জলবসন্ত বা চিকেন পক্স ছোঁয়াচে রোগ, যা ভ্যারিসেলা জোস্টার ভাইরাস সংক্রমণের কারণে হয়। যেকোনো বয়সী মানুষ এতে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে যাদের বয়স ১০ বছরের কম, তাদের আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি।

আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি-সর্দি, জামাকাপড়, ফোসকার পানি এবং সরাসরি সংস্পর্শে এটি ছড়ায়। ভাইরাস শ্বাসনালি সংক্রমিত করে রক্তে প্রবেশ করে এবং ত্বকে গিয়ে ফুসকুড়ি তৈরি করে। সাধারণত আক্রান্ত হওয়ার ১৪ থেকে ২১ দিনে এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় এবং সাত থেকে ১০ দিনে রোগী সুস্থ হয়।

ভ্যারিসেলা ভাইরাস বাতাসে কিছুক্ষণ ভাসতে পারে, বস্তুর সঙ্গে লেগে থেকেও বাঁচতে পারে। ফোসকা শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত ভাইরাসটি ছড়াতে পারে।

উপসর্গ: শুরুতে অল্প জ্বর, মাথাব্যথা, গায়ে ব্যথা এবং ক্লান্তি, ক্ষুধামান্দ্য ও সর্দি-কাশি থাকতে পারে। এরপর প্রচণ্ড জ্বরের সঙ্গে গায়ে ব্যথা এবং সারা শরীরে প্রথমে ছোট ছোট পানিভর্তি ফোসকা দেখা যায়। মুখের ভেতর ফোসকায় ক্ষত হয় বলে খেতেও কষ্ট হয়।

চিকিৎসা: সহজপাচ্য পুষ্টিকর নরম খাবার অল্প অল্প করে বারবার খাওয়া প্রয়োজন। বেশি বেশি তরল, ফলের রস, ডাবের পানি, ভিটামিনসমৃদ্ধ ও বেশি ক্যালরিজাতীয় খাবারে দ্রুত এ রোগের উপশম সম্ভব। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, দই, স্যুপ ও শরীর ঠাণ্ডা রাখার খাবার বেশি করে খেতে হবে। শিশুদের বেশি বেশি বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। চর্বিযুক্ত, বেশি ঝাল-মসলা ও লবণযুক্ত খাবার, চকলেট, বাদাম, বাটার, কিশমিশ এবং যেসব খাবারে অ্যালার্জি হতে পারে, সেসব খাবার আক্রান্ত ব্যক্তিকে দেয়া যাবে না।

রোগীকে প্রতিদিন পরিষ্কার সাধারণ তাপমাত্রার বা কম ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করান। তবে খেয়াল রাখা দরকার যাতে ফোসকা না ফাটে। পরিষ্কার নরম সুতি কাপড় দিয়ে আস্তে আস্তে শরীর মুছতে হবে। বেশি চুলকানি হলে ক্যালামিন লোশন ব্যবহার করা যায় এবং অ্যান্টিহিস্টামিন-জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল, ব্যথার ওষুধ (তবে অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রফেন-জাতীয় নয়) খেলেও রোগী আরাম পাবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কখনও অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিবায়োটিকসের প্রয়োজন হতে পারে।

প্রতিরোধ: আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকা দরকার। রোগীকে আলো-বাতাসপূর্ণ পরিচ্ছন্ন ঘরে রাখতে হবে। তাকে নরম সুতির ঢিলেঢালা পোশাক পরানো উচিত। টিকা হলো এ রোগের উত্তম প্রতিষেধক। শিশুর ১২ থেকে ১৮ মাস বয়সে এক ডোজ চিকেন পক্স ভ্যাকসিন এবং পরে চার থেকে ছয় বছর বয়সে ভ্যাকসিনের আরেক ডোজ বুস্টার হিসেবে নিতে হবে।