সাইদুর রহমান মাস্টার্সে অধ্যয়নরত অবস্থায় ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় পাড়ি জমান প্রবাসে। সৌদি আরবে কিছুদিন কাটিয়ে ইতালি যান উন্নত জীবনের আশায়। প্রথম দিকে ইতালিতে চরম হতাশায় দিন কাটে তার। কোন কাজের ব্যবস্থা করতে না পেরে ফুটপাতে দোকানদারি শুরু করেন। গল্পের শুরু এখানেই। তবে সফলতার গল্পটি অন্যরকম।
শুরুতে ইতালির রিমিনি শহরে একটি পর্যটন এলাকায় ফুটপাতে কার্টনের ওপর মেয়েদের কানের দুল, চুরি, ফিতা ইত্যাদি আইটেম বিক্রি শুরু করেন। ফুটপাতের বিজনেস সাধারণত সব দেশেই নিষিদ্ধ। ইতালিও এর ব্যতিক্রম নয়। পুলিশ ধাওয়া করলে সব মালামাল কার্টনে ভরে দৌড়ে পালাতে হয়।   এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর সাইদুর খেয়াল করেন, তার পাশেই একজন চীনা নাগরিক কিছু একটা বিক্রি করেন। তবে পুলিশ তাকে ধাওয়া করে না। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন, লোকটি এক ধরনের তার দিয়ে পুতুল, ঘোড়া, ঘড়ি ইত্যাদি আইটেম হাতে তৈরি করে তা বিক্রি করেন। এ ধরনের আইটেম হাতে তৈরি করে বিক্রি করলে পুলিশ কিছু বলে না।

সাইদুর রহমান কৌশলে তার পিছু নিলেন। কোথা থেকে এ ‘তার’ কেনেন এবং কিভাবে তৈরি করেন, তা খুঁজে বের করেন। একপর্যায়ে তিনিও ওই তার কিনে পুতুল, ঘড়ি, ঘোড়া ইত্যাদি পণ্য হাতে তৈরি করে বিক্রি শুরু করেন। এতে তার ফুটপাত বিজনেস কিছুটা নিরাপদ। আগের মত পুলিশের ধাওয়া খেতে হয় না। কিছুদিন পর তিনি স্থান পরিবর্তন করে চলে যান সমুদ্রের পাড়ে। সেখানে বেচা-কেনা একটু বেশি। বেচা-কেনা বেশি হওয়ায় লাভও বেশি। তবে বিচের তপ্ত বালু রোদ বাড়ার সাথে সাথে আরও বেশি উত্তাপ ছড়াতে থাকে। এ উত্তপ্ত বালুর মাঝে হেঁটে হেঁটে পণ্য বিক্রি করেন সাইদুর। স্বপ্ন দেখেন একটি সুন্দর চাকরির।

একপর্যায়ে তার কাগজপত্র বৈধ হয়ে যায়। এরপর ভালো একটি চাকরির আশা মনের মাঝে তীব্র হয়ে ওঠে। তিনি সমুদ্র পাড়ে হকারি করার পাশাপশি বিভিন্ন মাধ্যমে চাকরি খুঁজতে থাকেন। স্বপ্ন, আত্মবিশ্বাস এবং প্রচেষ্টা থাকলে মানুষ সফল হয়। ফলে কিছুদিন পর ভালো একটি চাকরিও পেয়ে যান সাইদুর।

তপ্ত বালুর মাঝে হকারি করা ছেলেটি ভালো চাকরি করছে ভেবে সাইদুর খুবই খুশি। বেশ কয়েক বছর ভালোই চলছিল তার চাকরি জীবন। এরমধ্যে তিনি সন্ধান পান উদ্যোক্তা তৈরির অনলাইন প্লাটফর্ম ‘নিজের বলার মত একটি গল্প’র। প্রথমে তিনি না বুঝেই গ্রুপে জয়েন করেন, তখন চলছিল ২য় ব্যাচ। ধীরে ধীরে তিনি বুঝতে পারলেন, এটি একটি উদ্যােক্তা তৈরির অনলাইন প্লাটফর্ম। দীর্ঘ সাধনার পর চাকরি পেয়ে ভালোই দিন কাটাচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি চাকরি ছেড়ে অন্যকে চাকরি দেওয়ার নতুন স্বপ্ন দেখা শুরু করলেন।

চাকরির পাশাপাশি সমুদ্রপাড়ে একটি বিচ অ্যাক্সেসরিসের (সমুদ্রে গোসলের উপকরণ) দোকান দিলেন সাইদুর। তিনি অন্যের চাকরি করলেও নিজে একজনের চাকরির ব্যবস্থা করেছেন- একথা ভেবে আনন্দ অনুভব করেন। চাকরি এবং ব্যবসা দু’টোই চলছে পাশাপাশি। একপর্যায়ে স্বপ্নের চাকরি ছেড়ে পূর্ণ মনযোগ দেন ব্যবসায়। ব্যবসার পরিধি বাড়াতে থাকেন। পাশের আরও একটি দোকান নিয়ে বানান মিনি সুপার মার্কেট। এতে তৈরি হয় আরও কিছু লোকের কর্মসংস্থান। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি নবীন এ উদ্যোক্তাকে। পরে নিজ জেলা মাদারীপুরে ‘নাইস অনলাইন শপিং’ নামে গড়ে তোলেন একটি অনলাইন শপ। এর আগে মাদারীপুরে কোন অনলাইন শপ ছিল না।

সফলতা সম্পর্কে সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানে কিছু লোকের কর্মসংস্থান তৈরি করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। ভবিষ্যতে নিজের ব্যবসা সম্প্রসারণের মাধ্যমে অনেক লোকের কর্মসংস্থান তৈরি করতে চাই। তবে আমি অনলাইন প্লাটফর্মে জয়েন না করলে কখনো উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম না।’ সাইদুর রহমান মাদারীপুরে নানা ধরনের সামাজিক কার্যক্রমেও সম্পৃক্ত রয়েছেন। তিনি মাদারীপুর সদরের আমিরাবাদ গ্রামের মরহুম মৌলভী মোকসেদুর রহমানের ছেলে। বর্তমানে তিনি সপরিবারে ইতালিতে বসবাস করছেন।-