আজ ঘুরে আসা যাক গ্রীষ্মের ফুলঘেরা শহরের রাস্তাগুলোয়

নবদেশ‌ ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার ১৭ই মে ২০২৫, ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ
ছবি সংগৃহীত

গ্রীষ্মের গরমে যখন হাঁসফাঁস দশা, তখন খানিকটা প্রশান্তির ছোঁয়া নিয়ে আসে ফুল। চারদিকে কেবল ফুল আর ফুল; নানা রকম ফুলের ডালি দিয়ে নগরপথকে যেন সাজিয়ে রেখেছেন প্রকৃতির দেবী। গ্রীষ্মের কঠোরতার মধ্যেও ফুলদলে মিলনের আহ্বান খুঁজে পেয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

নগরের প্রকৃতির দিকে চোখ দিলে দেখা যায়, সেই কঠোর মিলনের আহ্বান প্রখর রোদজ্বলা সব বেলাকে যেন স্নিগ্ধ-কমনীয় করে তুলেছে নগরের পথে ও বাগানে ফোটা রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া, লালচে-গোলাপি লাল সোনাইল, সোনারঙা স্বর্ণচাঁপা, বেগুনি জারুল, হলদে রঙের সোনাইল ও কনকচূড়া ফুলেরা। আরও আছে নানা রঙের কাঠগোলাপ। বসন্তে ফোটা রক্তকরবী, সাদা সুরভিমাখা কুরচি ও হিজলফুলের রেশও রয়ে গেছে।

ঢাকা শহরে কৃষ্ণচূড়ার রাজসিক রূপ দেখতে হলে যেতে হবে সংসদ ভবনের পাশের জিয়া উদ্যানের ঝিলের পাড়ে। রাস্তার দুপাশে গাছ ভরে ফুটে আছে রক্তের মতো কৃষ্ণচূড়া। বৈশাখের একটু এলোমেলো বাতাস হলেই গাছ থেকে খসে পড়ে, ফুলে ফুলে ভরে ওঠে গাছতলা। সবুজ ঘাসের ওপর সেসব ঝরা ফুল দেখে মনে হয়, কে যেন অপেক্ষা করছে। জিয়া উদ্যানের ভেতর লেকের দক্ষিণে হাঁটাপথের ধারে যে বিশাল কৃষ্ণচূড়াগাছ রয়েছে, তার নিচে দাঁড়ালে সে সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় সবচেয়ে বেশি।

একটু এগিয়ে আরও দক্ষিণ-পশ্চিমে হেঁটে গেলেই একফালি ছোট্ট জারুলবন। গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে সেই জারুলবনের তলায় ঝরে পড়া পাতার ওপর বসে থাকতে যে কী শান্তি, সেখানে না গেলে উপলব্ধি করা যাবে না। চোখ তুলে আকাশপানে তাকালেই দেখা যায়, অজস্র জারুলফুলে ভরে আছে গাছগুলোর মাথা। মনে হয়, জারুলগাছগুলো যেন বেগুনি পাড়ের সবুজ শাড়ি পরে মানুষের জন্য অপেক্ষা করছে। কাজী নজরুল ইসলামও শতবর্ষ আগে জারুলের সেই সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে লিখেছিলেন, ‘সবুজ শাড়ির ধানি আঁচল জারুল ফুলে বেগনি পাড়-/উড়িয়ে কে ওই আসল রে ভাই আকাশ-বীণায় বাজিয়ে তার!’ জারুলফুলকে কবি যেভাবে তাঁর কবিতায় উপমা হিসেবে ব্যবহার করেছেন, সেভাবে তো আমরাও দেখতে পারি।

জিয়া উদ্যানের মধ্যে লাল সোনাইল, স্বর্ণচাঁপা ও শ্বেতচাঁপাগাছ থাকলেও এর প্রস্ফুরণের সৌন্দর্য দেখতে হলে যেতে হবে জাতীয় সংসদ ভবনের পশ্চিম দিকের রাস্তায়। সেখানে ঝাড়বাতির মতো ফুটে রয়েছে সোনাইল ফুল। বিক্ষিপ্তভাবে রমনা উদ্যানেও রয়েছে কয়েকটি সোনাইলগাছ। রয়েছে জারুল চত্বরে বেশ কটি জারুল গাছ, পাশে আছে বিলেতি জারুল। বিলেতি জারুলের ফুল ফোটার সময় এখনো অবশ্য হয়নি, জারুল ফুরালে ওরা ফুটবে। তবে রমনা উদ্যানের উত্তর-পশ্চিম পাশে অনেকগুলো লাল সোনাইলগাছে যেভাবে ফুল ফোটে, তার সৌন্দর্যই আলাদা।

এর আরেক সহোদর কেসিয়া বেকারিনার অনেকগুলো গাছ রয়েছে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে সিএমএইচ উদ্যানে। অপূর্ব সেসব ফুল! যেন বাংলার চেরিফুল! কনকচূড়া ফুলের আসল শোভা দেখতে হলে যেতে হবে জাতীয় সংসদ ভবনের পূর্বদিকে মণিপুরী পাড়ার পাশের রাস্তায়। মেট্রোরেল থেকে দেখা যায়, সোনার মতো অসংখ্য ফুল ফুটে ভরে আছে গাছের ছাতিগুলো।

মেট্রোরেল থেকে কনকচূড়ার আরেকটি অসাধারণ রূপ চোখে পড়ে শাহবাগ স্টেশন থেকে কারওয়ান বাজারের মাঝখানে। সোনারগাঁও হোটেলের পাশে খালের পাড়ে ফুটে রয়েছে হলদে কনকচূড়া আর লাল কৃষ্ণচূড়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে গেলে দেখা মেলে অনেক জারুল, কৃষ্ণচূড়া ও কনকচূড়াগাছের। ধানমন্ডি লেকের পাড়ে থাকা কনকচূড়াফুলে ভরা গাছের ছায়া পড়ে ঝিলের জলে। আট নম্বর রোডের ব্রিজে দাঁড়িয়ে সে শোভা উপভোগ করা যায় প্রাণভরে।

ভাগ্য ভালো থাকলে খুব ভোরে গেলে সেখানে ঝিলের জলের ওপর ঝুঁকে থাকা কিছু হিজলফুলের বেণিও চোখে পড়তে পারে। গাছের ছায়াটা এত নিবিড় যে তার পাশে দাঁড়িয়ে মনে পড়ে কবি জীবনানন্দ দাশকে, ‘পৃথিবীর সব ঘুঘু ডাকিতেছে হিজলের বনে; /পৃথিবীর সব রূপ লেগে আছে ঘাসে; /পৃথিবীর সব প্রেম আমাদের দু-জনার মনে; /আকাশ ছড়ায়ে আছে শান্তি হয়ে আকাশে আকাশে।’