কারণে-অকারণে প্রায় নিয়তই দাম বাড়ছে নিত্যপণ্যের। কারখানায় উৎপাদিত ও আমদানি করা পণ্যের দাম যেমন বেড়েছে, একই সঙ্গে বেড়েছে দেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের দাম। ফলে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্য কিনে খেতে হচ্ছে ভোক্তাদের। কারণ হিসেবে কৃষিপণ্যের বাজারে সিন্ডিকেটের কথা এখন প্রকাশ্যেই বলছেন দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা। এরপরও কৃষিপণ্যের বাজার তদারকির দায়িত্বে থাকা নিয়ন্ত্রক সংস্থা যেন ‘ভাতঘুমে’। কৃষিপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়া হলেও অজুহাতের শেষ নেই সংস্থাটির কর্মকর্তাদের। সার্বিক পরিস্থিতি দেখলে এটাই মনে হবে যে, চলমান এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে যেন কোনো দায়-ই নেই কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের।

যদিও কৃষি বিপণন আইনে এ সংস্থাকে কৃষিপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালের এ আইনে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কার্যাবলিতে বলা হয়েছে, কৃষিপণ্যের মূল্য প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এ সংস্থার অন্যতম প্রধান কাজ। বাজার নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। গুদাম বা হিমাগারে খাদ্য মজুতের হিসাব তলব, কৃষিপণ্যের মূল্য বেঁধে দেওয়া, সিন্ডিকেটকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া সংস্থাটির কাজ। এমনকি মার্কেট চার্জ বা ভাড়া নির্ধারণ করে দিতে পারে সংস্থাটি।

এছাড়া দাম নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে থাকা বিপণন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষিপণ্যের বাজার সংযোগ সৃষ্টি ও সুষ্ঠু সরবরাহে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে বলা হয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরকে। পাশাপাশি কৃষি পণ্যের চাহিদা ও জোগান নিরূপণ, মজুত ও মূল্য পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করবে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। প্রয়োজনে অত্যাবশ্যকীয় কৃষিপণ্যের মূল্য আগাম প্রক্ষেপণ করে সে বিষয়ে তথ্য দেবে দাম সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো এবং অন্যান্য সংস্থাকে।

যদিও বাস্তবে আইনের এসব ক্ষমতা ও নির্দেশিত কাজের সবকিছুই রয়ে গেছে কাগজে-কলমে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের এ সংস্থার ভূমিকা শূন্য। অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যন্ত থাকা কৃষি বিপণন কর্মকর্তাদের কেউ-ই যান না বাজারে। যেখানে বাজারে নিত্যপণ্যের ক্রমাগত দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের নাকানিচুবানি অবস্থা, সেখানে তদারকির দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা দিন কাটাচ্ছেন শুয়েবসে।

কাজের মধ্যে শুধু একটি কাজই নিয়মিত করে সংস্থাটি। নিয়মিত ঢাকা শহরের দৈনিক পণ্যমূল্যের একটি তালিকা করে তা পাঠিয়ে দেয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে। অবশ্য এই ‘একটিমাত্র’ কাজেও রয়েছে বড় গলদ। প্রতিদিন দামের যে তালিকা দেওয়া হয়, তার থেকে বাজারে প্রকৃত দামে থাকে বড় ফারাক।

অপর্যাপ্ত বাজার তদারকি
পরিমাণের সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও ঢাকা জেলায় পাঁচ শতাধিক বাজার রয়েছে, যেখানে কৃষিপণ্য কেনাবেচা হয়। এর সঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় পাড়া-মহল্লার অলিগলির অস্থায়ী বাজার হিসাবে ধরলে সংখ্যা হবে হাজারের কাছাকাছি। এত বাজারের মধ্যে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর গত বছর মাত্র ৫৪টি বাজারে অভিযান পরিচালনা করেছে। চলতি বছরের গত নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ঢাকা জেলার মাত্র ২৭টি বাজারে অভিযান চালিয়েছে সংস্থাটি।

