কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী নাইট কোচ বাসে যাত্রীবেশে ওঠে ডাকাতদলের সদস্যরা। প্রথমে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যাত্রীদের হাত-পা ও চোখ বেঁধে মারধর ও সম্পদ লুট করে। পরে এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও সবশেষে পথ পরিবর্তন করে টাঙ্গাইলের মধুপুরের রাস্তার পাশের বালির ঢিবিতে পরিবহনটি উল্টে দিয়ে পালিয়ে যায়। আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ওই সদস্যরা টানা তিন ঘণ্টা যাত্রীদের ওপর এমন ভয়াবহ অত্যাচার চালায় বলে জানা যায়।

মঙ্গলবার (২ আগস্ট) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে মধুপুরের রক্তিপাড়া জামে মসজিদের উল্টো পাশে মজিবরের বাড়ির সামনের বালির ঢিবিতে বাস উঠিয়ে দিয়ে ডাকাত দল পালিয়ে যায়।

কুষ্টিয়া থেকে ঈগল পরিবহনের বাসটি ৩০-৩৫ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে মঙ্গলবার ছেড়ে আসার পথে এমন ঘটনা ঘটে।

নাটোরের বড়াইগ্রামের বাসিন্দা ফল ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান হাবিব ওই বাসের নিয়মিত যাত্রী। বাসের সুপারভাইজার রাব্বি ও হেলপার দুলাল তার পূর্বপরিচিত। কিন্তু ওই বাসের চালক নতুন ছিলেন বলে জানান তিনি।

হাবিবুর রহমান জানান, বাসটি সিরাজগঞ্জের কাছাকাছি দিবারাত্রি হোটেলে নৈশভোজের জন্য যাত্রাবিরতি দেয়। পরে রাত দেড়টার দিকে আবার যাত্রা শুরু করে। পথে কাঁধে ব্যাগ বহন করা ১০-১২ জন তরুণ বাসে ওঠে। এ সময় বাসের সবাই প্রায় ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল। বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর যাত্রীবেশে থাকা ওই ডাকাতদল অস্ত্রের মুখে একে একে ঘুমন্ত যাত্রীদের বেঁধে ফেলে। প্রত্যেক যাত্রীর চোখ ও মুখ বেঁধে চালককেও জিম্মি করে বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় তারা। পাঁচ মিনিটের মধ্যে সব যাত্রীর কাছ থেকে মোবাইল, টাকা, গহনা লুট করে নেয়। তারপর এক যাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে ডাকাত দলের সদস্যরা।

তিনি আরও জানান, বাসটি বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরিয়ে তিন ঘণ্টার মতো নিয়ন্ত্রণে রাখে। শেষে পথ পরিবর্তন করে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের পাশে বালির ঢিবিতে বাস উঠিয়ে ডাকাত দল নেমে যায়।

হাবিবুর রহমান বলেন, বুধবার (৩ আগস্ট) সকালে স্থানীয় বাসিন্দারা আমাদের উদ্ধার করে।

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানার তারাগুনিয়া গ্রামের শিল্পী বেগম অসুস্থ মেয়ে জেসমিনকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। বুধবার তার কানের অপারেশন হওয়ার কথা ছিল।

তিনি জানান, তার কাছে থাকা ৩০ হাজার টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েছে ডাকাতরা। এ সময় তার স্বামী পিয়ার আলীকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে আহত করা হয়েছে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা আব্দুর রশিদ। তিনি নাটোর থেকে বাড়ি যাচ্ছিলেন অসুস্থ মাকে দেখার জন্য। বেতনের ২২ হাজার ৮০০ টাকা ডাকাতরা নিয়ে গেছে।

খবর পেয়ে বুধবার সকালে মধুপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। গাড়িতে থাকা দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারের কথা স্বীকার করেছেন মধুপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এনামুল হক।

বিকেল ৫টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ডিবি পুলিশের একটি দল তদন্ত কাজ চালাচ্ছে। পুলিশের সহযোগিতায় একদল উদ্ধারকর্মী বাসটি উদ্ধার করছেন। টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে থানায় এসে বাসযাত্রী ও সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এ সময় ময়মনসিংহ থেকে আসা ডিএনএ পরীক্ষাগারের কর্মীদের থানায় অবস্থান করতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাজহারুল অমিন বলেন, ঘটনার রহস্য উদঘাটনে তদন্ত কাজ চলছে। বাসের এক যাত্রীকে বাদী করে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

কাউকে আটক বা জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, সবদিক বিবেচনায় তদন্ত চলছে। বলার মতো সময় এখনো আসেনি।

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার পরবর্তীতে জানান, কুষ্টিয়ার এক যাত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। তদন্তের ভালো অগ্রসর হয়েছে। এ পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি। সময় হলে গণমাধ্যমকে সব জানানো হবে।