আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কথায় বিএনপি নেতারা কৌতুকবোধ করেন বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেছেন, ‘প্রতিনিয়ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কথা বলেন। তার কথায় আমরা সবাই একটু বিনোদন পাই, কৌতুকবোধ করি। তার কথা বলার ভঙ্গি খুব সুন্দর।’

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ বিতরণ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, ‘তিনি (ওবায়দুল কাদের) গতকালও বিএনপির আন্দোলন সম্পর্কে কটাক্ষ করেছেন। কিন্তু প্রত্যেকদিন বিএনপিকে নিয়েই কথা বলেন। অন্যদিকে বলেন বিএনপি নেই। তাহলে প্রতিদিন বিএনপি সম্পর্কে কথা কেন বলেন? কারণ আপনারা জানেন, বিএনপি আছে, খুব ভালো করে আছে এবং আপনাদের উপর চড়াও হয়ে বসেছেন বলেই প্রতিদিন বিএনপি নিয়ে কথা বলেন।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বসে থাকার ভঙ্গি খুব সুন্দর। তিনি যে আসনে বসে কথা বলেন সেটাও খুব সুন্দর। তিনি দেখতে অত্যন্ত সুদর্শন মানুষ। চমৎকার কোটি পরেন, তার উপর নোকা মার্কার পিন পরেন। সেটা কীসের আমরা জানি না। পত্র-পত্রিকায় বের হয়েছে তার ঘড়িগুলো নাকি এক একটি ৩৬ লাখ, ৫২ লাখ, ১ কোটি— এরকম দামের। আসলে দাম কত আমরা সেটা জানি না।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনাদের (আওয়ামী লীগ) তো লজ্জা হওয়া উচিৎ। বিশেষ করে সাধারণ সম্পাদক সাহেবের (ওবায়দুল কাদের)। আপনার এলাকা বসুরহাট, আপনার এলাকা নোয়াখালী সেখানে কী হচ্ছে? আজকে পত্রিকায় আসছে, সেখানে একজন সাংবাদিকসহ যে দুজন খুন হয়েছেন তাদের মধ্যে মৃত শ্রমিকের ভাই মামলা করেত গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তার মামলা নেয়নি। কাদের মির্জার বিপক্ষে মামলা নেয়নি। কারণ তিনিতো শুধু কাদের মির্জা না, তিনি বাংলাদেশের ২য় শক্তিশালী ক্ষমতাধর মানুষ ওবায়দুল কাদের সাহেবের ভাই। কোথায় বিচার, কোথায় ন্যায়ের শ্বাসন? তাই আমি বলেছি, বিএনপির সমালোচনা করার আগে আপনারা আপনাদের নিজের ঘর সামলান। প্রতিদিন যে মারামারি-লড়ালড়ি তা সামলান।’

তিনি আরও বলেন, ‘লুটের বণ্টন নিয়ে, বাংলাদেশকে যে লুট করেছে সেই লুটের বণ্টন নিয়ে মারামারি করে। এদের লক্ষ্য এখন একটাই। সেটা হচ্ছে, বাংলাদেশকে লুট করে নেয়া। আমরা ছোটবেলায় মায়ের মুখে শুনতাম, খোকা ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো, বর্গী এলো দেশে। সেই বর্গীদের ভূমিকায় রয়েছে তারা। বর্গীরা যেমন বাংলাদেশের কৃষকদের সম্পদ লুট করে নিয়ে যেতো, ঠিক সেইভাবে আজকে তারা সমগ্র বাংলাদেশকে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। তারা বিদেশে বেগমপাড়া, ইংল্যান্ড, অ্যামেরিকায় বাড়িঘর তৈরি করছে।’

ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কখনোই জনগণের বন্ধু ছিল না। আমার দুঃখ হয়, যে আওয়ামী লীগ পাকিস্তান আমলে দেখেছি আমাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গণতন্ত্রের সংগ্রাম করেছেন। আজকে আমাদের এখানে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাহেব উপস্থিত আছেন। তিনি ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন, ভিপি ছিলেন। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের যে ভূমিকা আজকে তিনিও সেখানে থাকতে পারেননি। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের চরিত্র সম্পূর্ণ বদলে গেছে। আজ তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। গণতন্ত্র মানলে তো মানুষের কথা বলার সুযোগ দিতে হবে, গণতন্ত্র মানলেতো সবাইকে ভিন্নমত পোষণের স্বাধীনতা দিতে হবে, গণতন্ত্র মানলে তো ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এগুলোর মধ্যে তারা নেই। তারাই সব, তারাই মালিক, আমরা সবাই প্রজা। তারা প্রভু আর আমরা সবাই দাস এভাবেই তারা গোটা বাংলাদেশকে দেখেন।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ড্যাবের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফারহাদ হালিম ডোনার সভাপতিত্বে ও ড্যাবর সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, চেয়ারপারসের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, যুবদল সভাপতি সাইফুল ইসলাম নীরব, ড্যাবের মহাসচিব অধ্যাপক আব্দুস সালাম, ট্রেজারার অধ্যাপক শাকিল প্রমুখ।