ফরিদপুরের সালথায় গত ৫ এপ্রিল রাতে সহিংসতার ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গঠিত দুটি তদন্ত কমিটি রোববার (১১ এপ্রিল) দুপুরে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এরমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করতে। অপর কমিটি ঘটনা সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য নেন।

তদন্ত প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়েছে, ওই রাতের হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে প্রায় তিন কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে গঠিত কমিটির প্রধান জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আসলাম আলী মোল্লা জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন। এই কমিটিতে অন্যদের মধ্যে ছিলেন-গণপূর্ত বিভাগের একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী, উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।

এই কমিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়সহ তাদের দুটি সরকারি গাড়ি ও বাসভবনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, সবমিলিয়ে ওই ঘটনায় প্রায় তিন কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে। সেদিনের হামলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এসিল্যান্ডের সরকারি যে দুটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয় তার পরিমাণই প্রায় এক কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এছাড়া আসবাবপত্র, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, চেয়ার-টেবিল, দরজা-জানালা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, প্রকল্প কর্মকর্তার গুদামে রাখা খাদ্যসামগ্রীর হিসাবও এতে এসেছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার কার্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, হামলায় তাদের প্রায় ৪ লাখ ২৮ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার টাকা দামের একটি মোটরসাইকেল। থাইগ্লাস ক্ষতি বাবদ ১ লাখ ২২ হাজার টাকা। এভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়সহ অন্যান্য দফতরের ক্ষতিও নিরূপণ করা হয়েছে আলাদা আলাদাভাবে।

এদিকে, এই সহিংসতার কারণ, বিস্তার ও ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরতে জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তাসলীমা আলীকে প্রধান করে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়। রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অতুল সরকারের কাছে এই কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেন বলে নিশ্চিত করেছেন ৯ সদস্যর ওই তদন্ত কমিটি প্রধান।

জানা গেছে, ওই কমিটি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য গ্রহণ করেন। তবে তদন্তে কী পেলেন, এ ব্যাপারে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন তদন্ত কমিটির প্রধান তাসলীমা আলী।

jagonews24

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার তদন্ত প্রতিবেদন দুটি হস্তগত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এদিকে, সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুলিশ ওই রাতের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ৮০ জনকে আটক করেছে। এদের মধ্যে ৫৪ জনকে আদালত সোপর্দ করা হলে ৪৮ জনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত ৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় উপজেলার এসিল্যান্ড মারুফা সুলতানা খান হিরামনি লকডাউন অভিযানে সোনাপুর ইউনিয়নের ফুকরা বাজারে যান। এসময় সাধারণ জনতার ওপর লাঠিচার্জ ও অসদাচরণের অভিযাগে গ্রামবাসী সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের ধাওয়া করেন। পরে পুলিশ এলে তাদেরও কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করা হয়। এরপর তারা থানা ঘেরাও করে গভীর রাত পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, ভূমি অফিস, দুটি সরকারি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং সরকারি বাসভবন, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ও পল্লী বিদ্যুৎ অফিস ভাঙচুর করা হয়।

এসব ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট পাঁচটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।