প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উন্নয়ন ও শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তরুণদের পাশাপাশি তরুণীদেরও সমানভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

আজ বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ‘বিশ্ব চিন্তা দিবস ২০২৪’ উপলক্ষে গতকাল বুধবার দেওয়া এক বাণীতে এ কথা বলেন সরকারপ্রধান।

প্রধানমন্ত্রী এ উপলক্ষে বাংলাদেশ গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশনের নবীন, প্রবীণসহ সর্বস্তরের গাইড সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। তিনি মনে করেন, ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব গার্ল গাইডস অ্যান্ড গার্ল স্কাউটস (ডব্লিউএজিজিজিএস) কর্তৃক নির্ধারিত দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘আওয়ার ওয়ার্ল্ড, আওয়ার থ্রাইভিং ফিউচার : দ্যা এনভায়রমেন্ট অ্যান্ড গ্লোবাল প্রোর্ভাটি’ যথার্থ ও সময়োপযোগী হয়েছে।

শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে নারীর আত্মোন্নয়নের লক্ষ্যে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বাংলাদেশ গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশন এ দিনটি উদযাপন করে আসছে। জাতির পিতার উদ্যোগেই মহান জাতীয় সংসদে ১৯৭৩ সালে ‘বাংলাদেশ গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশন আইন, ১৯৭৩’ পাস হয়। যার মাধ্যমে এই সংগঠনটি আইনি ভিত্তি লাভ করে। তখন থেকে সারা দেশে সরকার ও প্রশাসনের সহযোগী হিসেবে গার্ল গাইডস বোনেরা সরকারের উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নে ভূমিকা রেখে চলেছে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে দেশকে রক্ষার্থে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যান (বিসিএসএপি) গ্রহণ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থায়নে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলারের মাধ্যমে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন এবং ২০১৮ সালে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে জলবায়ু অর্থায়নের জন্য ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান’ গ্রহণ করা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ স্বেচ্ছাসেবী নারী সংগঠন হিসেবে নারী উন্নয়ন, নারীর নেতৃত্ব বিকাশ ও সুনাগরিক গড়ার লক্ষ্যে সারা দেশে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশন। দেশের যেকোনো জরুরি অবস্থায় দেশসেবার ব্রত নিয়ে স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে ছয় লাখেরও বেশি গার্ল গাইড সদস্য যুক্ত রয়েছেন। এই সংখ্যা বিগত দশক থেকে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বেইলী রোডে বাংলাদেশ গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশনের প্রাঙ্গণে আধুনিক ১০তলা ভবন ও বাড়ইপাড়ায় জাতীয় ক্যাম্প সাইটে চারতলা ভবন তৈরি হয়েছে। কন্যাশিশু, কিশোরী ও নারীদের আত্মোন্নয়নের লক্ষ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ হতে পরিপত্রের মাধ্যমে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, সরকারি-বেসরকারি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সমমানের মাদরাসা এবং কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবশ্যিকভাবে গার্ল গাইডিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। একইভাবে কন্যাশিশুদের আত্মবিশ্বাসী ও আগামীর সচেতন নারী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিপত্রের মাধ্যমে দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গার্ল গাইডিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আবশ্যিকভাবে ‘হলদে পাখি’ দল গঠনের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশের গার্ল গাইডস আজ বিশ্ব গার্ল গাইডস ও গার্ল স্কাউটস সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের পরিচালনা পর্ষদে স্থান করে নিচ্ছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মেধা, মননশীলতা ও ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই যথেষ্ট নয়। তাই তিনি মনে করেন, বালিকা-কিশোরী ও তরুণী যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি গাইডিংকে ব্রত হিসেবে নিবে তারা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে সুযোগ্য নাগরিক হিসেবেও গড়ে উঠবে।’

‘দেশের নারী জনশক্তিকে পিছিয়ে রেখে উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা সম্ভব নয়’ উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, উন্নয়ন ও শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তরুণদের পাশাপাশি তরুণীদেরও সমানভাবে এগিয়ে আসতে হবে। উন্নয়নের মহাসড়কে সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশ গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব চিন্তা দিবস-২০২৪ উপলক্ষে গৃহীত সব কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।