ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। এতে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৪০ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। গাছ পড়ে, লাইন ছিঁড়ে অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক এলাকায় পূর্ব সতর্কতা হিসেবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) এক পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দুর্ঘটনা এড়াতে ১৪টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ২৫ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর বিদ্যুৎ কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় শেষ হওয়ার পরপরই যাতে দ্রুত বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যায় সেই লক্ষ্যে প্রত্যেকটি সমিতির কর্মীরা প্রস্তুত রয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎহীন এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে- পটুয়াখালী, বাগেরহাট, ভোলা, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, ঝালকাঠি জেলা। পটুয়াখালীতে ছয় লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। বাগেরহাটে ৪ লাখ ৫০ হাজার ও ভোলা জেলায় ৪ লাখ ২৫ হাজার গ্রাহক এবং ৩ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক সুশান্ত রায় বলেন, জেলায় ৪ লাখ ৮৫ হাজারের বেশি গ্রাহক রয়েছেন।

সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার জিয়াউর রহমান জানান, আমরা জুম মিটিং করে প্রতিটি অফিসে প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছি। আমরা সাধারণত তিন ধরনের প্রস্তুতি নেই, ঝড় আসার আগে ও ঝড়ের সময় এবং ঝড় পরবর্তী সময়ে করণীয়। ঝড় আসার আগে আমরা মোবাইলে চার্জ দিয়ে রাখতে বলি সবাইকে, মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় মালামাল সংগ্রহ করে রাখা হয়, যারা স্ট্যান্ডবাই থাকবেন, তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।

এদিকে, ঝড়ের সময় যাতে কেউ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট না হয়, সেজন্য মাইকিং করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি আমরা চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে রাখছি। যাতে করে তাদের এলাকায় বিদ্যুতের তারের ওপরে গাছ পড়লে, তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা যায়।

দমকা ঝোড়ো হাওয়ায় পল্লী বিদ্যুতের মূল সঞ্চালন লাইনের বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়েছে। এতে কমবেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দুর্যোগ শেষ হলে লাইনে কাজ করে বিদ্যুৎসংযোগ পুনরায় চালু করা হবে। এদিকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। মোবাইল কোম্পানিগুলো বিকল্প উপায়ে নেটওয়ার্ক চালু রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে, বিদ্যুৎ বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় রেমাল বা অন্য কোনো কারণে বিচ্ছিন্ন বৈদ্যুতিক লাইন যাতে কেউ স্পর্শ না করে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা এবং ছেঁড়া বৈদ্যুতিক তার দেখলে দ্রুত নিকটবর্তী বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বাপবিবো) ও ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) খুলনা এবং বরিশাল অঞ্চলে কোনো পদ খালি থাকলে দ্রুত একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব প্রদান করা, বিদ্যুৎ সংযোগ যথাসময়ে বিচ্ছিন্ন করা, খুলনা এবং বরিশাল অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে বাপবিবো ও ওজোপাডিকোর কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি প্রয়োজনে বাতিল করা, সরকারের উন্নয়নমূলক কাজগুলো ঘূর্ণিঝড় রিমালের অভিঘাত থেকে রক্ষা করা এবং ঘূর্ণিঝড় রিমাল বিষয়ক কাজে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত জনবল প্রস্তুত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও বিদ্যুৎ সংক্রান্ত যে কোনো প্রয়োজনে ১৬৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সেন্ট্রাল কন্ট্রোলরুমের নম্বর ০১৭৯২-৬২৩৪৬৭, ০২-৮৯০০৫৭৫, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির বরিশাল অঞ্চলের ০১৭১৩-৮৫০২১৮, খুলনা অঞ্চলের ০১৭১৩-৮৫০২১১, পটুয়াখালী অঞ্চলের ০১৭১৩-৮৫০২১৯-এ নম্বরগুলো সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে। তাছাড়া পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির প্রতিটি জেলায় কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে।