শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম অনেক পুরোনো। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। যাদের সুঁই-সুতায় টুকরো কাপড় জোড়া লেগে তৈরি পোশাকের অর্থনীতি আজ সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা পেরিয়েছে, তারাই আজ আন্দোলন করছেন যৌক্তিক মজুরির দাবিতে। নিয়মানুযায়ী ৫ বছর পরপর শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়নের লক্ষ্যে নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করে আসছে সরকার। ২০১৮ সালের পর চলতি বছর সপ্তমবারের মতো এ বোর্ড গঠন করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় বোর্ডের ষষ্ঠ সভায় আগামী ৫ বছরের জন্য তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য মজুরি চূড়ান্ত হতে পারে। তবে নিম্নতম মজুরি ঠিক কত টাকা নির্ধারণ করা হবে, সে বিষয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলেও
মালিকপক্ষ ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকার প্রস্তাব দিতে পারে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। তাই এবার ন্যূনতম মজুরি কত শতাংশ বাড়ানো বা কত হবে, সে দিকে তাকিয়ে আছেন ৪০ লাখ শ্রমিক ও তাদের পরিবারের আনুমানিকক ৫ কোটি সদস্য।
জানা গেছে, দেশের পোশাক কারখানায় কর্মরত শ্রমিক সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ। তাদের দাবি, মালিক পক্ষের ১০ হাজার ৪০০ টাকার মজুরির প্রস্তাব বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে গ্রহণযোগ্য নয়। তারা ২৩ থেকে ২৫ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরির দাবিতে আন্দোলন করছেন। যদিও মজুরি বোর্ডে শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি ২০ হাজার ৯৯৩ টাকা মজুরি প্রস্তাব করেছেন, যা মানতে চাচ্ছে না মালিক পক্ষ। তবে আগের প্রস্তাব থেকে সরে এসে মজুরি বাড়াতে রাজি হলেও ঠিক কতটা বাড়ানো হবে, তা বোর্ড সভায় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন মালিক পক্ষের প্রতিনিধি বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান।
অন্যদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, শ্রমিক, মালিক ও সরকার প্রতিনিধি মজুরি বোর্ডে বসে গ্রহণযোগ্য সমাধানে আসতে হবে। সে ক্ষেত্রে মতপার্থক্য থাকলে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে সমাধান হতে পারে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা বিভাগের প্রধান খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, শ্রমিকদের যে দাবি সেটি তাদের সমস্যা হিসেবে না দেখে বরং মালিক পক্ষের প্রস্তাবনার দুর্বলতা হিসেবে দেখা প্রয়োজন। মালিক পক্ষের প্রস্তাব যদি ডলার (মার্কিন) হিসাবে দেখা হয়, তাহলে ২০১৮ সালে ৮ হাজার টাকা। তখন ডলারের দাম ছিল ৮৪ টাকা। সেই সময়ে ৮ হাজার টাকায় ৯৪ ডলার হতো। এখন ১০ হাজার ৪০০ টাকা যদি মজুরি হয়—১১০ টাকা ডলার হিসাবে মজুরি দাঁড়ায় ৯৫ ডলার। অর্থাৎ মালিক পক্ষের প্রস্তাবে মাত্র ১ ডলার বেড়েছে। সুতরাং এ ধরনের প্রস্তাব কোনো ধরনের মূল্য বহন করে না। সেজন্য মালিক পক্ষকে একটি যৌক্তি প্রস্তাবনা দিতে হবে। যাতে সেটির ওপরে আলাপ-আলোচনা হয়। আর যদি সমস্যার সমাধান না হয়, সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেলেও যেতে পারে।
নিম্নতম মজুরি বোর্ড ও নিম্নতম মজুরি কাঠামো: ১৯৮৬ সালের পোশাক শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ছিল ৬২৭ টাকা। ১৯৯৪ সালে তা ৪৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৯৩০ টাকা করা হয়। এরপর ২০০৬ সালে ৭৮ দশমিক ৭১ শতাংশ বাড়িয়ে ১ হাজার ৬৬২ টাকা, ২০১০ সালে ৮০ দশমিক ৫১ শতাংশ বাড়িয়ে ৩ হাজার টাকা, ২০১৩ সালে ৭৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ হাজার ৩০০ টাকা এবং ২০১৮ সালে ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়।