বঙ্গবন্ধু ঘাতকদের হাতে নিহত হওয়ার ৬ দিন পূর্বে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতকে নিরাপদ করে গিয়েছিলেন। তার সেদিনের সেই সিদ্ধান্তে পিলে চমকে গিয়েছিলো অনেক বোদ্ধাদের।

১৯৭৫ সালে এই ৯ আগস্ট ৫টি গ্যাস ক্ষেত্র (তিতাস, বাখরাবাদ, হবিগঞ্জ, রশিদপুর ও কৈলাশটিলা) নামমাত্র মূল্যে বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে কিনে নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিলো মাত্র ৪.৫ মিলিয়ন পাউন্ড। যার উপর ভিত্তি করেই এখন দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের জ্বালানি খাত।

একইসঙ্গে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে থাকা শেল অয়েলের সব শেয়ার কিনে নেয় বাংলাদেশ। ১৮ বছরে মোট ৩৬টি কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য হিসেবে চুক্তি সম্পাদন করা হয়। অনেকে এই মূল্যকে শান্তনা মূল্য হিসেবে মনে করেন। কারণ প্রকৃত মূল্য ছিলো অনেক অনেকগুণ বেশি। জাতির জনকের কৌশলী চালে সেদিন অনেকটা বোকা বনে গিয়েছিলো বহুজাতিক কোম্পানি শেল ওয়েল।

ওই ৫টি গ্যাসক্ষেত্রে সে সময় গ্যাস মজুদ ছিল ১৩ দশমিক ৩৩৫ টিসিএফ। এ হিসেবে দেখা গেছে ২০১০ সালের জুন পর্যন্ত ৬.৫২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে, যার বাজার মূল্য ৭৯ হাজার কোটি টাকা। পুরো গ্যাসের মূল্য দাড়ায় প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। এই হিসেব ২০১০ সালের দর অনুযায়ী। বর্তমান বাজার দর হলে কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। এই গ্যাস ক্ষেত্রগুলো সেদিন কিনে নেওয়ায় স্বল্পমূল্যে গ্যাস সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে বলে মনে করে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

যে কারণে ৯ আগস্টকে দেশের জ্বালানি খাতের জন্য টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে গণ্য করা হয়। ঐতিহাসিক ওই ক্ষণকে স্মরণীয় করে রাখতে ২০১০ সালে ৯ আগস্টকে ‘জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে। এ বছর করোনাভাইরাসের কারণে ভার্চুয়াল সেমিনারসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

বঙ্গবন্ধু সরকার জ্বালানি খাতের আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেন। শত্রু সম্পত্তি হওয়ায় সিলেট ও ছাতক গ্যাস ক্ষেত্রের পরিচালনার দায়িত্ব সরকার নিজ হাতে নেয় এবং পেট্রোলিয়াম অধ্যাদেশ জারি করে।

পেট্রোলিয়াম অপারেশনের সব বিষয় পরিচালনা এবং পরিবীক্ষণের জন্য পেট্রোবাংলা গঠন করা হয়। একইভাবে কয়লাসহ কঠিন খনিজ অনুসন্ধান ও আহরণের জন্য বাংলাদেশ মিনারেল এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন গঠন করেন।

সংস্থা দুটির চেয়ারম্যানকে সচিবের পদমর্যাদা দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু পেট্রোলিয়াম কনসেশন প্রথা বিলুপ্ত করে প্রডাকশন শেয়ারিং কন্টাক্ট (উৎপাদন বণ্টন চুক্তি) প্রথা চালু করেন। ৫টি বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে সমুদ্র উপকূলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের চুক্তি করেন।

ওই সময়ই বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরকে পুনর্গঠন ও গতিশীল করা হয়। মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি প্রকল্পের আর্থ-কারিগরি সমীক্ষার জন্য পরামর্শক নিয়োগ ও আলজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, সোভিয়েত রাশিয়াসহ পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পেট্রোবাংলার কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধু যে দূরদর্শী নেতা ছিলেন এই একটি উদাহরণেই যথেষ্ট। সেই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের কারণে জাতি আজ অনেকখানি স্বস্তিতে রয়েছে।