ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ কথা সবারই জানা, তবুও ধূমপায়ীরা তা গ্রাহ্য করেন না। ধূমপান একটি রোগ নয় বরং কঠিন ক্যানসার, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ফুসফুসের রোগ, ডায়াবেটিস ও দীর্ঘস্থায়ী অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিসি (সিওপিডি)সহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
এমনকি যক্ষ্মা ও চোখের রোগেরও ঝুঁকি বাড়ায় ধূমপান। এটি স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ক্ষতিকর, ঠিক তেমনই ধূমপায়ীর আশপাশে যারা থাকেন তারাও পরোক্ষ ধূমপানের কারণে নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারেন।
২০২২ সালে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৭ মিলিয়ন ব্যক্তি ধূমপানের কারণে বিভিন্ন অসুখে ভোগেন। আরও ১.২ মিলিয়ন মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের কারণে বিভিন্ন সমস্যায় ভোগেন।
আজ বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। প্রতিবছর বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস পালিত হয় ধূমপানের ক্ষতিকারক স্বাস্থ্যগত প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ও মানুষকে ধূমপান ত্যাগে উৎসাহিত করতে।
যেহেতু বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায় ধূমপান, এ কারণে ডাক্তার যদি জানেন রোগী ধূমপায়ী সেক্ষেত্রে প্রথমেই তাকে ধূমপান ছাড়ার পরামর্শ দেন।
এ বিষয়ে ভারতের কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতাল এবং বি কে রায় রিসার্চ সেন্টার লিমিটেডের অনকোলজি বিভাগের ক্লিনিক্যাল ডিরেক্টর মধুচন্দ কর জানিয়েছেন, ঠিক কী কারণে এ পরামর্শ দেওয়া হয়-
হাঁপানির সমস্যা আরও বাড়ায়
ধূমপান সরাসরি ফুসফুসকে প্রভাবিত করে। এটি শ্বাসনালি ও ফুসফুসের ছোট বায়ু থলির (অ্যালভিওলি) ক্ষতি করে। ফলে ফুসফুসের বিভিন্ন ব্যাধি যেমন- সিওপিডি, যা এমফিসেমা ও দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কাইটিসের কারণ।
যাদের হাঁপানি আছে তাদের জন্য ধূমপান অত্যধিক ক্ষতিকর। ধূমপান ত্যাগ করলেই আপনার ফুসফুসের স্বাস্থ্যও ভালো হতে শুরু করে। ফলে শ্বাস নেওয়া ও দীর্ঘক্ষণ শ্বাস ধরে রাখার ক্ষমতাও আরও বাড়ে।
প্রজনন স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি করে
তামাক সেবন গর্ভাবস্থায় ও সন্তান ধারণের সমস্যা বাড়ায়। আবার গর্ভাবস্থায় তামাকের ব্যবহার শিশুর ফুসফুস ও মস্তিষ্কের ক্ষতি করে।
ফলে হঠাৎ গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে। ধূমপান ত্যাগ করলে অকাল প্রসবের ঝুঁকি কমে আবার ভ্রূণের বিকাশও ঘটে সঠিকভাবে।
শরীরের প্রদাহ কমে
স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি আরও উন্নত হবে, যদি আপনি ধূমপান ছেড়ে দেন। ধূমপানের কারণে শরীরে প্রদাহ হয়, ফলে স্বাদ ও গন্ধের রিসেপ্টর ফুলে যায়।
সক্রিয় কিংবা পরোক্ষ ধূমপান উভয়ই শরীরের সংবেদনশীল অঙ্গগুলোকে প্রভাবিত করে। ফলে গন্ধশক্তি কমতে শুরু করে। তবে ধূমপান ছাড়ার পর তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
শারীরিক সুস্থতা কমে যায়
ধূমপান শারীরিক কার্যকলাপের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে। যখন কেউ ধূমপান করে তখন হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস ও পেশি কম অক্সিজেন পায়।
ফলে শারীরিক সুস্থতা কমে যায়। ধূমপান হাড় ও জয়েন্টে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা অস্টিওপোরোসিসের মতো বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে।
শিশুদের মৃত্যুঝুঁকিও বাড়তে পারে
ধূমপানের প্রভাব শুধু ধূমপায়ীদেরই নয় পরোক্ষ ধূমপায়ীদের উপরও প্রভাব ফেলে। প্রাপ্তবয়স্করা যারা পরোক্ষ ধূমপানের কারণে অনেকের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়।
শিশুর উপর ধূমপানের প্রভাব পড়লে সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোম, তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, মধ্য কানের ব্যাধি, গুরুতর হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসের বিকাশ না হওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। এসবের কারণে শিশুর মৃত্যুঝুঁকিও বাড়তে পারে।
এসব কারণেই চিকিৎসকরা ধূমপান ছাড়ার পরামর্শ দেন। ধূমপন ত্যাগ করা একটি স্বাস্থ্যকর ও সক্রিয় জীবনধারার প্রথম পদক্ষেপ।
মনে রাখবেন, একটি সিগারেট না খেলে আপনার আয়ু বাড়বে ৩০ সেকেন্ড। অন্যদিকে একটি সিগারেট খেলে আপনার আয়ু কমবে ১১ মিনিট। তাই আজ থেকেই তামাককে না বলুন ও সুস্থতা নিশ্চিত করুন।
সূত্র: ফার্স্টপোস্