আজ ১১ আগস্ট মঙ্গলবার ঐতিহাসিক জাহাজমারা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মরণাস্ত্র, গোলাবারুদ, জ্বালানী ও রসদ বোঝাই ৬টি যুদ্ধজাহাজ নারায়ণগঞ্জ থেকে ভূঞাপুর যমুনা নদী হয়ে উত্তরবঙ্গে যাচ্ছিল। কাদেরিয়া বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর জাহাজ এসইউ ইঞ্জিনিয়ার্স এলসি-৩ ও এসটি রাজন ধ্বংস করার মাধ্যমে হানাদারদের পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় টাঙ্গাইলের যমুনা ধলেশ্বরী নদী পথে ভূঞাপুরের সিরাজকান্দী (ন্যাংড়া বাজার) নামক স্থানে আসলে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর (কাদেরিয়া) বাহিনীর দুধর্ষ সাহসী চৌকশ কমান্ডার মেজর হাবিবুর রহমান বীর বিক্রমের নজরে আসে। মুক্তিযোদ্ধা সময় ওই এলাকার লোকজন নিয়ে রাতের আঁধারে ২টি জাহাজে হামলা করে। হাবিবুর রহমানের অত্যন্ত দূরদর্শিতা ও অল্প সংখ্যক সাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে জীবন বাজি রেখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অস্ত্র বোঝাই জাহাজ এস.ইউ ইঞ্জিনিয়ার্স এল.সি-৩ এবং এস.টি রাজন ধ্বংস করার মাধ্যমে হানাদারদের পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেন। জাহাজগুলো আক্রমণ ও দখল করে ১ লাখ ২০ হাজার বাক্সে আনুমানিক ২১কোটি টাকা মূল্যের অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ মুক্তিযোদ্ধারা নিয়ন্ত্রণে নেয়।

বাংলাদেশের ইতিহাসের দীর্ঘ ৯ মাসে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তিবাহিনীদের হাতে এত বড় ক্ষতি ও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়নি। পরবর্তীতে যুদ্ধ জাহাজ ও অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করার জন্য পাকিস্তানি কমান্ডেন্ট লে. জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজি ও ব্রিগেডিয়ার কাদের খানের নেতৃত্বে ৪৭ ব্রিগেড, ৫১ কমান্ডো ব্রিগেড ও হানাদার বিমান বাহিনীর ২টি এফ-৮৬ স্যাবর জেট বিমান দ্বারা মুক্তিবাহিনী ও জনগণের উপর চতুরদিক থেকে আক্রমণ করে। পরে কমান্ডার হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বের কাছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এই যুদ্ধকে পট পরিবর্তনকারী (ঞঁৎহরহম চড়রহঃ) অধ্যায় হিসেবে গণ্য করা হয়। কমান্ডার হাবিবুর রহমানের অসম সাহসীকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে “বীরবিক্রম” ও “জাহাজমারা হাবিব” উপাধিতে ভূষিত করেন।

এদিকে, মহান স্বাধীনতার পরে প্রতি বছর এই দিনে ১১ আগস্টে ঐতিহাসিক জাহাজমারা দিবস পালন করেন এ উপজেলার সকল মুক্তিযুদ্ধের পরিবার, বিভন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সেবামূলক সংগঠনগুলো। কিন্তু এ বছর মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সেই ঐতিহাসিক দিবসের সকল প্রস্তুতি ও কর্মসূচী পালন করা হয়নি।

অন্যদিকে, সোমবার (১০ আগস্ট) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে- জাহাজমারা স্মৃতিস্তম্ভটি দীর্ঘদিন ধরে অযত্নে পড়ে রয়েছে। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কর্তৃপক্ষ থেকেও সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়নি। চারভাগেরতিন অংশে মাটি সরে গিয়ে ধ্বসে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের এই স্মৃতি স্থানটি দ্রুত সংস্কার দাবি জানিয়ে স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন- মহান মুক্তিযুদ্ধের এই জায়গাটি এখন মাদক সেবীদের আড্ডায় পরিণিত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কমান্ডার হাবিবের সহযোগী (অবঃ হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা) আব্দুর রশিদ গেরিলা জানান-‘এই দিনটিকে স্মরণ রাখার জন্য আমরা প্রতিবছরই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করি। কিন্তু এ বছর করোনাভাইরাস ও বন্যার কারণে কোন কর্মসূচি নেয়া হয়নি’।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. নাসরীন পারভীন জানান-‘জাাহাজমারা দিবস সর্ম্পকে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা আমাকে কিছু জানাননি’।