তদারকির জায়গা এত হলেও সংস্থাটির কার্যক্রম খুবই নগণ্য। বাজার নিয়ন্ত্রণে এত কম তদারকি যথেষ্ট কি না- এমন প্রশ্ন করা হয় ঢাকা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে। মিজানুর বলেন, ‘আমাদের আইনে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত ছাড়াও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরসহ অন্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করি। টোটাল হিসাব (বছরে কতগুলো অভিযান) থাকে না। শুধু আমাদের আইনে কতগুলো হয়েছে, সেই হিসাব রাখা হয়।’

তিনি বলেন, ‘মাসে কমপক্ষে তিন থেকে পাঁচটা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করাই লাগে, এভারেজ। আমাদের জায়গাটা অনেক বড়, কিন্তু পাওয়ার (ক্ষমতা) নেই। কারণ আমরা ম্যাজিস্ট্রেটের মতো জরিমানা করতে পারি না। সে ক্ষমতা যেদিন পাব, তখন নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবো।’

এ চিত্র শুধু ঢাকার নয়, দেশের কোথাও পর্যাপ্ত তদারকির কোনো নজির নেই কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের। ঢাকার পরে দেশের সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ কৃষি বাজারগুলো চট্টগ্রামে। এ জেলার মেট্রোপলিটন এলাকা থেকে শুরু করে পুরো জেলা মিলিয়ে বাজারের সংখ্যা ঢাকার থেকে খুব কম-বেশি হবে না। কিন্তু বছরে চট্টগ্রাম জেলায় কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত হয় মাত্র ২০ থেকে ২৫টি।

চট্টগ্রাম জেলার বাজার তদারকির দায়িত্বে থাকা সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মোর্শেদ কাদের জাগো নিউজকে বলেন, ‘অনেক সময় আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে চেয়ে জেলা অফিসে ম্যাজিস্ট্রেট চাই। কখনো দেয়, তবে বেশিরভাগ সময় দেয় না। আমরাতো বাজারে জরিমানা করতে পারি না, শুধু শুধু ঘুরে কী লাভ! আমাদের পাওয়ার (জরিমানা করার ক্ষমতা) নেই।’

এসব বিষয়ে সঙ্গে কথা হয় ঢাকা ও চট্টগ্রামের একাধিক বাজারের ব্যবসায়ী ও তাদের প্রতিনিধিদের। তারা বলেন, বাজারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) যেভাবে তদারকি করে, তেমনটা দেখা যায় না কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের। বাজারে সাধারণ তদারকি করতেও দেখা যায় না এ সংস্থার কর্মকর্তাদের।

ম্যাজিস্ট্রেট না পাওয়ার অজুহাত
ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা প্রয়োজনে ম্যাজিস্ট্রেট না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন  কাছে। তাদের এ অভিযোগের বিষয়ে কথা হয় ঢাকা জেলায় বিভিন্ন তদারকি কাজে ম্যাজিস্ট্রেট বণ্টনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম হেদায়েতুল ইসলামের সঙ্গে।  তিনি বলেন, ‘এটা কোথায় চেয়েছে জানি না। গত সাত মাসে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জন্য কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে কোনো চাহিদা পাইনি। গত এক মাসের তথ্য আমার কাছে সঠিকভাবে আছে। সেখানে কোনো চাহিদা (ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে আবেদন) নেই।’

ম্যাজিস্ট্রেট বণ্টনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বক্তব্যের পর ফের যোগাযোগ করা হয় ঢাকা জেলার কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের সঙ্গে। ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে সংস্থাটির কোনো চাহিদা ছিল না- বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে  মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়েছে। পাইনি।’ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যন্ত থাকা কৃষি বিপণন কর্মকর্তাদের কেউ-ই যান না বাজারে। যেখানে বাজারে নিত্যপণ্যের ক্রমাগত দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের নাকানিচুবানি অবস্থা, সেখানে তদারকির দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা দিন কাটাচ্ছেন শুয়েবসে।

গত দুই-একমাসে কোনো চাহিদা দেওয়া হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন পরীক্ষার সময়, ম্যাজিস্ট্রেট পাওয়া যাবে না- এমনটা ভেবে দেওয়া হয়নি।’

