নিজ সন্তানকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় এক নারীকে। যদিও তিনি ছিলেন নিরপরাধ। অসচেতন থাকায় মারা যায় তার সদ্যজাত শিশুটি। বলছিলাম এন গ্রেনের কথা। তিনি অক্সফোর্ডেশিয়ারে ১৬২৬-২৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

বেশ দরিদ্র পরিবারেই জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ভাগ্যের সন্ধানে এ কিশোরী স্যার থমাস রিড নামক এক ব্যক্তির বাড়িতে কাজ করতেন। ভালোই কাটছিল তার দিন। হঠাৎ এক বসন্তে গ্রেন ও বাড়ির মালিকের নাতির মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। স্যার থমাসের ১৬ বছরের নাতি জেফ্রির সঙ্গে প্রেমের কারণে একসময় গর্ভবতী হয়ে পড়েন গ্রেন।

কিশোরী গ্রেন স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি, এমন এক কাণ্ড তিনি ঘটিয়ে ফেলবেন। ৬ মাস পর আকস্মিকভাবে গ্রেনের প্রসব বেদনা শুরু হয়। তিনি কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। বাড়ির পাশেই একটি ছোট স্টোর রুম ছিল। গ্রেন কাতরাতে কাতরাতে সেখানে পৌঁছান এবং একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। যদিও শিশুটি খুবই ছোট ও অপুষ্টির শিকার ছিল।

jagonews24

গ্রেনের প্রসব বেদনার চিৎকার শুনে বাড়ির অন্য চাকররা ঘটনাস্থলে চলে আসেন। তারা গ্রেনকে অন্য ঘরে নিয়ে যান। এদিকে শিশুটিকে তারা জীবন্ত কবর দিয়ে দেন। গ্রেনের কাছে না জানতে চেয়েই এমন ঘৃণ্য কাজ করে বসেন। গ্রেন জানতে পারলে তারা বলেন, এটিই ঠিক কাজ হয়েছে।

কারণ এ ঘটনা জানতে পারলে মালিক তাদের সবাইকে পুলিশে দেবেন। এসব শুনে চুপ করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না গ্রেনের। কিছুদিন পরই এ ঘটনা লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে। তখনকার সময় শিশুহত্যার বিষয়টিকে অনেক গুরুত্ব সহকারে দেখা হতো। গ্রেনের এ ঘটনা বাড়ির মালিক জানতে পারেন।

তিনি জানতেন, তার নাতির কারণেই গ্রেন গর্ভবতী হয়েছিলেন। তবুও তিনি নিজের নাতিকে বাঁচিয়ে গ্রেনকে পুলিশে ধরিয়ে দেন। অপরাধী না হয়েও বেচারা গ্রেন মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন। ১৬৫০ সালের ডিসেম্বরে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

jagonews24

সঠিকভাবেই তার মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল। মৃত্যুদণ্ডের নির্দিষ্ট সময় পরই তার দেহটি ঝুলন্ত অবস্থা থেকে উঠিয়ে একটি কফিনে করে নেওয়া হয় ময়নাতদন্তের জন্য। গ্রেনের ময়নাতদন্তের সময় দায়িত্বরত ছিলেন অক্সফোর্ডের সার্জন ও গবেষক উইলিয়াম পেট্টি।

যখন পেট্টি কফিনের ঢাকনাটি খোলেন; তখন তিনি বুঝতে পারেন গ্রেন নিশ্বাস নিচ্ছেন। এমন কাণ্ড দেখে তার শরীরের লোম মুহূর্তেই দাঁড়িয়ে যায়। ফাঁসি হওয়ার পর কারও বেঁচে থাকার ঘটনা বিরল। পেট্টি তার সব জ্ঞান ও প্রচেষ্টা দিয়ে গ্রেনকে সুস্থ করার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। গরম উত্তাপ দিয়ে ও মালিশ করে গ্রেনের জ্ঞান ফেরানো হয়।

পেট্টি কাউকে কোনো খবর না দিয়ে, সঙ্গে এক নার্সকে নিয়ে গ্রেনের সেবা-যত্ন করা শুরু করেন। এর কিছুদিনের মধ্যেই গ্রেন স্বাভাবিক ও সুস্থ হয়ে ওঠেন। যদিও তার গলার অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। তারপরও তিনি কয়েকদিনের মধ্যেই মুরগির মাংস খেয়েছিলেন। এক মাসের মধ্যে গ্রেন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেন।

jagonews24

এরপর সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে গ্রেনের নাম। ঘটনাটি লুকিয়ে রাখতে পারেননি পেট্টি। এরপর গণমাধ্যমে পেট্টি এ ঘটনার কথা জানান। বিভিন্ন পত্রিকায় গ্রেনের অলৌকিকভাবে বেঁচে থাকার ঘটনা প্রচার হতে থাকে। এরপর পেট্টি তার সঙ্গে ঘটা সব ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে জানান। তিনি আরও জানান, কীভাবে তিনি অপরাধী না হয়েও মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন।

এরপর আদালতে আবারো গ্রেনের মামলাটি খোলা হয়। গ্রেনের যেদিন ফাঁসি কার্যকর হয়েছিল; তার তিন দিন পরই স্যার থমাস রিড মারা যান। এরপর সব তথ্য-প্রমাণাদি বিবেচনা করে আদালত কর্তৃক খালাস পান গ্রেন। গ্রেন পরবর্তীতে বিয়ে করেন। তিন সন্তানের জননী গ্রেন ১৬৬৫ সালে আরেকটি সন্তান প্রসবের সময় মারা যান।