রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের নির্দেশনা পুরোপুরি না মেনে। এসব ভবনে অগ্নিসংকেতের ব্যবস্থা নেই। নেই পর্যাপ্ত পানি ও অগ্নিনির্বাপণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। পর্যাপ্ত সিঁড়ি থাকলেও সেগুলো উন্মুক্ত নয়। বাণিজ্যিক ভবনে সিঁড়িতেও বসানো হয়েছে দোকানপাট-গুদাম। এমনকি মার্কেট-শপিংমল ভবন সংলগ্ন অবস্থায় যেখানে-সেখানে ঝুলছে বৈদ্যুতিক তার ও এসি যন্ত্রের সংযোগ। সব মিলে ঢাকার ৫৫ শতাংশ ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ।

সম্প্রতি প্রকাশিত ফায়ার সার্ভিসের একটি প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া যায়। ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর সারা দেশে ভবনগুলোর অগ্নিনিরাপত্তার বিভিন্ন বিষয় পরিদর্শন করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।

সম্প্রতি রাজধানীর বঙ্গবাজারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটকে ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ১০ বার নোটিশ দিলেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা না থাকায় ফায়ার সার্ভিসের ওই নোটিশ পাত্তাই দেননি ভবন মালিক বা ব্যবসায়ীরা। আর আইনি দুর্বলতার কারণে সংস্থাটি তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থাও নিতে পারেনি। গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকটি বড় আগুনের ঘটনায় কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে সব মহল।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা যায়, ঈদের পর অগ্নিঝুঁকিতে থাকা মার্কেট, হাসপাতাল ও ভবনের বিরুদ্ধে কঠোর হতে যাচ্ছে সরকার। অগ্নিঝুঁকিতে থাকা ভবন এরই মধ্যে গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছে। সম্প্রতি এমন আভাসও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, ঈদের পর অগ্নিকাণ্ড ও দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে থাকা ঢাকার কিছু বিপণিবিতান বন্ধ করে দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, এক বা দুটি বিপণিবিতানকে আমরা মনে করি অনিরাপদ এবং সেখানে আকস্মিক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাদের বিষয়ে আমাদের কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

সালমান এফ রহমান সরকারের তরফ থেকে কঠোর পদক্ষেপের বার্তা দিলেও কোন কোন মার্কেট বন্ধ হবে, সে নাম তিনি বলেননি।

রাজধানীতে আগুনের ঝুঁকিতে আছে এমন মার্কেট, শপিংমল, হাসপাতাল, বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবনের তালিকা করেছে ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স। তালিকায় গাউছিয়া মার্কেট, নূর ম্যানশন, রাজধানী সুপার মার্কেট, কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেট, লিলি প্লাজা, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটসহ এক হাজার ৩০৫টি মার্কেট ও ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ৪৫০টি ভবনকে অতিঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে। আর ঢাকা মেডিকেল ও সোহরাওয়ার্দীসহ চার শতাধিক হাসপাতালও আছে এ তালিকায়।

এসব মার্কেট কর্তৃপক্ষ ও ভবন মালিকদের কাছে সতর্কবার্তা পাঠানো শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিস। পর্যায়ক্রমে এসব ভবনের সব মালিকই সতর্কবার্তা বা নোটিশ পাবেন বলে ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়।

গত বছরের ৪ জুন চট্টগ্রামের বিএম ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত হন ৫১ জন। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে মারা যান ৭১ জন। একই বছর ২৮ মার্চ বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন লেগে ২৬ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ৭০ জন আহত হন। ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীতে অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জন মানুষ প্রাণ হারান।

ফায়ার সার্ভিসের ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২২ সালে সারা দেশে ২৪ হাজার ১০২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হন ৯৮ জন এবং আহত হন ৪০৭ জন। নিহতদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীও রয়েছেন ১৩ জন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে সারা দেশে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৩৪২ কোটি ৫৮ লাখ ৫১ হাজার ৩৮৯ টাকা। আর উদ্ধার করা মালামালের আনুমানিক মূল্য ১ হাজার ৮০৮ কোটি ৩২ লাখ ৬৪ হাজার ৬৬০ টাকা। এছাড়া ৯ হাজার ৫১৭টি অগ্নিকাণ্ডের অপারেশনে যাওয়ার আগে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