তবে শুধু আঞ্চলিক কর্মকর্তারাই ‘ম্যাজিস্ট্রে না পাওয়ার অজুহাত’দেখান এমন নয়। সংস্থাটির সদরদপ্তর থেকেও এমন অজুহাত দেখানো হয় হরহামেশাই। মন্ত্রণালয় থেকে বাজার তদারকির তাগাদা দেওয়া হলেও দেখানো হয় এমন অজুহাত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাজিস্ট্রেট নেই বলে তারা বাজারে যেতে চায় না। থাকলে ভোক্তা অধিদপ্তরের মতো জরিমানা করে প্রভাব ফেলতে পারতো। আমরা মাঠে নামাতে চাইলেও কার্যকর কিছু করতে পারি না ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার নেই বলে।

কৃষক-ভোক্তা কেউ সুবিধা পাচ্ছে না
একদিকে দেশের কৃষক উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত। অপরদিকে উচ্চমূল্যে কৃষিপণ্য ক্রয় করছেন ভোক্তারা। এমন অবস্থার পেছনে বড় কারণ সঠিক বিপণন ব্যবস্থা না থাকা। অথচ কৃষিপণ্যের সঠিক বিপণন নিশ্চিত করা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের প্রধান দায়িত্ব। দেশের কোন অঞ্চলে কোন ফসল সংরক্ষণ করা হয়েছে তার কেন্দ্রীয় ডেটাবেজ রাখার দায়িত্বও এই প্রতিষ্ঠানের। কৃষকের ন্যায্যমূল্য এবং ভোক্তার স্বার্থ নিশ্চিত করতে সারাদেশে থাকা বিপণন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষিপণ্যের বাজার সংযোগ সৃষ্টি ও সুষ্ঠু সরবরাহে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের দায়িত্ব।

এছাড়া ই-এগ্রিকালচার, ই-বিপণন এবং ই-এগ্রিকালচারাল মার্কেটিং ব্যবস্থা প্রবর্তন করে বাজারব্যবস্থা আধুনিকায়নের কথা বলা হয়েছে ২০২২ সালে প্রণয়ন করা বিপণন নীতিমালায়। কৃষিকে লাভজনক পেশায় রূপ দেওয়া, এ খাতে উদ্যোক্তা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ভোক্তা স্বার্থ নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে তাতে। তবে এসবের কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে উপকৃত হতে পারছেন না কৃষক-ভোক্তা কেউই।

এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মাসুদ করিমের সঙ্গে। তবে তিনি এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেননি। দুদিন অফিসে গেলেও দেখা করেননি। পরে মোবাইল ফোনে চেষ্টা করেও তার মন্তব্য জানা যায়নি।

তবে অধিদপ্তর থেকে সিনিয়র বিপণন কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মান্নানকে গণমাধ্যমের জন্য নিযুক্ত মুখপাত্র বলে জানানো হয়। সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে আগের থেকে অনেক বেশি কাজ হচ্ছে এখন।’ শুধু একটি কাজই নিয়মিত করে সংস্থাটি। নিয়মিত ঢাকা শহরের দৈনিক পণ্যমূল্যের একটি তালিকা করে তা পাঠিয়ে দেয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে। অবশ্য এই ‘একটিমাত্র’ কাজেও রয়েছে বড় গলদ। প্রতিদিন দামের যে তালিকা দেওয়া হয়, তার থেকে বাজারে প্রকৃত দরে থাকে বড় ফাঁরাক।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজন। ফসল সংগ্রহ পদ্ধতি, সটিং, গ্রেডিং, সংরক্ষণ, প্যাকেজিং, পরিবহনে গুণগত মান বজায় রাখার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা সংস্থাটির। এছাড়া বিপণনের ওপর স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ডিপ্লোমা, মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রির ব্যবস্থা করা, বিভিন্ন ইনস্টিটিউট ও ইন্ডাস্ট্রিতে শর্ট কোর্সে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া, কৃষি বিপণনের সঙ্গে সম্পৃক্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক বাড়ানো প্রচেষ্টা করারও কথা। ই-এগ্রিকালচার মার্কেটিং ও ই-শপিং মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনায় সহায়তা দেওয়াসহ সার ও বীজ, নার্সারি ব্যবসা, ফুল ব্যবসা, মৎস্য চাষ, কমিউনিটি/সমিতি/দলভিত্তিক ব্যবসায় যুবকদের উৎসাহিত করা এ সংস্থার কাজ।

