বেশিরভাগ মানুষই স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাককে এক ভেবে ভুল করেন। আসলে স্ট্রোক হয় মস্তিষ্কে, আর হার্ট অ্যাটাক হৃদযন্ত্রে। মস্তিষ্কের এই সমস্যাকে স্ট্রোক ছাড়াও ব্রেইন অ্যাটাকও বলা হয়। স্ট্রোকে মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের ঝুঁকি বেশি। তাই সবারই সতর্ক থাকা উচিত।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, প্রতিবছর প্রায় দেড় কোটি মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। তাদের মধ্যে প্রায় ৫০ লাখের মৃত্যু হয় ও বাকি ৫০ লাখ মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করেন।

স্ট্রোকের বিষয়ে সবাই সচেতন করার উদ্দেশ্যে সম্প্রতি ডিএম নিউরোলজি (এইমস দিল্লি) ডা. প্রিয়াঙ্কা শেরাওয়াত (এমডি মেড) একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন ইনস্টাগ্রামে।

সেখানে তিনি স্ট্রোকের ঝুঁকি ও প্রতিরোধের নানা উপায় সম্পর্কে জানান। তার মতে, স্ট্রোক হলো নিউরোলজিক্যাল ইমারজেন্সি। তবে সচেতনতা কম থাকায়, এই স্ট্রোকের রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। তবে একটু সচেতনতাই কিন্তু এই অসুখ থেকে আমাদের বাঁচাতে পারে।

স্ট্রোক কেন হয়?

বিশেষজ্ঞের মতে, মস্তিষ্কের কিছু রক্তানালি কোনো কারণে বন্ধ হলে বা ফেটে গেলে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় ব্রেন ঠিকমতো নিজের কাজ করতে পারে না। ফলে স্থায়ী বা অস্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।

এই সমস্যার নামই হলো স্ট্রোক। এই প্রসঙ্গে নিউরোলজিস্ট বলেন, এই অসুখকে নার্ভাস সিস্টেমের ম্যাল ফাংশনও বলা যেতে পারে। শরীরে দুর্বলতা, মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা, একদিক অবশ হওয়া, বিভ্রান্তির মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে।

কোন কোন কারণে যখন তখন হতে পারে স্ট্রোক?

হাই প্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপ

সেন্টার ফর জিজিজ কন্ট্রোল বা প্রিভেনশন (সিডিসি) জানাচ্ছে, হাই ব্লাড প্রেশার থেকে অনেকের সমস্যা হয়। এক্ষেত্রে অনেক সময় রক্তনালিতে রক্ত জমাট বেধে রক্তনালি ফেটে যায়। আর তখনই মানুষের স্ট্রোক হয়।

গবেষণায় জানা গেছে, স্ট্রোক থেকে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়া প্রতি ১০ জনে ৪ জন মানুষের প্রাণ বাঁচতে পারে যদি তাদের ব্লাড প্রেশার থাকে নিয়ন্ত্রণে।

ডায়াবেটিস

এখন ডায়াবেটিসের রোগী প্রায় সব ঘরে ঘরেই। তবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার কিন্তু বিকল্প নেই। এই ব্যাধিও কিন্তু স্ট্রোক ডেকে আনে।

অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে রক্তনালির ভেতরে প্রদাহ হতে পারে। তার থেকেও বাড়ে স্ট্রোকের ঝুঁকি। তাই ডায়াবেটিসের রোগীরা সতর্ক না থাকলে যখন তখনই হতে পারে স্ট্রোক।

কোলেস্টেরল

মোমজাতীয় পদার্থ হলো কোলেস্টেরল। শরীরে ভালো ও খারাপ দু ধরনের কোলেস্টেরল থাকে। খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল বাড়লে তা রক্তনালির ভেতরে প্লাকের সৃষ্টি করে। এ কারণে রক্ত চলাচলে বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে ঘটে হার্ট অ্যাটাক।

এছাড়া কোলেস্টেরলের কারণে কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি ও বাড়ে। এই পদার্থ রক্তনালিতে জমে থাকায় মস্তিষ্কে ঠিকমতো রক্ত পৌঁছাতে পারে না। এ কারণে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়। তাই রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে তা কমাতে জীবনধারণে পরিবর্তন আনুন।

স্থূলতা

ওবেসিটির সমস্যায় এখন ছোট-বড় সবাই ভুগছেন। আর ওজন বাড়লে শরীরে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হয়। এমনকি রক্তনালিতে চর্বিও জমে।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরে স্বাভাবিকের থেকে ১ ইঞ্চি বেশি মেদ থাকলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে প্রায় ৫ শতাংশ। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে না রাখলেও আপনার যখন যখন স্ট্রোক হতে পারে।

বয়স

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে স্ট্রোকের ঝুঁকিও। দেখা গেছে, বয়স ৫৫ পার হলেই এই অসুখের ঝুঁকি বাড়ে। এই বয়সের পর থেকে প্রতি ১০ বছরে স্ট্রোকের ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। তবে উপরোক্ত বিভিন্ন সমস্যার কারণে ৫৫ বছরের আগেও স্ট্রোক হতে পারে।

স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায় কী?

স্ট্রোক থেকে বাঁচতে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন- শাক, সবজি বেশি খাওয়ার। পাশাপাশি মদ্যপান, ধূমপান এড়িয়ে যান। এছাড়া ব্যায়াম করতে হবে প্রতিদিন। ডায়াবেটিস, প্রেশার, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করুন। তবেই ভালো থাকবেন।