আলু উৎপাদনে শীর্ষ জেলা মুন্সিগঞ্জে বীজ রোপণের উৎসবের মধ্যেই ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে হানা দিলো বৃষ্টি। গত তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে জেলার হাজার হাজার হেক্টর আবাদি জমি। এতে রোপণকৃত আলুর বীজ পচে যাওয়াসহ ব্যাপক ক্ষতির মুখে এখন আলুচাষিরা। গতবছরের লোকসান পুষিয়ে এবার লাভের আশায় নতুন করে আলু আবাদকারী কৃষকদের এখন মাথায় হাত।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবছর জেলার ৬ উপজেলার ৩৭ হাজার ৯শ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এরমধ্যে ১৭ হাজারের অধিক হেক্টর জমিতে আলু বীজ রোপণ করেছিলেন কৃষকরা। রোপণকৃত এসব জমির অধিকাংশই বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।

সরেজমিনে সোমবার বিকালে টঙ্গীবাড়ী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আলু আবাদের জন্য কোথাও কোথাও প্রস্তুত করা হয়েছে জমি, কোথায় সদ্য রোপণ করা হয়েছে বীজ, আবার কোনো কোনো জমিতে গজিয়েছে চারা। তবে টানা বৃষ্টিতে সমস্ত জমিতেই জমেছে পানি। নিচু এলাকার জমিগুলো আবার একবারেই পানিতে তলিয়ে গেছে। কয়েকটি স্থানে সেচ দিয়ে পানি নিরসনের চেষ্টা চালাচ্ছেন কৃষকরা। অব্যাহত বৃষ্টিতে পানিতে পতিত জমির পরিমাণ বেড়েই চলেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, বৃষ্টির পানিতে একদিকে রোপণকৃত বীজ পচে যাবে অন্যদিকে অনাবাদী জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের পর বীজ রোপণ কবে করা যাবে তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। সময়মতো বীজ রোপণ করা না গেলো কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত আলু উৎপাদন সম্ভব নয়।

সদর উপজেলার মাসুম শেখ নামের এক কৃষক জানান, ২ কানি জমিতে আলু রোপণ করে উঠেছি মাত্র, এরমধ্যে বৃষ্টি। কানি পতি ১ লাখ ৫ হাজার টাকা খরচ হইছে। বীজ পচলে আমার ২ লাখ ১০ হাজার টাকা শেষ। কোদাল দিয়ে নালা করে দিছি পানি নামার জন্য। পানি নামে আবার বৃষ্টি পড়ে। নতুন করে আলু লাগাইতে আবার ২ লাখ টাকা লাগবে। ঘরে এক টাকাও নেই।

টঙ্গীবাড়ী উপজেলার কৃষক জয়নাল জানান, গতবছর আলু চাষ করে অনেক লোকসান হয়েছে। এবার ঋণ করে আলু বীজগুলো লাগিয়ছিলাম। বৃষ্টির পানিতে এখন বীজ আলুগুলোও পচে যাবে। আবার যে আলু বীজ কিনে লাগাবো সে সামর্থ্যও আমার নেই। একবারে পথে বসে গেলাম।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খুরশীদ আলম  জানান, এটি একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়। প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি জমিতে আলু রোপণ হয়েছে। যদি এভাবে বৃষ্টি চলতে থাকে তবে আলুতে ক্ষয়ক্ষতি বাড়বে। তবে আজ-কালের মধ্যে বৃষ্টি থেমে গেলে এবং জমি থেকে পানি নিরসন করা গেলে ক্ষতি কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব।

তিনি বলেন, যে সমস্ত জমিতে ইতোমধ্যে আলু গাছ গজিয়েছে বৃষ্টি শেষে সেই সমস্ত জমিতে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। আর পানি জমে থাকা জমি গুলোতে ড্রেনেজ বা নালা করে পানি নিরসনের চেষ্টা করতে হবে। অনাবাদী জমিতে বৃষ্টি থামার পর আবারো জমি প্রস্তুত করে তারপর আলু রোপণ করতে হবে। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে আর আলুর ফলন ভালো হয় তাহলে লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবে কৃষকরা।