পঞ্চম দিনের শুরুতে দলীয় ৫৩ রানের মাথায় মুশফিকুর রহিম ফিরে গেলে ইনিংস হারের শঙ্কা ভালোভাবেই পেয়ে বসেছিল বাংলাদেশকে। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন সাকিব আর লিটন। শতরানের জুটিতে বাংলাদেশকে লিডও এনে দেন তারা।

লাঞ্চের ঠিক আগমুহূর্তে ওয়ানডে স্টাইলে খেলে ক্যারিয়ারের ২৭তম হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন সাকিব। বিরতির পর লিটনও ছুঁয়েছেন ফিফটি। তবে এরপর আর বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি উইকেটরক্ষক এই ব্যাটার।

আসিথা ফার্নান্ডো দুর্দান্ত এক ফিরতি ক্যাচে সাজঘরে ফিরিয়েছেন লিটনকে। ১৩৫ বলে ৩ বাউন্ডারিতে লিটনের ৫২ রানের ধৈর্যশীল ইনিংসটির পরিসমাপ্তি আবারও শঙ্কায় ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশকে।

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৬ উইকেটে টাইগারদের সংগ্রহ ১৫৬ রান। লিড এসেছে মাত্র ১৫ রানের। সাকিব ৫৫ আর মোসাদ্দেক হোসেন শুন্য রানে অপরাজিত আছেন।

টপঅর্ডারের ধারাবাহিক ব্যর্থতায় চতুর্থ দিন বিকেলে মাত্র ২৩ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ। শেষ দিকে লিটন ও মুশফিক মিলে ৩.৫ ওভার কাটিয়ে দেন নির্বিঘ্নে। বাংলাদেশ ৩৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে দিনের খেলা শেষ করে। প্রথম ইনিংসের মতো আবারও লিটন-মুশফিকের কাঁধে বর্তায় বড় দায়িত্ব।

প্রথম ইনিংসের আত্মবিশ্বাস থেকে আজকের দিনের শুরুতেও ইতিবাচক খেলতে থাকেন মুশফিক। শুরুতে বেশ আক্রমণাত্মক ফিল্ড সাজায় শ্রীলঙ্কা। কিন্তু লিটন-মুশফিকের সাবলীল ব্যাটিংয়ের কারণে খানিক রক্ষণাত্মক হয়ে যায় তারা। আসিথা ফার্নান্দোর ওভারে জোড়া বাউন্ডারি হাঁকান মুশফিক।

আসিথার তুলনায় কাসুন রাজিথার বোলিং ছিল অধিক নিয়ন্ত্রিত। অফস্ট্যাম্পের বাইরে থেকে হালকা মুভমেন্টের বেশ কিছু ডেলিভারিতে লিটনের মনে প্রশ্নের সৃষ্টি করেন তিনি। ইনিংসে ১৯তম ওভারে তো রাজিথার বলে লিটনকে কট বিহাইন্ডই দিয়ে বসেছিলেন আম্পায়ার। তবে রিভিউ নিয়ে নিজের উইকেট বাঁচান লিটন।

রাজিথার পরের ওভারে মুশফিক পারেননি নিজেকে বাঁচাতে। অফস্ট্যাম্পের বাইরে লেন্থ ডেলিভারিটি হালকা স্কিড করে সোজা ঢুকে যায় স্ট্যাম্পে। দ্রুত ব্যাট নামিয়েও বোল্ড হওয়া থেকে বাঁচতে পারেননি মুশফিক। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৪ চারের মারে ২৩ রান।

মুশফিক ফিরে যাওয়ার খোলসে ঢোকার বদলে আক্রমণে যায় বাংলাদেশ। চাপ দূর করার জন্য লঙ্কানদের দুই মূল বোলার রাজিথা ও আসিথার বিপক্ষে পাল্টা আক্রমণ করেন সাকিব-লিটন। তাই বলে বাড়তি ঝুঁকি নেননি তারা। অফস্ট্যাম্পের বাইরে হাত খোলার মতো ডেলিভারিগুলোকে সীমানাছাড়া করেছেন এ দুজন।

রাজিথার করা ২৫তম ওভারে তিনটি বাউন্ডারি হাঁকান সাকিব। তিনটিই ছিল অফস্ট্যাম্পের বাইরে ফুল লেন্থের ডেলিভারি। হাত খুলে কভার দিয়ে চালিয়ে দেন সাকিব। সেই ওভার পর রাজিথাকে আক্রমণ থেকে সরিয়ে নেন লঙ্কান অধিনায়ক।

বাঁহাতি স্পিনার প্রবীণ জয়াবিক্রম নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে খানিক ভয়ের কারণ হয়েছেন। তবে লিটনের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ের কারণে সফলতার দেখা পাননি এ তরুণ স্পিনার। আসিথার ওভারে জোড়া বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৩০ ওভারের ভেতরেই দলীয় শতরান পূরণ করে নেন সাকিব-লিটন।

চট্টগ্রাম টেস্টের একমাত্র ইনিংসে খাটো লেন্থের ডেলিভারিতে পরাস্ত হয়েছিলেন সাকিব। তাই এবার আক্রমণাত্মক সাকিবের বিপক্ষে একের পর এক বাউন্সার মারতে থাকেন আসিথা। এবার বাউন্সারগুলো ছেড়ে ছেড়ে খেলতে থাকেন সাকিব। হতাশ হয়ে আসিথাকেও সরিয়ে নেন করুনারাত্নে।

লিটন-সাকিবের জুটিতে ৬০ রান পেরিয়ে যাওয়ার পর দিনের ২১ ওভার শেষে দুই প্রান্তেই স্পিন আক্রমণ শুরু করে শ্রীলঙ্কা। একপাশে রমেশ মেন্ডিস ও অন্যপাশে জয়াবিক্রমের চ্যালেঞ্জের সামনে পড়েন সাকিব ও লিটন। সাকিবের অফস্ট্যাম্পের আশপাশে ক্ষত জায়গা তৈরি হওয়ায় তার জন্য কাজটা সহজ ছিল না।

দুই পাশ থেকে স্পিন আসায় রানের গতি কিছুটা কমেছে। তবে লাঞ্চের আগে কোনো বিপদ ঘটতে দেননি সাকিব-লিটন। বিরতির আগে ২৫.৩ ওভার কাটিয়ে যোগ করেন মূল্যবান ৯৬ রান।