নুডুলস ছোট-বড় সব বয়সের মানুষের জন্য উপকারী। নুডুলস তৈরি হয় আটা, ময়দা, আলু, মিষ্টি আলু, বিভিন্ন ধরনের ডাল দিয়ে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের নুডুলস পাওয়া যায়।
আমাদের দেশে আটা, ময়দা দিয়ে তৈরি নুডুলস পাওয়া যায় বেশি। ছয় মাস পর্যন্ত শিশুদের শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত। ছয় মাসের পর যেসব শিশুরা ভাত, তরকারি ও সবজি চিবিয়ে খেতে পারে, তাদেরকে নুডুলস দেওয়া যাবে।
নুডুলসের মধ্যে আছে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট, আমিষ, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ফাইবার বা আঁশ জাতীয় উপাদান ও বিভিন্ন ধরনের খনিজ লবণ, স্নেহ বা চর্বি জাতীয় উপাদান।
শর্করা বা কার্বোহাইড্রেটের প্রধান উপাদান হলো গ্লুকোজ বা চিনি। যা আমাদের শক্তি যোগায়, মস্তিস্ককে সুষ্ঠু ভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়িয়ে তোলে। দেহের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলোকে পুষ্টি যোগায় শর্করা জাতীয় খাবার।
নুডুলসের ভিটামিন বি কমপ্লেক্স আমাদের দেহে লোহিত রক্ত কণিকা তৈরি করে। আমাদের পা থেকে মাথা পর্যন্ত আছে অসংখ্য স্নায়ু। দেহের স্নায়ুগুলোকে শক্তিশালী করে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। দেহের শিরা ও উপশিরাতে অক্সিজেনের সরবরাহ বৃদ্ধি করে। পরিণামে রক্ত সঞ্চালনের গতি ঠিক থাকে।
শর্করা ও আমিষ জাতীয় খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। শিশু কিশোররা সাধারণত সবজি খেতে চায় না। অসংখ্য শিশু কিশোর কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন। নুডুলস কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়। নুডুলসের ফাইবার জাতীয় উপাদান শুধুমাত্র ছোট নয়, বড়দেরও দীর্ঘ সময় পেট ভরে রাখতে সাহায্য করে।
তবে ছোট বড় সবারই শুধু মাত্র নুডুলস না খেয়ে, নুডুলসের সাথে বাদাম সবজি মাংস কলিজা মিশিয়ে খেলে, সেটা হবে ভীষণ উপকারী খাবার। ছোটরা সবজি খেতে চায় না। শিশু বয়স থেকেই সবজি খাবার অভ্যাস গড়তে হবে। নুডুলস এর সাথে বাদাম, মাংস, কলিজা, সবজি মিশিয়ে শিশু কিশোরকে খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে।
শিশু-কিশোরদের জন্য মুরগির মাংশ ভীষণ পুষ্টিকর খাবার। মাংসের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন বা আমিষ। যা আমাদের শক্তি যোগায়, মাংশপেশি ও হাড়কে করে মজবুত। মেধা বিকাশে সাহায্য করে। রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে বাড়িয়ে তোলে।
নুডুলস নিয়মিত মাখন বা ঘি দিয়ে তৈরি না করে মাঝে মাঝে ঘি বা মাখন দেওয়া উচিত। মাখন বা ঘি এর মধ্যে আছে উচ্চ মাত্রার ক্যালোরি, ক্যালসিয়াম, খনিজ লবণ, আমিষ, ভিটামিন ডি, আয়রন, সোডিয়াম ক্লোরাইড, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও বহুবিধ পুষ্টি।
এখনকার শিশু কিশোরদেরকে লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সৃজনশীল কাজে সংযুক্ত থাকতে হয়। সঠিক খাবারের অভাবে তাদের দেহে পুষ্টির ঘাটতি তৈরি হয়। মেয়োনিজ ঘি মাখন তাদের মেধা বিকাশের সহায়ক হবে। তবে অতি মাত্রায় ঘি মাখন তাদের ওজন বাড়িয়ে তুলবে।
অতি মাত্রায় ওজন সব বয়সী মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। শিশু কিশোর বয়স থেকেই বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী মাত্রাতিরিক্ত ওজন হলে, সেসব শিশু কিশোর কিশোরি পরবর্তিতে দ্রুত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাই কোলেস্টেরল, ফ্যাটিলিভার, বন্ধাত্বের সমস্যাসহ আরও বহুবিধ অসুখে আক্রান্ত হয়।
তাই শুধু নুডুলস নয়, যে কোনো ফ্রোজেন খাবার এর জন্য নিয়মিত ঘি মাখন বাদ দিয়ে মাঝে মাঝে দিতে হবে। তবে শিশু ও বাড়ন্ত বয়সের ছেলে মেয়েদেরকে নিয়মিত দুধ ডিম মাছ মাংস বিভিন্ন রকমের শাক সবজি ও ফল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
নুডুলস ভীষণ পুষ্টিকর খাবার। তবে প্রতিদিন শিশুকে শুধু নুডুলস খাওয়ালে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি হবে। নুডুলসের প্রধান উপাদান আটা-ময়দা। তাই এই খাবার ছোট-বড় সবারই ওজন বাড়াবে। আর তৈরি করবে পুষ্টিহীনতা। এই জন্য নুডুলসের সাথে বহু রকম সবজি বাদাম মেশাতে হবে।
বাদাম সব বয়সীদের জন্যই খুব উপকারী। বাদামে আছে ক্যালসিয়াম আয়োডিন, আয়রন বিভিন্ন রকমের খনিজ লবণ ও দেহের জন্য উপকারী ফ্যাট। বাদাম হৃদপিণ্ডকে ভালো রাখে। দেহের কাটা ছেঁড়া শুকাতে সাহায্য করে। বাড়ন্ত শিশু ও কিশোরদের দাঁত চুল হাড় নখের পুষ্টি ও বৃদ্ধির জন্য বাদাম অপরিহার্য।
বাজারে তেলে ভাজা বিভিন্ন ধরনের বাদাম পাওয়া যায়। তেলে ভাজা বাদামের পরিবর্তে খোশা ছাড়ানো বাদাম, কাঠ বাদাম, কাজু বাদাম সব বয়সের মানুষের জন্য ভীষণ পুষ্টিকর। যেসব শিশু কিশোর অধিক ওজন সম্পন্ন তাদেরকে বাদাম অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত। কারন বাদাম ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
নুডুলসের মধ্যে টেস্টিং সল্ট যতটা কম ব্যবহার করা যায়, ততটাই ভালো। অতি মাত্রায় টেস্টিং সল্ট রক্তে চর্বির মাত্রা বড়িয়ে দেয়। তখন মানুষ উচ্চরক্তচাপ, ডায়বেটিস, ফ্যাটিলিভারের দিকে এগিয়ে যায়।
বিভিন্ন শপিং মল বা মার্কেটে তৈরি করা নুডুলসের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। নুডুলস ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। তাই অভিভাবককে অবশ্যই শিশু কিশোরকে শুধু নুডুলস নয়, সব ধরনের খাবারের পাশাপাশি নিয়মিত খেলাধুলা করতে হবে। খেলাধুলা শিশু কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য।