চলনবিলের ক্ষিরার হাট জমে উঠেছে। এখন দিঘরিয়া ও চরবন্ধনগাছা ক্ষিরার আড়ৎগুলোতে পাইকার-বিক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। সকাল থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেচাকেনা হচ্ছে শত শত টন ক্ষিরা।

চলনবিলের তাড়াশ ও উল্লাপাড়ার উৎপাদিত ক্ষিরা স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাকে চট্টগ্রাম, বগুড়া, পাবনা, ঢাকা ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এখানকার ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, চলনবিলের উত্তর এলাকার তাড়াশ, নাটোরের সিংড়া ও বগুড়ার শেরপুরের ১টি ইউনিয়নের কৃষকদের উৎপাদিত ক্ষিরা বেচাকেনার জন্য দিঘরিয়া আড়ৎটি প্রায় ২০ বছর আগে শুরু হয়েছে। সিরাজগঞ্জ, নাটোর ও বগুড়া জেলার চাষিরা এখানে ক্ষিরা বিক্রি করতে আসেন।

এখানে প্রায় ৪০ থেকে ৫০টি ট্রাক প্রস্তুত থাকে। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে শুরু হয় বিক্রি। মহাজনরা ক্ষিরা কিনে ট্রাকে লোড দিতে থাকেন। এ কাজে নিয়োজিত রয়েছে প্রায় ৪০ থেকে ৫০জন শ্রমিক। কেনাবেচার মধ্যদিয়ে ১ থেকে ২ ঘণ্টার মধ্যে ভরে যায় মহাজনদের আড়ৎ।

Sirajganj--Khara--(3).jpg

দুটি হাটে প্রচুর ক্ষিরা আমদানি হওয়ায় ওজনের পরিবর্তে বস্তা চুক্তিতে বিক্রি করা হয়। প্রকারভেদে প্রতি ছোট বস্তা ক্ষিরা বিক্রি হয় ২৬০ থেকে ৩২০ টাকা এবং প্রতি বড় বস্তা বিক্রি হয় ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা পর্যন্ত। এ হাটটি ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে চলে এপ্রিল পর্যন্ত।

কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে চলনবিলের অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, রায়গঞ্জ, নাটোরের সিংড়া, গুরুদাসপুর, পাবনার চাটমোহর ও ভাঙ্গুড়া উপজেলার মাঠে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ক্ষিরা চাষ করা হয়েছে।

এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় ও বীজ সার এবং কীটনাশক সুলভমূল্যে পাওয়ায় ক্ষিরার বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিবিঘা জমিতে ক্ষিরা চাষ করতে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা ব্যয় হয়। ১ বিঘা থেকে উৎপাদিত ক্ষিরা বিক্রি হয় ২৫-৩০ হাজার টাকা।

এ আবাদে পোকা-মাকড়ের ঝামেলা কম, তাই ক্ষিরা চাষে কৃষকের আগ্রহ বেশি। তাড়াশ উপজেলার দিঘুরিয়া, রানীর হাট ও কোহিতসহ ১০টি গ্রামে প্রতিবছর গড়ে উঠে ক্ষিরা বিক্রির মৌসুমি হাট। প্রতি মণ ক্ষিরা ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হয়।

Sirajganj--Khara--(3).jpg

উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের দিঘরীয়া গ্রামের কৃষক আহমেদ আলী জানান, এ বছর ১ বিঘা জমিতে ক্ষিরার আবাদ করতে খরচ হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। খরচ বাদে আবাদে ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।

ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তাড়াশ অঞ্চলের উৎপাদিত ক্ষিরার মান ভালো, দামও কম। ক্ষিরার মান ভালো হওয়ায় এর কদর সারাদেশে রয়েছে।’

ঢাকা, পাবনা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, ঢাকার কারওয়ান বাজার, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষিরা রপ্তানি হচ্ছে।

নজরুল ইসলাম, জালাল উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, এলাকায় ক্ষিরা চাষের জন্য জমি লিজ পাওয়াই যায় না। কারণ ক্ষিরা চাষে কৃষক লাভ পাওয়া তারা ক্ষিরা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। আর যাদের নিজস্ব জমি আছে তারা আরও বেশি লাভবান হচ্ছেন।

তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ লুৎফুন্নাহার লুনা জানান, চলনবিলে ক্ষিরা চাষে কৃষকরা ব্যাপক সফলতা পেয়েছে। কৃষকেরা ক্ষিরা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। কৃষকেরা বিঘা প্রতি খরচ বাদে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা করে লাভ করছেন। এভাবে আগামীতে কৃষকেরা ক্ষিরা চাষে আরো উদ্দ্যোগী হবেন।