সবারই প্রিয় রং থাকে। কেউ হয়তো লাল রং ভালোবাসেন আবার কেউ নীল, সবুল কিংবা বেগুনি। তবে আপনি যে রঙই পছন্দ করুন না কেন, তা কিন্তু আপনার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে জানান দেয়।

মনোবিজ্ঞানের মতে, প্রিয় রং শুধু আপনার ব্যক্তিত্বই প্রতিফলিত করে না বরং আপনি কীভাবে জীবনের সঙ্গে মোকাবিলা করেন তাও জানান দেয়।

আরও পড়ুন: পোশাকই বলে দেবে আপনি কেমন

বিশেষজ্ঞদের মতে, রং মানুষের অনুভূতি বা কর্মকে প্রভাবিত করতে পারে। সবার জীবনেই পছন্দের রং থাকে। বিশেষজ্ঞরা যাকে সত্যিকারের রং বা ব্যক্তিত্বের রং বলেন।

রঙের মনোবিজ্ঞান অনুসারে, প্রতিটি রঙের ইতিবাচক ও নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য আছে। তাই আপনার শক্তি ও আচরণের ভারসাম্য বজায় রাখতে অল্প সংখ্যক রঙের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা বুদ্ধিমানের কাজ। চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন রং কেমন ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করে-

লাল

এই রং সাহস, আবেগ, রোমাঞ্চ, বিপদ, শক্তি ও কর্মের প্রতিনিধিত্ব করে। লাল রং যাদের পছন্দ তারা দুঃসাহসিক, রোমাঞ্চপ্রেমী, আবেগপ্রবণ হন। তারা তীব্রভাবে ভালবাসতে পারেন।

আরও পড়ুন: ফোন হাতে রাখার কৌশলই জানাবে আপনি কেমন

কমলা

এই রং সামাজিকীকরণ, সংযোগ ও মানুষের সাহচর্যের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। কমলা প্রায়ই কমিউনিটি পরিষেবাগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত বিপণন প্রচারে বা সমাজে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন তৈরির বিষয়ে যত্নশীল ব্র্যান্ডগুলোর জন্য ব্যবহৃত হয়।

কমলা রং যাদের প্রিয় তারা বহির্গামী হন। এমনকি তারা যে কোনো অনুষ্ঠান বা পার্টির পরিচালনা করতে ভালবাসেন। এদের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ ভালো ও সামাজিক প্রকৃতির হন। কমলা রংপ্রেমীরা মোটেও অলস প্রকৃতির হন না।

হলুদ

হলুদ এমন একটি রং যা সুখ ও ইতিবাচকতার প্রতীক। শুধু সূর্যের আলোর কথা ভাবুন। হলুদ রং যাদের প্রিয় তারাও আশাবাদী ও ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। তারা অভিব্যক্তিপূর্ণ, প্রফুল্ল ও হাসতে পছন্দ করেন। তবে তারা বেশ কল্পনাপ্রবণ।

আরও পড়ুন: ‘আপনি কেমন আছেন’ সবচেয়ে অকেজো তিন শব্দ, বলছে গবেষণা

নীল

অভ্যন্তরীণ শান্তি ও প্রশান্তির প্রতিনিধিত্ব করে নীল রং। এই রঙের শান্ত প্রভাবের কারণেই এটি প্রায়শই বেডরুমের পেইন্টের পাশাপাশি থেরাপি ইনস্টিটিউটের ব্র্যান্ডিং লোগোতে ব্যবহৃত হয়।

নীল রং পছন্দ করেন এমন ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য হলো- শান্তিপূর্ণ, সহানুভূতিশীল, নির্ভরযোগ্য, বিশ্বস্ত ও সৎ। অন্যের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকেন তারা

সবুজ

সবুজ প্রকৃতি, উর্বরতা ও বৃদ্ধির প্রতীক। যারা সবুজ পছন্দ করেন তারা মানসিকভাবে বেশ উঁচু স্তরের ও বাস্তববাদী প্রকৃতির হন। যদিও এই রং হিংসা অর্থাৎ নেতিবাচকতার ইঙ্গিতও দেয়।

আরও পড়ুন: শারীরিক যেসব বৈশিষ্ট্য বলে দেবে আপনি কেমন

যারা সবুজ রং পছন্দ করেন তারা মূলত সব বিষয়ে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেন। তারা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করেন। এ ধরনের মানুষেরা ব্যবহারিক গুণসম্পন্ন, সহানুভূতিশীল ও সবাইকে আপন করে নিতে পারেন।

