৮৬ বছর জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার পর পুনরায় মসজিদ হিসেবে চালু হতে যাচ্ছে ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক স্থাপনা আয়াসোফিয়া। আজ শুক্রবারের জুমার নামাজের মধ্য দিয়ে এটি মসজিদ হিসেবে পুনরায় যাত্রা শুরু করবে।

এ উপলক্ষে শুধু তুর্কিরা নয় বরং সারা বিশ্বের মুসলমানদের মধ্যেই অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করছে। ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটিকে পুনরায় মসজিদ হিসেবে চালু করতে ব্যাপক জাঁকজমক পূর্ণ আয়োজন করেছে কতৃপক্ষ।

সামাজিক দূরত্ব ও ইসলামী বিধি উভয় মেনেই কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ইস্তাম্বুল দুর্দান্ত উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।

ইস্তাম্বুলের গভর্নর আলী ইয়ারলিকায়া বৃহস্পতিবার বলেন, “আমরা জানি যে আমাদের দর্শনার্থীদের আয়া সোফিয়ায় নামাজ আদায় করা সবচেয়ে বড় আকাঙ্ক্ষা”। এই চাহিদাটি সঠিকভাবে মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ইয়ারলিকায়া বলেন, মসজিদটি সকাল ১০টায় দর্শণার্থীদের জন্য খুলে দেয়া হবে এবং পরেরদিন সকাল পর্যন্ত খোলা থাকবে। যাতে প্রত্যেকেই নামাজের জন্য পর্যাপ্ত সময় পান।

তিনি আরো বলেন, প্রচণ্ড ভীড়ের জন্যে নামাজ আদায়ের পাঁচটি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে যার মধ্যে দুইটি নারীদের।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, সামাজিক দূরত্বের নিয়ম লঙ্ঘন না করে প্রত্যেককে নামাজ আদায়ের জন্য পর্যাপ্ত জায়গার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

সরকারি বরাতে জানা গেছে, ১১ চেক পয়েন্ট দিয়ে কঠোর নিরাপত্তার সাথে সেখানে প্রবেশ করতে হবে।

ইয়ারলিকায়া বলেন, দ্রুত ও সহজে মসজিদে প্রবেশের জন্য আমরা দর্শণার্থীদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছি তারা যেন কোন ধরণের ব্যাগ না নিয়ে আসেন।

গভর্নর আরো মনে করিয়ে দিয়েছেন যে দর্শনার্থীদের তাপমাত্রাও পরীক্ষা করা হবে এবং মাস্ক পরাও বাধ্যতামূলক থাকবে।

১৭টি স্বাস্থ্য পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে যেখানে ৭৩৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী ১০১টি গাড়ি ও একটি হেলিকপ্টারের সমন্বিত একটি অ্যাম্বুলেন্স ইউনিটের সাথে সক্রিয়ভাবে কাজ করবেন।

ইয়ারলিকায়া আরো জানিয়েছেন, বড় জনসমাগমের কারণে কিছু রাস্তাও বন্ধ করা হবে।

ইস্তাম্বুল মেট্রোপলিটন মিউনিসিপ্যালিটিও (আইবিবি) ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। মসজিদে যাতায়তের জন্য ২৫ টি শাটালার ট্রেন ফ্রি করে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও এই এরিয়াতে পার্কিং ফ্রি করা হয়েছে।

মিউনিসিপ্যালিটি কতৃপক্ষ ২৫ হাজার পানির বোতল, মাস্ক, জীবাণুনাশক এবং জায়নামাজ সরবরাহ করার পরিকল্পনা করেছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রায় ১,৫০০ লোক জুমার নামাজে অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

চলতি মাসের ১০ তারিখে ১৯৩৪ সালে জারিকৃত সাবেক তুর্কি সরকারের বিতর্কিত ফরমান বাতিল ঘোষণা করে আয়াসোফিয়া-কে মসজিদে রূপান্তরের পক্ষে রায় দিয়েছে তুরস্কের শীর্ষ প্রশাসনিক আদালত।

বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী আয়াসোফিয়া ষষ্ঠ শতাব্দীতে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের রাজত্বকালে নির্মিত হয়। গ্রীক অর্থোডক্স চার্চের মূলকেন্দ্র হিসাবে এই স্থাপনাটি ব্যবহৃত হয়েছিল। এবং সেখান থেকেই মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানান ষড়যন্ত্র ও কূটচাল চালাত ততকালীন বাইজেন্টাইনরা।

১৪৫৩ সালে ইস্তাম্বুল বিজয় করার পর খ্রিস্টান পাদ্রিদের থেকে নিজ অর্থায়নে আয়াসোফিয়াকে কিনেছিলেন সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহ। তারপর তিনি মসজিদের হিসেবে আয়াসোফিয়ার সম্পদকে ওয়াকফ করেন। দীর্ঘ পাঁচশত বছর এটি ছিলো মুসলিম বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ।

এরপর ১৯৩৫ সালে তুরস্কের কঠোর ধর্মনিরপেক্ষ একক-দলীয় শাসনকালে এই মসজিদটিকে যাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়। তবে জনসাধারণের দাবিতে এটি আবার মসজিদে রূপান্তরিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়ে আসছিলো।

সামাজিকভাবে জোরালো দাবি উত্থাপনের পর আইনিভাবে এটিকে পুনরায় মসজিদ হিসেবে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন এরদোগানের সরকার।

এ বিষয়ে এরদোগান বলেন, আয়াসোফিয়া-কে মসজিদে রূপান্তর করার ক্ষেত্রে তুরস্ক তার সার্বভৌমত্বের অধিকার ও ক্ষমতা ব্যবহার করেছে। এসময় সমালোচকদের প্রতি হুশিয়ার উচ্চারণ করে তিনি বলেন, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের অধিকার বাস্তবায়নে নেওয়া পদক্ষেপের সমালোচনা করা সেই দেশের স্বাধীনতার উপর আক্রমণের নামান্তর।

তিনি বলেন, যে আইনি ও সার্বভৌমত্বের অধিকার বলে ১৯৩৪ সনে আয়াসোফিয়া-কে মসজিদ থেকে জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়েছিল, সেই আইন ও সার্বভৌমত্বের আধিকার বলে পুনরায় তুর্কী জনগণের দীর্ঘ দিনের দাবি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।