এসব অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের মধ্যে পুরুষ ৭২ জন ও নারী ১৩ জন। অগ্নিনির্বাপণে গিয়ে দুর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিহত হয়েছেন ১৩ জন এবং আহত হয়েছেন ৪০৭ জন।

বঙ্গবাজার পুড়ে ভষ্মীভূত হওয়ার আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ হাসপাতাল ও ভবন-মার্কেট পরিদর্শন কাজ শুরু করেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ও ফায়ার সার্ভিসের যৌথ দল। তারা সম্প্রতি ঢাকা মেডিকেল ও গাউছিয়া মার্কেটসহ বেশকিছু ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছে। আর বঙ্গবাজারকেও ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছিল ২০১৯ সালেই।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, আগুনের ঝুঁকিতে থাকা মার্কেট ও ভবন নিয়ে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে অতিঝুঁকিতে থাকা অন্তত ৪৫০টি মার্কেট ও ভবন।

এদিকে চট্টগ্রামের বিএম ডিপো কিংবা বনানীর এফআর টাওয়ার, পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টা ও নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এখনো সবার মনে দাগ কাটে। এসব ঘটনায় হতাহতের পরিবারগুলো এখনো লাল আগুনের নীল কষ্ট বয়ে বেড়াচ্ছে। প্রায় প্রতিবছরই ঢাকাসহ সারা দেশে এমন অগ্নিকাণ্ডে হতাহত এবং ক্ষয়ক্ষতির পরও কার্যকর উদ্যোগ নেন না সংশ্লিষ্টরা। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বারবার চিঠি দেওয়া হলেও টনক নড়ে না তাদের। বড় কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলে অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে কেউ মাথাও ঘামান না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

তালিকায় ঝুঁকিপূর্ণ ও অতিঝুঁকিপূর্ণ- এই দুই ধরনের ক্যাটাগরি রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চার মার্কেটের সমন্বয়ে গড়া বঙ্গবাজার শপিং কমপ্লেক্স এরই মধ্যে পুড়ে ছাই।

ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় আরও আছে গুলশান শপিং সেন্টার, জব্বার টাওয়ার, রহমানিয়া সুপার মার্কেট, ভূঁইয়া ম্যানশন, কারওয়ান বাজারের শাহ আলী টাওয়ার, কাপ্তান বাজার কমপ্লেক্স ভবন-২, ঢাকা ট্রেড সেন্টার, মগবাজারের বাটা বাজার, বেঙ্গল টাওয়ার, আড়ং প্লাজা, বিশাল সেন্টার শপিংমল, গুলশান ভবন মার্কেট, গুলশান-২ ডিএনসিসি কাঁচাবাজার মার্কেট, পিংক সিটি শপিং কমপ্লেক্স, বিদিশা সুপার মার্কেট, সাবেরা টাওয়ার মার্কেট, বাইশ বর সুপার মার্কেট, ল্যান্ড মার্ক শপিং সেন্টার, বনানীর গোলাম কিবরিয়া ম্যানশন, বাংলাদেশ ইউএস মৈত্রী কমপ্লেক্স, বারিধারার নতুন বাজার দোকান মালিক সমিতি মার্কেট, মহাখালীর জননী ভবন মার্কেট, শাহীন ম্যানশন, মহাখালী প্লাজা, জেবা টাওয়ার, রাজ্জাক প্লাজা শপিং কমপ্লেক্সসহ অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা ও উত্তরা এলাকার অর্ধশতাধিক মার্কেট।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- গুলশান-১ নম্বরে ডিএনসিসি মার্কেট, বনানী-বারিধারা-ডিএনসিসি বনানী সুপার মার্কেট, সাদ মুসা সিটি সেন্টার, গুলশান টাওয়ার, জব্বার টাওয়ার শপিংমল, পুলিশ প্লাজা, রহমানিয়া সুপার মার্কেট ও মেহেদী মার্কেট।

