রাজধানীর বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় তখন রুদ্ধশ্বাস পরিবেশ। গ্যালারিতে পিনপতন নীরবতা। খেলার বাকি ইনজুরি সময়ের ৬ মিনিট। বাংলাদেশ এগিয়ে ২-১ গোলে।
কিন্তু ভয়ের কারণ ছিল, একজন খেলোয়াড় কম থাকায়। ৬০ মিনিটে জুনিয়র সোহেল রানা দ্বিতীয় হলুদ কার্ড (লাল কার্ড) দেখে মাঠ ছাড়ার পরই। তবে শেষ পর্যন্ত ১০ জনের বাংলাদেশই প্রবল প্রতিপক্ষ মালদ্বীপকে হারিয়ে জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দ্বিতীয় পর্বে।
এ ম্যাচটি ছিল বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য কঠিন এক পরীক্ষা। হারলে কেবল বিশ্বকাপের বাছাইয়ের প্রথম পর্ব থেকেই বাদ পড়তো না, আগামী প্রায় এক বছরের জন্য সুযোগ হারাতো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ।
যে কারণে বাফুফে সভাপতি খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করতে পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন এক কোটি টাকা। রাকিব, ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের গোলে বাংলাদেশ দল দারুণ এক জয় নিয়ে টিকে থাকলো বিশ্বকাপ বাছাইয়ে।
রাকিব হোসেনের দেওয়া ১১ মিনিটের গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। বাম দিক থেকে ফয়সাল আহমেদ ফাহিম ক্রস নিলে চলন্ত বলে ডান পায়ের প্লেসিংয়ে মালদ্বীপের জাল কাঁপিয়ে দেন রাকিব। তবে অতিথি দলটি বিরতির আগেই ফিরে আসে ম্যাচে। ৩৬ মিনিটে গোল করে মালদ্বীপ।
২৯ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করার সহজ সুযোগ হাতছাড়া করে বাংলাদেশ। লিড এনে দেওয়া রাকিব গোলরক্ষককে একা পেয়েছিলেন। তবে তিনি সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। মালদ্বীপের গোলরক্ষক হুসাইন শারিফী ডান পায়ে কোনোমতে দলকে বিপদমুক্ত করেন।
৩৩ মিনিটে মালদ্বীপের হামজা মোহাম্মদের কোনাকুনি নেওয়া শট গোলরক্ষক মিতুল মারমা কর্নারের মাধ্যমে রুখে দেন। দুই মিনিট পর বাংলাদেশ ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছিল। ডান দিক থেকে জামাল ভূঁইয়ার ক্রসে চলন্ত বলে প্লেসিংয়ের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বলটি উঠে গেলে ফিস্ট করে বাইরে পাঠিয়ে দেন মালদ্বীপের গোলরক্ষক হুসাইন শরিফী।
ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ বাংলাদেশ কাজে লাগাতে না পারলেও মালদ্বীপ ঠিকই ৩৬ মিনিটে ম্যাচে ফিরে আসে। হামাজ মোহাম্মদের কর্নার থেকে আইসাম ইব্রাহিম হেডে গোল করেন।
দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরুর দ্বিতীয় মিনিটে আবার এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। এবার গোলদাতা ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। বাম দিক থেকে সাদ উদ্দিনের ক্রস পান্স করেছিলেন মালদ্বীপের গোলরক্ষক। বল জুনিয়র সোহেল রানার পা হয়ে চায় কাছে দাঁড়ানো ফাহিমের কাছে। ফাহিম সুযোগ নষ্ট করেননি। সহজেই গোল করে লিড এনে দেন দলকে।
৬০ মিনিটে ১০ জনের দলে পরিণত হয় বাংলাদেশ। জুনিয়র সোহেল রানা মালদ্বীপের খেলোয়াড়কে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। তবে পরের মিনিটেই ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। ডান দিক থেকে উড়ে আসা ক্রসে ছোট বক্সের মাথায় বল পেয়েও ঠিকঠাক শট নিতে পারেননি ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। বল চলে যায় বাইরে।
৭৯ মিনিটে ফাহিম একক প্রচেষ্টায় বক্সের মাথায় গিয়ে যে শট নিয়েছিলেন তা বাইরে চলে যায় ক্রসবার ঘেঁষে। ৮৭ মিনিটে হাসান ছোট বক্সে বল পেয়ে শট নিতে না পারায় ম্যাচে ফেরার সুযোগ হারায় মালদ্বীপ।
ম্যাচ শেষ হওয়ার এক মিনিট আগে বাংলাদেশের রাকিবকে মারাত্মক ফাউল করলে রেফারি আহনাফ রাশিদকে লালকার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেন। এর পরপরই রেফারি লম্বা বাঁশি বাজিয়ে খেলার ইতি টানলে উল্লাসে ফেটে পড়েন গ্যালারির দর্শকরা। রাকিব, ফাহিম, সাদউদ্দিনরা লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে মাঠের চারদিক প্রদক্ষিণ করেন।
এই জয়ে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দ্বিতীয়পর্বে নাম লিখিয়েছে জামাল ভূঁইয়ার দল। দ্বিতীয় পর্বে বাংলাদেশ খেলবে ‘আই’ গ্রুপে অস্ট্রেলিয়া, ফিলিস্তিন ও লেবাননের বিপক্ষে।
বাংলাদেশ একাদশ
মিতুল মারমা (গোলরক্ষক), বিশ্বনাথ ঘোষ, কাজী তারিক রায়হান, সাদ উদ্দিন, শাকিল হোসেন, জামাল ভূঁইয়া (মজিবর জনি) , মো. হৃদয়, সোহেল রানা, মো. সোহেল রানা (লালকার্ড), ফয়সাল আহমেদ ফাহিম (মুরাদ হাসান) ও রাকিব হোসেন।