তালিকাভুক্ত এমন কোনো উদ্যোক্তা রয়েছেন কি না সে তথ্য জানতে চাওয়া হয় সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার কাছে। তিনি বলেন, এসব কাজ এখনো হয়নি। শুরু হচ্ছে মাত্র। উদ্যোক্তা তৈরির চেষ্টা চলছে।

মাঝেমধ্যে দাম বেঁধে দেওয়া-বাজারদর জানানো কাজ
কৃষিপণ্য উৎপাদন বাড়াতে কাজ করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান। কৃষিপণ্য বিপণনের দায়িত্ব কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের। কিন্তু শুরু থেকেই দায়সারা কাজে দায় সারছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। সংস্থাটির দৃশ্যমান কাজের মধ্যে রয়েছে প্রতি বছর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার আগে রাজধানীর গুটিকয়েক ব্যবসায়ীকে ডেকে কথিত শুনানির মাধ্যমে পণ্যমূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া। এছাড়া প্রতিদিন বিকেলে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে পণ্যের দামের একটি তালিকা সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছে পাঠিয়ে দায়িত্ব শেষ করছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্তা ব্যক্তিরা।

এরপরও প্রতিদিনের দামের তালিকা অকার্যকর। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা টিসিবির সঙ্গেও মেলে না দরদাম। বাজারের প্রকৃত দামের সঙ্গে বিপণন অধিদপ্তরের দেওয়া দামের ফাঁরাক আরও বেশি। এ অবস্থায় বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন অকার্যকর তালিকা প্রতিদিন প্রকাশ করে সরকারি সংস্থাগুলো জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে। আবার এসব ভুলভাল দামের তথ্য নিয়ে সরকারের অন্য সংস্থাগুলো যে প্রতিবেদন বা পর্যবেক্ষণ তৈরি করছে, সেটাও ভুল হচ্ছে। মাঝে মধ্যে আরেকটি কাজ করে সংস্থাটি। কখনো কখনো নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের দাম বেঁধে দেয় তারা। তবে দাম সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না বলে তারা সেটা বাজারেও কার্যকর করতে পারে না। ফলে বেঁধে দেওয়া দাম থেকে যায় কাগজে কলমে।

তবে, এই দুই কাজের বাইরে মাঝেমধ্যে আরেকটি কাজ করে সংস্থাটি। কখনো কখনো নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের দাম বেঁধে দেয় তারা। সে সময় তারা দাবি করে, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার পর্যালোচনা, সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী এবং সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে পণ্যের চাহিদা নিরূপণ করা হয়। ওই চাহিদার বিপরীতে দেশের উৎপাদন, আমদানির পরিমাণ ও আমদানির মূল্য বিবেচনা করে নির্ধারণ করা হয় যৌক্তিক মূল্য। যদিও দাম বেঁধে দেওয়ার পরপরই শুরু হয় ব্যবসায়ীদের নানা অভিযোগ। দাম সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না বলে তারা সেটা বাজারেও কার্যকর করতে পারে না। ফলে বেঁধে দেওয়া দাম থেকে যায় সেই কাগজে কলমে।

তথ্য বলছে, ২০২১ সালে ৬টি ও ২০২২ সালে ৪০টি পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছিল কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। কিন্তু ওই সময় একটি পণ্যের দামও কার্যকর হয়নি। সবশেষ চলতি বছর আলুর দাম বেঁধে দেয় সংস্থাটি। কিন্তু বাজারে সে দামও কার্যকর হয়নি।

সবকিছু মিলিয়ে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কৃষক ও ভোক্তাদের অধিকার রক্ষায় সম্পূর্ণ অকার্যকর বলে মন্তব্য করেছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান।  তিনি বলেন, ‘পণ্যের দাম কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার দৃষ্টান্ত কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের নেই। প্রতিষ্ঠানটিতে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।’