দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি অস্ত্র ভেহিকল মাউন্টেড ফাইবার লেজার সিস্টেমের (আরমল) গ্রহণযোগ্যতার পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করেছে তুরস্ক। অর্থাৎ, এর ফলে সামরিক বাহিনীর ব্যবহারের জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেয়েছে অস্ত্রটি।

তুরস্কভিত্তিক গণমাধ্যম ডেইলি সাবাহ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তুরস্কের শিল্প ও প্রযুক্তিমন্ত্রী সোমবার এই অস্ত্রের অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এখন থেকে এটি তুরস্কের সশস্ত্র বাহিনীর উদ্ভাবনের তালিকায় যুক্ত হবে।

৪০০ কেজির এই লেজার সিস্টেমটি একটি সাঁজোয়া যানের ওপর সংযুক্ত। এতে লক্ষ্য নির্ধারণের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি এবং অস্ত্রটি নিয়ন্ত্রণের জন্য কন্ট্রোল টার্মিনাল রয়েছে। তুরস্কের ১ দশমিক ২৫ কিলোওয়াটের এই লেজার অস্ত্র ৫০০ মিটারের মধ্যে থাকা ৩ মিলিমিটারের স্টিল নষ্ট করে দিতে সক্ষম। এই অস্ত্র তুরস্কের যুদ্ধবিমানে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

তুরস্কের ইনফরমেশন সিকিউরিটি রিসার্চ সেন্টারের সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল এই অস্ত্রটি তৈরি করেছে। এর আগে আরও একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন লেজার অস্ত্র তৈরি করে তারা যার ক্ষমতা ২০ কিলোওয়াট।

আরও সংবাদ

বিশ্বের যেকোনো শক্তির ভারসাম্য বদলে দিতে পারে তুর্কি ড্রোন!

১৯৭৫ সালে সাইপ্রাসে আক্রমণের ফলে আঙ্কারার ওপর আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে তুরস্ক তার দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্প উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেয়।

গত দু’দশকে মিলিটারি হার্ডওয়্যার ও ড্রোন প্রযুক্তিতে ব্যাপক বিনিয়োগ করে দেশটি। বর্তমানে তুরস্কের প্রতিরক্ষা খাত এমন এক পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে, যেখানে এটি তুরস্কের ভ‚-রাজনৈতিক নীতি নির্ধারণে ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।

তুরস্কের তৈরি বাইরাক্তার টিবি২ ড্রোন নাগরনো-কারাবাখ নিয়ে আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়ার মধ্যকার সাম্প্রতিক যুদ্ধে নিয়ামকের ভ‚মিকা পালন করেছে এবং ইরাকের নিষিদ্ধ কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি বা পিকেকের বিরুদ্ধে তুরস্কের ৩৫ বছরের যুদ্ধে ২০১৬ সাল থেকে মোতায়েন করা টিবি২ ইরাক এবং উত্তর সিরিয়ার ওয়াইপিজিতে নির্ধারিত লক্ষ্যে আঘাত হানছে।

ড্রোন অভিযানের ফলে সিরিয়ান সেনাবাহিনী ইদলিবের দিকে অগ্রসর হওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, যা রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করতে বাধ্য করেছে। অল্প সময়ের মধ্যেই সশস্ত্র-ড্রোন প্রযুক্তি তুরস্কের প্রতিরক্ষা কেন্দ্রিক বৈদেশিক নীতির মূল ভিত্তিতে পরিণত হয়েছে।

তুর্কি ড্রোনগুলো কৌশলগতভাবে দক্ষ এবং পশ্চিমা প্রযুক্তির তুলনায় স্বল্প ব্যয়যুক্ত। সামরিক বিশেষজ্ঞ মেতিন গুরকান তুরস্কের এ সামরিক বিবর্তনকে দেশটির শক্তি প্রক্ষেপণের ‘ড্রোনাইজেশন’ হিসাবে অভিহিত করেছেন। ড্রোনগুলোর সাফল্যের ফলে ভূ-রাজনীতিতে তুরস্ক ঐতিহ্যগত ক‚টনৈতিক কৌশলের ওপর নির্ভর করার পরিবর্তে তার নব যুগের সামরিক দক্ষতার ওপর নির্ভর করছে। দেশটি তার সামরিক শক্তির প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্যে জনসংযোগ জোরদার করেছে।

সামরিক ও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাদের পূর্বে ড্রোন পাওয়ার করার সামর্থ্য ছিল না বা সেগুলো অর্জনের ক্ষেত্রে যাদের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল, তেমন আরো বিস্তৃত বাজারে তুরস্ক ব্যাপকহারে তার মধ্য-ব্যান্ডউইথের সামরিক প্রযুক্তি সরবরাহ এবং মোটামুটি সস্তা ড্রোনগুলো বিক্রি শুরু করতে পারে এবং দেশটির এ পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক ভারসাম্যকে বদলে দেবে। বায়রাক্তার টিবি২ ড্রোন ইতোমধ্যে কাতার, ইউক্রেন, তিউনিসিয়া এবং লিবিয়ায় রফতানি করা হয়েছে। আঙ্কারা এটিকে কেবল সূচনা হিসাবে দেখছে।

কার্যকর ড্রোন এমন এক সময়ে এ অঞ্চলে তুরস্কের ভাবমর্যাদা জোরালো করে তুলেছে, যখন দেশটি অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছিল। আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অফ বৈরুতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ হিলাল খাশানের মতে, ককেশাসে তুর্কি অধ্যুষিত অন্যান্য অঞ্চলের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে তুরস্ক আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে আজারবাইজানের জয়কে ব্যবহার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পূর্ব ভ‚মধ্যসাগর এবং মধ্যপ্রাচ্যে নিয়েও তুরস্কের একইরকম উদ্দেশ্য সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন নয়।

তুরস্ক তার কৌশলগত স্বাধীনতায় দীর্ঘমেয়াদী উচ্চাকাক্সক্ষায় অগ্রগতি অর্জনের করলে, আঞ্চলিক নীতিনির্ধারকরা নিজেদের তুলনামূলক শক্তির অবস্থান থেকে পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়ে তুরস্কের মিত্রদের সাথে আপস ও আলোচনার বিষয়টি বিবেচনার জন্য প্রস্তুত হতে পারেন। সূত্র : এশিয়া টাইম্স।