‘টাকা গুনে গুনে নেওয়া সুন্নত’ বলা চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মাহফুজুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) রাতে বিষয়টি নিশ্চত করেন চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়।

সুদীপ্ত রায় বলেন, সাময়িকভাবে এসআই মাহফুজুর রহমানকে বরখাস্ত করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ-ফরিদগঞ্জ) সার্কেল পঙ্কজ দে-কে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত দুই থেকে তিন দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থানে ‘ঘুষের টাকা গুনে গুনে নেওয়া সুন্নত’ এমন ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি জেলা পুলিশ সুপার মুহম্মদ আবদুর রকিবের নজরে আসে। পরে প্রাথমিক তদন্ত শেষে হাজীগঞ্জ থানা থেকে তাকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়।

এসআইয়ের ভাইরাল হওয়া ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, একটি দোকানে সাদা পোশাকে উপপরিদর্শক (চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থানায় কর্মরত) মাহফুজুর রহমান একটি চেয়ারে খোশ মেজাজে বসে আছেন। তিনি বলছেন, ১০ হাজার টাকা কইছি, সামনে বসে থাকা এক ব্যক্তি বলছেন, ‘সবুরে মেওয়া ফলে।’ এসআই তার দিকে মনোযোগ দিয়ে আঙুল উঁচিয়ে বলেন, এক টাকাও কম হইতো ‘ন’। সামনে বসে থাকা ব্যক্তি বলেন, ‘বস, একটু বসেন।’ এসআই তখন মুচকি হাসেন। মুখে আলতো করে হাত বুলিয়ে বলেন ‘কাম শেষ, এখন টিয়া।’

এ সময় আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘মাহফুজ ভাই, আসলে যে মুরব্বি, সে মুরব্বি বেকার মানুষ তো জানেন, বোঝেন।’ এ সময় এসআই মাহফুজ মুচকি হেসে বলেন, ‘বেকার না আকার আকার।’ তখন দ্বিতীয় ব্যক্তি বলেন, ‘যাই হোক ওনার ছেলে মেয়ে বাদ, ওনি বেকার মানুষ। ওনি আগে ড্রেজার ব্যবসা টেবসা করতো। অনেকের কাছে টাকা পাওনা ছিল, অনেকে দিলে.. এর আগে যাই দিছি দেখছেননি। ওনারে একজন দিয়ে গেছে, ওনার আবার ওষুধ-টসুধ কিনা লাগে, এরপর এই ঝামেলা লাগি গেছে।’ পরে মাহফুজ মিন মিন করে বলছেন, ‘দেন দেন।’ এসময় প্রথম ব্যক্তি বলছেন, ‘গরীব মাইনসোগো লাগি একটু দিলটা নরম করেন। যেডিন ঝামেলা আছে…’এরপর এসআই মাহফুজ আরেক ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে দ্বিতীয় ব্যক্তির দিকে হাত এগিয়ে দিলে দ্বিতীয় ব্যক্তি মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে মাহফুজের হাতে দেন।

ওই ব্যক্তি টাকা দিতে দিতে বলেন, আমি না পারতে এ পর্যন্ত আসলাম। বিশ্বাস করেন! আমি আরেকদিন এসে ডিটেইলস বলব তখন বুঝবেন। না হলে আমি আপনার কাছে আসতাম না যদি অফিসিয়ালি সলিউশন করতে পারতাম আমি। এসময় প্রথম ব্যক্তি বলেন, ‘গইন্নেননা, গইন্নেননা।’

তখন মাহফুজ বলেন, ‘টাকা গুনে নেওয়া সুন্নত।’ প্রথম ব্যক্তি বলছেন, ‘রুম অন্ধকার, আল্লাহ কইছে মাইনসেরে দেহাই কিল্লাই।’ মাহফুজ মুচকি হাসতে হাসতে টাকা গুনছেন কয়েকবার। এসময় দ্বিতীয় ব্যক্তি বলছেন ‘চা খাবেন,’ ‘পরে খাবো’ বলে টাকা হাতের মুঠে নিয়ে বের হয়ে যান মাহফুজ।

পারিবারিক কলহের জেরে ছেলের নামে থানায় অভিযোগ দিতে আসেন হাজীগঞ্জ থানার কংগাইশ গ্রামের এক বাসিন্দা। অভিযোগ দিতে এসে এসআই মাহফুজকে দিতে হয় ঘুষের প্রথম কিস্তি। তারপর ছেলের বউ ও ছেলে বাবার কাছে ক্ষমা চাইলে পরিবারিক সমস্যা মিটে যায়। তবুও এসআই মাহফুজকে দিতে হয় ঘুষের দ্বিতীয় কিস্তি। আর সেই কিস্তি নিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘টাকা গুনে গুনে নেওয়া সুন্নত।’