সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোটা আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের বিচারবিভাগীয় তদন্ত হবে এবং যাদের উসকানিতে এই প্রাণহানি, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা হবে।

জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বুধবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যায় একথা বলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শুরু করা ৭ মিনিটের ভাষণ দেন সরকারপ্রধান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলার মাটিতেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। সেদিন আরেক কারবালা বাংলার মাটিতে সৃষ্টি হয়েছিল। যারা শাহাদাৎবরণ করেছেন, আমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ নির্যাতিতা মা-বোনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।

সরকারপ্রধান বলেন, প্রিয় দেশবাসী, আজ অত্যন্ত বেদনাভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। লাখো শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছি। বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনে কাজ করেছি, করছি। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার ব্যবস্থা করে জনগণকে উন্নত জীবনযাপনের যাত্রা শুরু করেছি। অনেক সাফল্যও অর্জন করেছি। বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে একটা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছি। তারপরও আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ যখন একটু স্বস্তিতে-শান্তিতে আছে, তখন তাদের মাঝে এমন কোনো ঘটনা ঘটে যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ২০১৮ সালে ছাত্রসমাজের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সরকারি চাকরিতে কোটাপ্রথা বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করে। পরে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে কোটা বহাল রাখার পক্ষে উচ্চআদালত ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্রকে বাতিল করে দেয়। সরকারের পক্ষ থেকে পরিপত্র বহাল রাখার জন্য সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করা হয় এবং মহামান্য আদালত শুনানির দিন ধার্য করেন। এ সময় ছাত্ররা কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে আবারও আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের শুরু থেকেই সরকার যথেষ্ট ধৈর্য ও সহনশীলতা প্রদর্শন করেছে। বরং আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা  নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পুলিশ সহযোগিতা করে। মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যখন আন্দোলনকারীরা স্মারকলিপি প্রদান করার ইচ্ছে প্রকাশ করে, সেক্ষেত্রে তাদের সুযোগ করে দেওয়া হয় এবং  নিরাপত্তারও ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, কিছু মহল এই আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে অনাকাঙ্খিত উচ্চভিলাসী চরিতার্থ করার জন্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। এর ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ঘটনা ঘটেছে, তা খুবই বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক। অহেতুক কতগুলো মূল্যবান জীবন ঝরে গেল। আপনজন হারানোর বেদনা যে কতো কষ্টের তা আমার থেকে ভালো আর কে জানে? হত্যাকাণ্ডের বিচারবিভাগীয় তদন্ত হবে এবং যাদের উসকানিতে এই প্রাণহানি, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা হবে।

এই ঘটনায় যাঁরা নিহত হয়েছে তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তাদেরকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন এবং সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।