এছাড়া আছে কারওয়ান বাজার-২ নম্বর সুপার মার্কেট, কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেট, কারওয়ান বাজার কামার পট্টি, হাসিনা মার্কেট, ব্র্যাক আড়ং, প্রগতি সরণির হাজি জমির উদ্দিন সুপার মার্কেট, ফজিলা শপিং সেন্টার, ওয়ারির মুক্ত বাংলা হকার্স মার্কেট, কাপ্তান বাজার কমপ্লেক্স ভবন-১, খন্দকার ইলেকট্রনিক মার্কেট, শাহবাগের আজিজ কো-অপারেটিভ সুপার মার্কেট, নবাবপুরের আ. রহিম মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার, মজনু হার্ডওয়্যার মার্কেট, পল্টনের বায়তুল মোকাররম মার্কেট, পলওয়েল সুপার মার্কেট, সিটি ভবন, জাহাঙ্গীর শপিং কমপ্লেক্স, রমনা ভবন মার্কেট, মাওলানা ভাসানী স্টেডিয়াম মার্কেট, ভলিবল মার্কেট, গুলিস্তানের সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট, ঢাকা ট্রেড সেন্টার দক্ষিণ, ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেট-২, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম মার্কেট, ডন প্লাজা, নবাব প্লাজা, পীর ইয়ামেনী মার্কেট, বংশালের জাকের সুপার মার্কেট, রোজলীন ভিসতা শপিং কমপ্লেক্স, মিরপুরের মিরপুর টাওয়ার নার্শি মার্কেট ও ডাসুরা টাওয়ার।

প্রতিবেদনটি তৈরি করতে পাঁচ হাজার ৮৬৯টি ভবন পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিস। এতে ২ হাজার ২২৩টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে। এর মধ্যে অতিঝুঁকিপূর্ণ ৬৭১টি এবং এক হাজার ৬০৬টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে। একই সঙ্গে অগ্নিনিরাপত্তায় তিন হাজার ৯৬টি ভবনে সন্তোষজনক ফলাফল পাওয়া যায়।

সবচেয়ে বেশি ঢাকায় ৫৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং সবচেয়ে কম ময়মনসিংহে ১ দশমিক ৯৩ শতাংশ ভবন অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। চট্টগ্রামে অগ্নিঝুঁকি রয়েছে ৫৪ দশমিক ২৯ শতাংশ ভবনে। এছাড়া বরিশালে ২৯ দশমিক ৬২ শতাংশ, খুলনায় ৪১ দশমিক ৪৬ শতাংশ, রংপুরে ২৪ শতাংশ, সিলেটে ১৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ, রাজশাহীতে ১৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং ময়মনসিংহে ১ দশমিক ৯৩ শতাংশ ভবন অগ্নিঝুঁকিতে।

ঢাকায় সরকারি-বেসরকারি এক হাজার ১৬২টি ভবন পরিদর্শন করে ৬৩৫টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে ফায়ার সার্ভিস। যার মধ্যে ১৩৬টি ভবন অতিঝুঁকিপূর্ণ এবং ৪৯৯টি ঝুঁকিপূর্ণ। আর ৫২৭টি ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা সন্তোষজনক।

ফায়ার সার্ভিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পরিদর্শনের সময় ভবনের মাটির নিচের জলাধারের ধারণক্ষমতা, অবস্থানকারীর সংখ্যা, প্রবেশদ্বারের প্রশস্ততা, ধোঁয়া ও তাপ শনাক্তকরণ যন্ত্রের উপস্থিতি, মেঝের আয়তন, জরুরি নির্গমন সিঁড়ি, লিফট ইত্যাদি খতিয়ে দেখে ভবনগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ ও অতিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