বেগুনি

বেগুনি রাজকীয়তা, শক্তি ও আধ্যাত্মিকতার প্রতীক। এই রঙের প্রতিনিধিরা ভালো বক্তৃতা দিতে পারেন। রঙটি সৃজনশীলতা ও পরিপূর্ণতাবাদের সঙ্গেও যুক্ত। যারা বেগুনি পছন্দ করেন তারা স্বজ্ঞাত, দূরদর্শী ও মহান পর্যবেক্ষক বলে বিশ্বাস করা হয়। এমনকি তারা মজার মানুষ হন।

গোলাপি

গোলাপি মানিই রোমান্স। যারা গোলাপি পছন্দ করেন তাদের নিঃশর্তভাবে ভালবাসা ও গ্রহণ করা প্রয়োজন। এছাড়া গোলাপি রং যত্ন ও কামুকের সঙ্গেও যুক্ত করা হয়।

আরও পড়ুন: সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইল পিকচারই বলে দেবে আপনি কেমন!

এছাড়া এই রং নারীত্ব ও কোমলতা প্রতিনিধিত্ব করে। গোলাপি রং পছন্দ করেন এমন মানুষেরা পরিবার ও ভালোবাসাকে মূল্য দেন ও সমহানুভূতিশীল হন।

ধূসর

একটি নিরপেক্ষ রং। যারা ধূসর রং পছন্দ করেন তারা জীবনকে সহজ ও সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে ও সব বিষয় মেনে নিতে পারেন। যারা ধূসর পছন্দ করে তারা অন্যের মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন না।

যদিও এই রং দ্বিধার প্রতীক, তবে এই রং পছন্দ করেন এমন ব্যক্তিরা নির্ভরযোগ্য ও সংরক্ষিত হন। তারা সব ধরনের বিশৃঙ্খলা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেন।

আরও পড়ুন: হ্যান্ডশেক করেই বুঝে নিন মানুষটি কেমন!

সাদা

সতীত্ব, বিশুদ্ধতা ও নির্দোষতার প্রতীক হলো সাদা। এটি সরলতা, পরিচ্ছন্নতা, শান্তির প্রতিনিধিত্ব করে। এছাড়া সংগঠিত ব্যক্তিদেরও প্রতিনিধিত্ব করে সাদা। সাদা রং যাদের প্রিয়, তারা স্বভাবে শান্ত, যৌক্তিক, জ্ঞানী, সতর্ক ও সংরক্ষিত প্রকৃতির হন।

কালো

সব রঙের রাজা হলো কালো। সবচেয়ে বহুমুখী ও আকর্ষণীয় রং এটি। রহস্য, শক্তি, কমনীয়তা, তীব্রতার প্রতীক। অন্যদিকে এটি শোক, দুঃখ, বিষণ্নতা ও ব্যথা প্রতিনিধিত্ব করে।

কালো কিন্তু কর্তৃত্বপূর্ণ ও গুরুতর বিষয়েরও প্রতীক। পাশাপাশি শক্তিশালী ও মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী হন কালোপ্রেমীরা। তারা সংকল্পবদ্ধ, সাহসী, ব্যক্তিগত ও রচয়িতা প্রকৃতির।

আরও পড়ুন: কান দেখেই চিনে নিন কে কেমন!

আজ আন্তর্জাতিক রং দিবস। অ্যারিস্টটল বিশ্বাস করতেন, রং স্বর্গ থেকে এসেছে। তার ধারণা ছিল, সব ধরনের রঙের উত্স কালো ও সাদা।

পরবর্তী সময়ে ১৬৬০ সালে যখন আইস্যাক নিউটন আলো ও এর বিভিন্ন বর্ণালী নিয়ে পরীক্ষা করেন, তখন রঙটি অধ্যয়নের বিষয় হয়ে ওঠে। আইসাক নিউটন তার বই ‘অপটিক্স’ এ আলোর বর্ণালীর ঘটনা বর্ণনা করেছেন।

২০০৮ সালে ‘পর্তুগিজ কালার অ্যাসোসিয়েশনের’ সভাপতি মারিয়া জোয়াও ডুরাও ‘অ্যাসোসিয়েশন ইন্টারন্যাশনাল দে লা কুলিউর’ এর কাছে রঙের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দেন।

এরপর ২০০৯ সালে প্রস্তাবটি সদস্যদের দ্বারা গৃহীত হয়। বিশ্ব রং দিবসের তারিখ হিসেবে ২১ মার্চ ধার্য করা হয়। কারণ এটি বিষুব দিবস। রঙের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বোঝাতেই আন্তর্জাতিক রং দিবস উদযাপিত হয়।