শীতে সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ে। এর মূল কারণ হলো আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শীতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমতে শুরু করে।

এ কারণে শীতকালীন ফল ও শাকসবজি খাওয়া জরুরি। এতে করে শরীরে যাবতীয় পুষ্টিগুণও মেলে আবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে। তবে শীতে কোন কোন ফল খাওয়া জরুরি, তা হয়তো অনেকেরই অজানা।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ) অনুসারে, সাইট্রাস ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে।

আর এই ভিটামিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এ কারণে শীতে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি’যুক্ত ফল খাওয়া জরুরি।

আরও পড়ুন: শীতে চুলকানি বাড়ে কেন?

মেডিলাইনপ্লাসের তথ্যমতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলেই শীতকালীন সর্দি ও অসুস্থতায় হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিভাইরাল।

এই ভিটামিন কিন্তু প্রতিদিনই গ্রহণ করতে হবে। কারণ ভিটামিন সি পানিতে দ্রবণীয় হওয়ায় প্রতিদিনেরটা শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।

হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিংয়ের তথ্যমতে, ভিটামিন সি শরীরকে শ্বেত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে। এছাড়া এই ভিটামিন আপনাকে ঠান্ডা লাগা থেকে রক্ষা করতে পারে।

মেডলাইনপ্লাস অনুসারে, ভিটামিন সি এর পুষ্টিগুণ অসুস্থতার গুরুতর প্রভাব কমাতে সাহায্য করে।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ (এনআইএইচ) অনুসারে, ভিটামিন সি কোভিড ১৯ এর চিকিৎসাতেও দারুন কাজ করে।

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এটি শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তিদের জন্য খুবই উপকারী।

আরও পড়ুন: বিয়ের আগের দিন কোন কোন খাবার খাওয়া ঠিক নয়?

তাই কোভিড ১৯ এ আক্রান্তদের সুস্থতায় দৈনিক পর্যাপ্ত ভিটামিন সি গ্রহণের পরামর্শ প্রথম থেকেই দিয়ে আসছেন চিকিৎসকরা।

তাহলে কোন কোন ফল শীতে বেশি খাবেন?

নাশপাতি

ইউএসডিএ’র মতে, একটি মাঝারি সাইজের নাশপাতিতে থাকে ৫.৫৮ গ্রাম ফাইবার। এই পুষ্টি উপাদান ইমিউন সিস্টেমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ভালো ব্যাকটেরিয়া বিকাশে সাহায্য করে।

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্যমতে, আপনি যত বেশি ফাইবার গ্রহণ করবেন, ততই আপনার ইমিউন কোষে বাড়বে।

আবার নাশপাতি’সহ ফাইবারযুক্ত খাবার অতিরিক্ত ওজন কমাতেও সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফাইবার খাওয়ার তৃপ্তি বাড়ায়। ফলে অতিরিক্ত খাওয়া রোধ হয়।

আনারস

ইউএসডিএ অনুসারে, সাইট্রাস ফলের মধ্যে আনারস হলো ভিটামিন সি এর একটি দুর্দান্ত উৎস। ১ কাপ আনারসে থাকে ৭৮.৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি।

একটি পর্যালোচনা অনুসারে, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এই ফলের অন্যান্য স্বাস্থ্য সুবিধাও আছে। এতে রোগ প্রতিরোধকারী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য আছে। যা স্নায়ু ও পাচনতন্ত্রের উপকার করে।

ক্র্যানবেরি

বিভিন্ন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ক্র্যানবেরি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতেও দারুন উপকারী। পাশাপাশি করোনারি ধমনী রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

এই ফল ভিটামিন সি এর একটি ভালো উৎস। ইউএসডিএ অনুসারে, ১ কাপ কাঁচা ক্র্যানবেরিতে ১৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে।

কমলা

ইউএসডিএ অনুসারে, একটি কমলায় প্রায় ৮২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে। আস্ত কমলা খেলেই এক্ষেত্রে ভালো ফল পাবেন, তবে চাইলে তাজা কমলার রসও পান করতে পারে।

এছাড়া একটি কমলায় ৩.৭ গ্রাম ফাইবার থাকে। তাই শীতে ওজন কমাতে, এমনকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দৈনিক অন্তত একটি করে কমলা খান।

আরও পড়ুন: শীতকালে প্রতিদিন গোসল না করলে কী হয়?

জাম্বুরা

ভিটামিন সি এর আরেকটি চমৎকার উৎস হলো জাম্বুরা। একটি জাম্বুরায় ৪৩.৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে।

ইউএসডিএ অনুসারে, জাম্বুরায় আরও থাকে লাইকোপিন। গবেষণার তথ্য মতে, এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

ডালিম

ডালিমও ভিটামিন সি এর একটি ভালো উৎস। ইউএসডিএ এর তথ্য অনুসারে, এক কাপ ডালিমে থাকে ৭ গ্রাম ফাইবার ও ১৭.৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। এছাড়া ডালিম ভিটামিন কে সমৃদ্ধ, এক কাপে থাকে ২৮.৭ মিলিগ্রাম।

ভিটামিন কে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। এনআইএইচ অনুসারে, হাড় সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এই ভিটামিন। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া ও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

কিউই

ইউএসডিএ অনুসারে, একটি কিউই ফলের মধ্যে আছে ৫৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। এছাড়া এই ফলে পর্যাপ্ত ভিটামিন কে থাকে। এক কাপে ৩০.২ মিলিগ্রাম ভিটামিন কে থাকে। শীতে এই ফলও পাতে রাখতে পারেন প্রতিদিন।