এর আগে ঢাকায় বড় কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর ২০১৭ সালে ভবনগুলোর ওপর বিশেষ জরিপ চালায় ফায়ার সার্ভিস। হাসপাতাল, মার্কেট, আবাসিক হোটেল ও উঁচু ভবনগুলোর অগ্নিনিরাপত্তা নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায় ঢাকার অধিকাংশ ভবনই অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। ওই রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী ঢাকার ৯৬ শতাংশ বিপণিবিতান, ৯৮ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ৯৮ শতাংশ হাসপাতাল-ক্লিনিক অগ্নিঝুঁকিতে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ঢাকা শহরে শুধু মার্কেট নয়, বাসা-বাড়ি, মসজিদ ও হাসপাতালসহ বিভিন্ন ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। তবে ঈদের পর ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট নিয়ে কাজ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব দিয়েছেন, সালমান এফ রহমান এ নিয়ে কাজ করছেন। ঈদের পর ১৫ দিন করে ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটকে সময় বেঁধে দেওয়া হবে। ১৫ দিনের মধ্যে তাদের সমস্যা ও ঝুঁকির মাত্রা ঠিক না করলে তাদের মার্কেট বন্ধ করে দেওয়া হবে।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপরেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, আমরা বারবার নোটিশ করি। সচেতনতা বাড়াতে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ফোর্স অ্যাপ্লাইয়ের মতো কার্যক্রম আমাদের এখতিয়ারে কিংবা আইনে নেই। ফোর্স অ্যাপ্লাইয়ের জন্য সিটি করপোরেশন ও রাজউক রয়েছে।

তিনি বলেন, কোনো ভবন কিংবা মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ অথবা অতিঝুঁকিপূর্ণ হলে তাদের নোটিশ করি। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

ফায়ার সার্ভিসের মামলা করার ক্ষমতা নেই। ভবিষ্যতে মামলা করার ক্ষমতার বিষয়ে জানতে চাইলে লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমরা কখনো চাইনি মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করতে। ফায়ার সার্ভিসের কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে চাই আমরা।

এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হাবিব বলেন, এখতিয়ার, তফসিল ও ক্ষমতা অনুযায়ী সরাসরি ভোটে নির্বাচিত একমাত্র সিটি করপোরেশনের পক্ষেই অপসারণ কিংবা ভেঙে ফেলা সম্ভব। রাজউক ও ফায়ার সার্ভিস নোটিশ দিতে পারে যে ভবন অনুমোদনহীন কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ। ভাঙা অথবা বন্ধ করে দেওয়ার ক্ষমতা রাজউক কিংবা ফায়ার সার্ভিসের নেই।

তিনি বলেন, আমরা বারবার বলছি- প্রত্যেকটি ভবনের জন্য একটি নবায়নযোগ্য সনদের ব্যবস্থা করা হোক। দোতলা, দশতলা, বিপণিবিতান কিংবা কমার্শিয়াল ভবন হোক, এটি প্রত্যেকটি ভবনের বসবাসযোগ্যতা ও নিরাপদ ভবনের নিরাপত্তাজনিত সার্টিফিকেশন। প্রতি বছর এর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। পৃথিবীর যে কোনো সভ্য দেশে এই প্রক্রিয়া রয়েছে। ভবন ইন্সপেকশন ছাড়া দিনের পর দিন আপনি ভবনে বসবাস করতে পারবেন না। প্রতি বছর ভবন ইন্সপেকশন হয়। পরে যদি কোনো ঘটনা ঘটে তবে ওই ইন্সপেকটরের বিভিন্ন রকম শাস্তি হয়। অতএব উন্নত দেশেগুলোর মতো এ কাজটি আমাদের দেশে শুরু করা জরুরি।

স্থপতি ইকবাল হাবিব আরও বলেন, গুলশানের ভবনে আমরা দেখলাম আগুন লাগার পরে ভবন মালিকের স্ত্রী জানেই না ফায়ারের সিঁড়ি কোথায়। ফলে তিনি ভবন থেকে লাফ দিয়ে আহত হন। ফায়ার সার্ভিসের ক্ষেত্রে মহড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহড়া থাকলে আগুন লাগার পর একদিকে যেমন ক্ষতির সম্ভাবনা কমে আসবে অন্যদিকে প্রাণহানিও কমবে।

‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে না রেখে ফায়ার সার্ভিসকে রাখা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে, সিটি করপোরেশনকে রাখা হয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আর রাজউককে রেখেছে গণপূর্তের মধ্যে। এভাবে অসমন্বিতভাবে নগরায়ন ব্যবস্থাপনা চলতে পারে না।’