোন রাষ্ট্র? আমরা কোন দেশে বসবাস করছি? একাত্তরে এত রক্ত এত ত্যাগের বিনিময়ে যে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেই রাষ্ট্রের সন্তানদেরই তারা অদৃশ্য করে আনন্দ লাভ করছে। তারা মনে করছে এদের অদৃশ্য করে দিলে এই যে আমাদের শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচি এগুলো সফল হবে না। কিন্তু এই বিপুল জনতরঙ্গের মধ্যে আপনারা কয়জনকে গ্রেপ্তার করবেন কয়জনকে অদৃশ্য করে দিবেন?’

নির্বাচন কমিশনের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের স্বতন্ত্র সত্ত্বা, স্বাধীনতা বলতে কিছু নেই। তারা আবার অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেছেন। সরকারের চাপে পড়ে তারা নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা করেছেন। এত মানুষ যারা দীর্ঘদিন ধরে গণতন্ত্র বঞ্চিত ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত তাদের দাবিকে উপেক্ষা করে আপনারা কী করে একতরফা নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা করলেন? এই তপশিল ঘোষণার জন্য কি আপনি কোনোভাবেই বিবেকের চাপ অনুভব করেননি? আপনার চাকরি রক্ষা করাটাই কি সবচেয়ে বড় বিষয়? মানুষ আপনাদের ধিক্কার জানাচ্ছে এই তপশিল ঘোষণা করার জন্য। মানুষ অত্যন্ত ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে এই তপশিলকে।’

রিজভী বলেন, ‘সবাই মনে করছে এই নির্বাচন কমিশন একটি পা-ও ফেলতে পারবে না শেখ হাসিনার কথার বাইরে গিয়ে। শেখ হাসিনার চোখ রাঙানিতে তাদের কাজ করতে হবে। এই আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনারদের অধীনে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘দেশে যে গণতন্ত্র নেই সেই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা যে লড়াই-সংগ্রাম করছি এই লড়াই সংগ্রামের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে এই দেশে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করে জনগণের হাতে জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে, এটাই হচ্ছে আমাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য।’

রিজভী আরও বলেন, ‘বিএনপির শান্তিপূর্ণ হরতাল অবরোধ কর্মসূচি পালন করার জন্য জনগণ আজকে রাস্তায় নেমে এসেছে। এই আধিপত্যবাদী সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের বিজয় হবেই ইনশাআল্লাহ। জনগণ এখন বিজয়ের দ্বার প্রান্তে।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে বিএনপি ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের মোট গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪৯০ জনের অধিক নেতাকর্মী, মোট মামলা হয়েছে ১২টি, মোট আসামি করা হয়েছে ১৩৭০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে এবং মোট আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী।’