চট্টগ্রাম-১। মিরসরাই উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ২৭৮ নম্বর আসন। হার-জিতে আওয়ামী লীগ-বিএনপির অবস্থান তুলনামূলক কাছাকাছি। তবে নীরব ভোট আছে জামায়াতের। ব্যবসা-বাণিজ্যে এগিয়ে থাকা এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে। সামনেও হাতছাড়া করতে চায় না দলটি। তৃণমূলে দলটির একাধিক প্রার্থী কাজ করছেন। শোনা যাচ্ছে, এবার আসনটির মনোনয়নে আসতে পারে নতুন মুখ।

১৯৭৩ এর পর থেকে এ আসনে নৌকার বৈঠা বয়ে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গেও তিনি ভোটের লড়াই করেছেন। এলাকায় বেশি জনপ্রিয় তিনি। তবে বয়সের ভারে ন্যুব্জ এই নেতা এবার নির্বাচন করতে আগ্রহী নন- শোনা যাচ্ছে এমনটি। এরই মধ্যে তার পরিবর্তে ছেলে মাহবুবুর রহমান রুহেল এলাকায় সক্রিয়।

এর বাইরেও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি গিয়াস উদ্দিন এ আসনে মনোনয়ন চান। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক এ সভাপতি দীর্ঘদিন এলাকা ঘিরে কাজ করছেন। তিনি মিরসরাই উপজেলা পরিষদের ২০০৮-২০১৪ মেয়াদে চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

এছাড়া যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা নিয়াজ মোরশেদ এলিটও এলাকায় সক্রিয়। ব্লাড ডোনেশন ক্লাবসহ নানা সামাজিক কাজ করে এরই মধ্যে অবস্থান তৈরি করেছেন এই তরুণ। তিনি একাধারে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং জুনিয়র চেম্বার বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি।

মনোনয়নের বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমি মাঠের কর্মী, মানুষের সঙ্গে ছিলাম, মানুষের সঙ্গে থাকতে চাই। মনোনয়নের ব্যাপারে নেত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন, তিনিই ভালো বুঝবেন। নেত্রীর সিদ্ধান্তই আমার জন্য চূড়ান্ত।

তিনি বলেন, আমি কতদূর করতে পেরেছি জানি না। তবে আমি যতটুকু করেছি, তার চেয়ে বেশি মিরসরাইয়ের আপামর জনগণ আমার জন্য পাগল হয়েছে।

কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য নিয়াজ মোর্শেদ এলিট বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরেই এলাকায় মানুষের জন্য কাজ করছি। নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডে এলাকায় এরই মধ্যে সুখ্যাতি পেয়েছি। কাজের মাধ্যমে মানুষের পাশে থাকতে চাই, এতটুকুই চাওয়া।

মনোনয়নের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করি। কেন্দ্রীয় যুবলীগে আছি। এর আগে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপ-কমিটিতে ছিলাম। যখন যে দায়িত্ব কাঁধে এসেছে, আন্তরিকভাবে পালন করেছি এবং নিজের কাজের একটা ছাপ রেখে এসেছি। ভবিষ্যতেও নেত্রী যে কোনো দায়িত্ব দিলে সেটা সর্বোচ্চ ত্যাগ ও শ্রম দিয়ে পালন করবো- এতটুকু বলতে পারি। মনোনয়নের ব্যাপারটি একান্তই নেত্রীর সিদ্ধান্ত।

এ বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের অনুসারীখ্যাত মিরসরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের এমপি সাহেব নির্বাচন করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন, কিন্তু নেত্রী তো তাকে চাচ্ছেন। এখন কী হবে দেখা যাক।

নিজে জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের তৃণমূল সংগঠিত। ওয়ার্ড লেভেলের কমিটিও পূর্ণাঙ্গ করা আছে। মানুষের সঙ্গে আছি আমরা। আমাদের এমপি সাহেব সাতবারের নির্বাচিত। ওনার সঙ্গেও মানুষের সম্পর্ক সুগভীর। ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও আমরা নৌকার জয় নিশ্চিত করতে পারবো।

মিরসরাই উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ২৭৮ নম্বর আসন চট্টগ্রাম-১। এখানে মোট ভোটার ৩ লাখ ১৪ হাজার ৯৮৫। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৯ হাজার ৫১৯ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪৬৬।

১০ম সংসদ নির্বাচনে (২০১৪) আসনটিতে আওয়ামী লীগের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন নৌকা প্রতীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন। নবম সংসদ নির্বাচনে (২০০৮) আওয়ামী লীগের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন নৌকা প্রতীকে ১ লাখ ৫ হাজার ৩৩৯ ভোটে জয় পান। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির এম ডি এম কামাল উদ্দিন চৌধুরী ধানের শীষ প্রতীকে পান ৯৪ হাজার ৬৬৫ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন (২০০১) বিএনপির মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ধানের শীষ প্রতীকে ৮৬ হাজার ৮৩৯ ভোট পেয়ে জয় পান। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন নৌকা প্রতীকে ৮২ হাজার ৩৩৩ ভোট পান।

সপ্তম সংসদ নির্বাচনে (১৯৯৬) বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ধানের শীষ প্রতীকে ৬৬ হাজার ৩৩৬ ভোট পেয়ে জয় পান। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন নৌকা প্রতীকে পান ৬২ হাজার ৪৩ ভোট।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে (১৯৯১) বিএনপির মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ধানের শীষ প্রতীকে ৬৬ হাজার ৯৬৯ ভোট নিয়ে জয় পান। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন নৌকা প্রতীকে পান ৪৮ হাজার ৩০ ভোট।