আমের রাজধানী সাপাহারে কিছুদিন আগেও দাম কম ছিল। লোকসানের আশঙ্কায় আম চাষিদের কপালে পড়েছিল দুশ্চিন্তার ভাঁজ। তবে ঈদের পর থেকে আম চাষিরা ভালো দাম পেয়ে যেমন লাভবান হচ্ছেন; তেমনি চোখে-মুখে খুশির ঝিলিক।

আম চাষিরা বলছেন- করোনাভাইরাসের কারণে গত বছর থেকে তাদের ব্যবসার ধ্বস নামতে শুরু করেছে। প্রায়ই লকডাউন থাকায় আমের বাজারে ধ্বস নেমেছে। আমের মৌসুম শেষ সময় এসে দাম বেড়েছে।

জানা গেছে, জেলার ঠা-ঠা বরেন্দ্র এলাকা হিসেবে পরিচিত সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর ও পত্নীতলা উপজেলার আংশিক এলাকা। পানি স্বল্পতার কারণে বছরের একটি মাত্র ফসল আমনের ওপর নির্ভর করতে হতো।

কিন্তু গত কয়েক বছর থেকে ধানের আবাদ ছেড়ে আম চাষে ঝুঁকেছেন চাষিরা। দেশে যত ধরনের আম উৎপাদিত হয় এ অঞ্চলটিতে তার প্রায় সব ধরন ও আকৃতি-প্রকৃতির আম উৎপাদিত হয়।

গত এক যুগ আগে যে জমিতে ধান চাষ হতো। সেখানে এখন আম চাষ করা হচ্ছে। লাভজনক হওয়ায় এ অঞ্চলের চাষিরা আম চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। এ জেলাটি এখন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাকেও ছাড়িয়ে গেছে। দেশের মধ্যে নওগাঁ জেলা আমের জন্য বিখ্যাত হিসেবে শীর্ষ স্থান দখল করে নিয়েছে।

এখানকার আম সুস্বাদু ও সুমিষ্ট। যেখানে আম্রপালি, গোপালভোগ, ফজলি, খিরসাপাত, ল্যাংড়া, হিমসাগর, হাঁড়িভাঙা, আশ্বিনা, ঝিনুক, বারী-৪ ও গুটি জাতের আম উৎপাদিত হচ্ছে। এ জেলার আম ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে।

জেলার সাপাহার ও পোরশা আমের জন্য বিখ্যাত। কিছুদিন আগে গোপালভোগ ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর খিরসাপাতা প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়।

এছাড়া গুটি আম ৮০০-৯০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে চলছে সুস্বাদু আম্রপালির সময়। কিছুদিন আগেও আম্রপালি সর্বোচ্চ ২ হাজার ৫০০ টাকা মণ ও বারি-৪ জাতের আম দেড় হাজার থেকে ২ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু ঈদের পর দ্বিগুণ দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

বতর্মানে সাপাহার উপজেলা সদরে ওয়ালটনের মোড়ে আম্রপালি প্রকারভেদে ৩ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা মণ, বারি-৪ জাতের আম ৩ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আশ্বিনা ৮০০ টাকা থেকে হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। ফজলি আমের পরিমাণ বাজারে কম থাকলেও ২ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।

আমের ভরা মৌসুমে এক সাথে আম পাকায় বাজারে উঠতে শুরু করেছিল। এ কারণে বাজারে আমের দাম তুলনামূলক কম ছিল। এর সাথে যোগ হয়েছে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে লকডাউন। জেলার বাইরের ক্রেতারা তেমন না আসায় আমের দাম কমে যায়। এতে করে ক্রেতাদের লোকসান গুনতে হয়। বাজারে আমের পরিমাণ কমে আসায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে খুশি আম চাষিরা।

সাপাহার উপজেলার হোলাকান্দর গ্রামের আম চাষি আমানউল্লাহ বলেন, গত এক বছর আগে দুইজন মিলে ৪০ বিঘা পরিমাণ আম্রপালি বাগান ১ কোটি ২০ লাখ টাকা দিয়ে ইজারা নিয়েছেন।

এ বছর আশা করেছিলাম প্রায় ৫০ লাখ টাকার মতো আম বিক্রি করতে পারবো। সেখানে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ টাকার মতো বিক্রি হয়েছে। আর সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকার মতো বিক্রি হবে।

ঈদের আগে আমের দাম কম ছিল। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের কারণেও ব্যবসায়ীরা আসতে না পারায় আমাদের সমস্যা হয়েছে। বর্তমানে বাজারে আমের পরিমাণ কম হওয়ায় দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ দাম আগে পাওয়া গেলে ভালো হতো।

শিমুলডাঙ্গা গ্রামের আমচাষি সেলিম রেজা বলেন, ১২ বিঘা জমিতে আম্রপালি জাতের বাগান করেছেন। এসব জমি ১২ বছরের জন্য ইজারা নিয়েছেন। যেখানে জমি ইজারা নিতে বিঘাপ্রতি ৫-৮ হাজার টাকা খরচ পড়েছে। বাগান থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ টাকার মতো আম বিক্রি করেছেন।

প্রথমদিকে দাম কম থাকলেও ঈদের পর ভালো দাম পাচ্ছেন। রোববার ৪ হাজার টাকা মণ দরে ১০০ মণ আম্রপালি বিক্রি করেছেন। এমন দাম পেয়ে তিনি খুশি। তবে এ দাম আগে পাওয়া গেলে আরো লাভবান হতে পারতেন তিনিসহ সব আমচাষি।

আড়তদার রুবেল হোসেন বলেন, আমের মৌসুমে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ৩০০-৪০০ মণ পর্যন্ত আম কিনেছেন। বর্তমানে এখন ১০০-১৫০ মণ আম কেনা হচ্ছে। আমের চাহিদা বেড়েছে। সে তুলনায় আম পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া গেলেও দাম বেশি। যারা গাছে আম রেখেছেন তারা এখন ভালো দাম পাচ্ছে।

সাপাহারের আম আড়ত ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জুয়েল হোসেন বলেন, ঈদের পর আমচাষিরা ভালো দাম পেয়ে খুশি।

দিন দিন আমের পরিমাণ কমে আসছে। এ কারণে দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারপরও প্রতিদিন প্রায় এক থেকে দেড়  হাজার মণ বিক্রি হচ্ছে। আগামী প্রায় একমাস আম বাজারে থাকবে। আমের পরিমাণ যত কমে আসবে দামও তত বাড়বে।

নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্রমতে চলতি বছরে জেলায় ২৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আমের বাগান আছে। যেখানে হেক্টর প্রতি গড়ে ১২ মেট্রিকটন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।