বাংলাদেশি নাগরিকদের অতি সংবেদনশীল এবং ‘ক্লাসিফায়েড’ তথ্য অনলাইনে বিক্রি করেছে পুলিশের দুই কর্মকর্তা। ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) ডাটাবেইজে প্রবেশ করে এসব তথ্য নিজেদের দখলে নিয়েছিলেন তারা।
ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন- অ্যান্টিটেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) পুলিশ সুপার ফারহানা ইয়াসমিন এবং র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন-৬ (র্যাব) এর সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) তারেক আমান বান্না।
আইনশৃংখলা রক্ষাকারী এই দুই ইউনিটের প্রবেশাধিকার বন্ধ করাসহ দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে এনটিএমসি।
শুক্রবার (৭ জুন) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এনটিএমসি’র মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান।
জানা যায়, পুলিশ সুপার ফারহানা ইয়াসমিন এবং এএসপি তারেক আমানের আইডি থেকে ন্যাশনাল ইন্টিলিজেন্ট প্ল্যাটফর্মে (এনআইপি) প্রবেশ করা হয়। সেখান থেকে নাগরিকদের অতি সংবেদনশীল এবং ক্লাসিফায়েড গোপনীয় তথ্য নেওয়া হয় যার মধ্যে আছে জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যবহৃত মোবাইল হ্যান্ডসেটের তথ্য, কল রেকর্ডস, ক্রিমিনাল প্রোফাইলসহ বিভিন্ন ধরনের তথ্য।
বিষয়টি এনটিএমসি’র নজরে এলে সংস্থাটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ বাকের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন নিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর একটি চিঠি দেন। গত ২৮ এপ্রিল প্রেরিত ঐ চিঠিতে দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়।
প্রযুক্তিবিষয়ক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম টেকক্রাঞ্চে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বাকের বলেন, ‘বিডি সাইবার গ্যাং’ নামক টেলিগ্রাম চ্যানেলসহ একাধিক টেলিগ্রাম চ্যানেল, ফেসবুক গ্রুপ এবং হোয়াটস অ্যাপে সংগৃহীত তথ্য বিক্রি করা হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা এসব গ্রুপের এডমিনদের তথ্য সরবরাহ করতেন। ইন্টারনেটে বিক্রির বিষয়টি সেসব এডমিনরা দেখভাল করতেন। তবে ঠিক কত সংখ্যক নাগরিকের কী পরিমাণ তথ্য এভাবে অনলাইনে বিক্রি হয়েছে সে বিষয়ে নিশ্চিত করতে পারেননি জেনারেল বাকের।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বিগত ২৫ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে এসব তথ্য সংগ্রহ করেছেন এসপি ফারহানা এবং এএসপি তারেক। ২৫ এপ্রিল রাত ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে ‘ডাটা ব্রিচ’ এর তথ্য জানতে পারে এনটিএমসি।
এনটিএমসি’র একটি সূত্র জানায়, ৪২টি সরকারি সংস্থার প্রায় পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তা এনআইপি’তে প্রবেশাধিকার পান। বিভিন্ন সরকারি সেবা এবং তদন্ত সংশ্লিষ্ট কাজে প্রবেশাধিকার প্রয়োজন হয় তাদের। এনআইপি’তে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য এবং কল ডিটেইল রেকর্ড (সিডিআর) থাকে। প্রবেশাধিকার প্রাপ্ত কর্মকর্তারা নিজেদের ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে এই পোর্টালে প্রবেশ করেন।
লগ সার্ভার বিশ্লেষণ করে ফারহানা এবং তারেকের আইডি থেকে অস্বাভাবিক লগ-ইন দেখতে পায় এনটিএমসি।
এ বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে তথ্য বিক্রির প্রমাণ পায় এনটিএমসি। এর প্রেক্ষিতে দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি এনআইপি’তে পুলিশের এটিইউ এবং র্যাব-৬ এর প্রবেশাধিকার বন্ধ রেখেছে এনটিএমসি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এনটিএমসি’র ডিজি মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। সংস্থাটির এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি সঠিক। আমাদের নজরে এলে এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের আগ পর্যন্ত ঐ দুই সংস্থার প্রবেশাধিকার (সাময়িকভাবে) বন্ধ রাখা হয়েছে। দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পুলিশ এবং র্যাবকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানি।
এদিকে, এসপি ফারহানা ইয়াসমিন এবং এএসপি তারেক আমানকে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়ার বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে টেকক্রাঞ্চকে জানিয়েছে এনটিএমসি পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বারেক। তবে এনটিএমসি’কে দেওয়া এক চিঠিতে পুলিশের এটিইউ থেকে দাবি করা হয়, এসপি ফারহানা ইয়াসমিনের আইডি ব্যবহার করে সেসব তথ্য সংগ্রহ ও বিক্রি করেছেন দুই কনস্টেবল।
তারা হলেন- সাইবার ক্রাইম উইং এর কনস্টেবল মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী এবং অপারেশন্স উইং এর খায়রুল ইসলাম। ঐ দুই কনস্টেবলকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে এটিইউ।