বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ার পর আজ (বুধবার) মুখ খুললেন তামিম ইকবাল। নিজের অফিসিয়াল ফেসবুকে একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন দেশসেরা এই ওপেনার। ১২ মিনিটের সেই ভিডিওর শেষে তামিম অনুরোধ করেছেন তাকে মনে রাখতে। কেউ যেন তাকে ভুলে না যায় সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন।
বিশ্বকাপ দলে না থাকা ও বিসিবির সঙ্গে তামিমের পুরো যোগাযোগপ্রক্রিয়া শুরুতেই তুলে ধরেন টাইগারদের এই দেশসেরা ওপেনার। ভিডিও বার্তার শেষদিকে তামিম সকলের উদ্দেশে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করেন, ‘একটাই রিকুয়েষ্ট করবো সবাইকে- আমাকে মনে রাইখেন, ভুলে যাইয়েন না। এর আগে ভিডিওর শুরুতে তামিম বলেন, ‘যে জিনিস ঘটেছে, সেটা আমি আপনাদের পুরো ধাপে ধাপে জানাতে চাই। কারণ আমার কাছে মনে হয়েছে এটা আমার ভক্ত বা ক্রিকেটপ্রেমিদের জানা দরকার। গত জুলাইয়ে আমি অবসর নিই, সেটার একটা কারণ ছিল। পরে প্রধানমন্ত্রীর চাওয়াতে ফিরে আসি। পরের দুই মাসে প্রচণ্ড কষ্ট করেছি। এরকম কোনো সেশন বা ব্যয়াম নাই উনারা চেয়েছে, আমি করিনি।’
‘খেলাটা যখন কাছাকাছি আসলো, আমি খুব বেশি খুশি ছিলাম না যা কিছু ঘটেছে শেষ চার-পাঁচ মাসে। যখন আমি খেলা শুরু করলাম ৩০-৩৫ ওভারের মতো ফিল্ডিং করলাম। দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগ আসলো, কিন্তু আমি সম্ভাব্য সেরাটা করেছি। ওই মুহূর্তে দরকার ছিল কিছু রান করা, ব্যাটিংটা কেমন হচ্ছে দেখা। ওই ম্যাচের পর আমি অনেক খুশি ছিলাম। শেষ চার পাঁচ ম্যাচে যা হয়েছে এগুলো মাথায় ছিল না। আমি বিশ্বকাপ খেলার দিকে তাকিয়ে ছিলাম’, যোগ করেন তামিম।
তিনি বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের পর মানসিকভাবে আমি খুব খুশি ছিলাম। গত চার-পাঁচ ম্যাচের যত বিষয় সব ভুলে গিয়েছিলাম। ম্যাচ শেষে আমার ইনজুরির অবস্থা ফিজিওকে জানাই। তখন ড্রেসিংরুমে নির্বাচকরা আসেন। আমি তাদের বলেছিলাম, আমার অবস্থা সামনে এমনই থাকবে। আমাকে দলে রাখলে বিষয়টি মাথায় রাখবেন। হোটেলে যাওয়ার পর আমাকে ফিজিও পর্যবেক্ষণ করেন। এরপর ফিজিওর রিপোর্টে কী ছিল তাও পরিষ্কার করে দেন তামিম, ‘ফিজিও’র রিপোর্টে ছিল প্রথম ম্যাচের পরে আমার ব্যথার অবস্থা কী, দ্বিতীয় ম্যাচের পর কী হয়েছে। সেক্ষেত্রে ২৬ তারিখের (নিউজিল্যান্ড সিরিজের শেষ ম্যাচ) ম্যাচের দিন অবস্থা কেমন হতে পারে। রিপোর্ট অনুযায়ী, খেলার জন্য আমি প্রস্তুত। তবে আমাকে বলা হয়েছিল আমি রেস্ট নিতেও পারি।’
কিউইদের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডেতে রেস্ট নেওয়ার বিষয়ে দেশসেরা ওপেনার বলেন, ‘শেষ ম্যাচটায় রেস্ট নিলে সেক্ষেত্রে আমার প্রস্তুতি ম্যাচের জন্য রিহ্যাভ হয়ে যেত এবং বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচও আমি খেলতে পারবো এমনটা ছিল রিপোর্টে। আমি কোথাও বলিনি যে, পাঁচটা ম্যাচ খেলবো বা পাঁচ ম্যাচ খেলতে পারবো। এটা মিথ্যা। জানিনা কিভাবে এটি মিডিয়াতে ছড়ানো হয়েছে। শুধু তিন নির্বাচককে জানিয়েছিলাম আমি ফিট না, দল ঘোষণার সময় যেন এটা মাথায় রাখেন।’
‘আমি নিশ্চিত কালকে নান্নু ভাইও কথাটা ক্লিয়ার করছে। আমি জানি না এই কথাটা মিডিয়াকে খাওয়ানো হলো বা কে করছে, কিন্তু এই জিনিস একদমই মিথ্যা। যে জিনিস আমি নির্বাচকদের বলেছিলাম যে আমার শরীর এরকমই থাকবে। এখন যেরকম অবস্থায় আছে। আমার ব্যথা থাকবে। আপনারা যখন দলটা নির্বাচন করবেন, তখন এটা মাথায় রাখবেন।’
তামিম আরও বলেন, ‘আমি কোনো কন্ট্রোভার্সি চাইনি। বিশ্বকাপের মাঝেও যেকোনো ঘটনা ঘটতে পারে, তাই যাতে কোনো ঝামেলা না হয় তাই আগেই জানিয়ে রেখেছিলাম।’
বিসিবির পক্ষ থেকে মিডল অর্ডারে খেলার প্রস্তাবও দেওয়া হয় বলে জানান তামিম, ‘বোর্ডের টপ লেভেল থেকে একজন ফোন করে আমাকে বললো, ‘তুমি বিশ্বকাপে যাবা, কিন্তু তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলাতে হবে। একটা কাজ করো, তুমি প্রথম ম্যাচ খেলিও না। ‘‘আমি বলেছি, এখনো ১২/১৩ দিন সময় আছে। এই সময়ের মধ্যে তো আমি ভালো অবস্থায় থাকবো। তো কি কারণে খেলবো না?’’ তখন বললো, ‘’আচ্ছা তুমি যদি খেলো তাহলে আমরা পরিকল্পনা করছি, তুমি নিচের দিকে খেলবা।’’
‘তাদের প্রস্তাব শুনে আমি তো অবাক, জিজ্ঞেস করলাম এটা কোন ধরনের কথা। এরপর বলা হলো মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করানোর কথা। অথচ আমি ১৭ বছর ধরে এক পজিশনে খেলে আসছি। আমাকে জোর করে করে অনেক জায়গায় বাধা দেয়া হচ্ছে, ইচ্ছে করে। এটা ঠিক হলো এখন নতুন আরেকটা জিনিস বলি। এটা আমি অনুভব করেছি। এসব নোংরামি, আমি কোনো নোংরামির মাঝে থাকতে চাই না। এরপর ব্যক্তিগত নানা জায়গা থেকেও আমাকে এসব কথা বলা হলো’, আরও যোগ করেন তামিম।