শুধু চোখের রোগ শনাক্তের জন্য চোখ পরীক্ষা করা হয় না, এর মাধ্যমে অন্যান্য রোগও শনাক্ত করা যায়। এ কারণেই চিকিৎসকরা নিয়মিত চোখ পরীক্ষার পরামর্শ দেন। তবে বেশিরভাগ মানুষই চোখে কোনো সমস্যা দেখা না দিলে চোখ পরীক্ষা করেন না।
খেয়াল করলে দেখবেন, যে কোনো চিকিৎসকের কাছে গেলেই কিন্তু তিনি প্রথমে রোগীর চোখ পরীক্ষা করেন। কারণ চোখ দেখেও বিভিন্ন রোগ শনাক্ত করা যায়।
চোখ খুব প্রাথমিক পর্যায়েই শরীরের বড় রোগ প্রকাশ করতে পারে। কিছু প্রাণঘাতী রোগ আছে, যা চোখ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা যেতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ
চোখে অব্যক্ত রক্তপাত উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ হতে পারে। একে বলা হয় সাবকনজাংটিভাল হেমোরেজ, যেখানে চোখের পৃষ্ঠের কাছাকাছি একটি ছোট রক্তনালি ফেটে যায়।
কাশি ও হাঁচির সময় চোখ চাপা পড়া, মাথায় বা চোখে আঘাত, চোখ ঘষা কিংবা বেশিক্ষণ কন্টাক্ট লেন্স পরার কারণেও এটি হতে পারে।
চিকিৎসা না করলে উচ্চ রক্তচাপ হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথির কারণ হতে পারে। এক্ষেত্রে রেটিনার রক্তনালিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিস চোখের উপর সবচেয়ে খারাপ প্রভাব ফেলে। তাই যাদের ডায়াবেটিস আছে বা যাদের এই বিপাকীয় ব্যাধির ঝুঁকি আছে, তাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
নিয়মিত চোখের চেকআপ দ্রুত ডায়াবেটিস শানাক্তে সাহায্য করতে পারে। ডায়াবেটিসের কারণে রোগী চোখের সামনে কালো ও ভাসমান দাগ দেখতে পায়।
এমনকি দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায় ও কখনো কখনো ব্যক্তির রং শনাক্ত করতে অসুবিধা হয়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে ও চোখের সঠিক চিকিৎসা করা না হলে একজন ব্যক্তি সম্পূর্ণভাবে অন্ধ হয়েও যেতে পারেন।
কার্ডিওভাসকুলার ঝুঁকি
কখনো চোখের স্ট্রোক শুনেছেন? চিকিৎসার ভাষায় একে বলা হয়, ইস্কেমিক অপটিক নিউরোপ্যাথি। এটি একটি গুরুতর অবস্থা, যা চোখের অপটিক নার্ভের টিস্যুতে রক্ত প্রবাহের অভাবের কারণে ঘটে।
এর লক্ষণ হিসেবে চোখের সামনে কালো দাগ, ঝাপসা দৃষ্টি ও চোখের ব্যথা দেখা দিতে পারে। যদিও এর বিভিন্ন কারণ আছে। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, কার্ডিওভাসকুলার রোগে আক্রান্তদের চোখের স্ট্রোকের শতাংশ বেশি।
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস
বাতজ্বরের একটি সাধারণ লক্ষণ হল শুকনো চোখ। যদিও শুষ্ক চোখ অনেক অন্যান্য জটিলতার জন্য সাধারণ, যা জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ নয়।
তবে যখন এটি রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের সঙ্গে যুক্ত থাকে ও চিকিৎসা করা না হয়, তখন এটি কর্নিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে রোগীর দৃষ্টিশক্তি কমে যায়।
থাইরয়েড
থাইরয়েডের একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হলো চোখ ফুলে যাওয়া। থাইরয়েডের ক্ষেত্রে, ব্যক্তির শুষ্ক চোখ থাকতে পারে, চোখ নাড়াতে অসুবিধা হয়, দ্বিগুণ দৃষ্টি থাকে ও উজ্জ্বল আলো সহ্য করতে পারে না।
ক্যানসার
স্বাস্থ্য প্রতিবেদন অনুযায়ী, চোখের পাতার নিচের ঢাকনায় ত্বকের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে চোখের পাতায় একটি দাগ, যা মসৃণ ও আড়ষ্ট দেখায়।
এমন লক্ষণ কখনো উপেক্ষা করবেন না। নিয়মিত চোখ পরীক্ষার মাধ্যমে এ সমস্যা দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হয় ও রোগীর ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
উচ্চ কোলেস্টেরল
কর্নিয়ার চারপাশে নীল রং ধারণ করার ইঙ্গিত হতে পারে রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়ার। আপনি যদি কোলেস্টেরলের ঝুঁকিতে থাকেন, তাহলে নিয়মিত চোখ পরীক্ষ আপনার জন্য বাধ্যতামূলক।
মাল্টিপল স্কলেরোসিস
চোখ নড়াচড়ায় ব্যথা, ঝাপসা দৃষ্টি, কখনো কখনো দ্বিগুণ দৃষ্টি মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসের লক্ষণ। আর এই লক্ষণগুলো অপটিক স্নায়ুর প্রদাহের কারণে দেখা দেয়। এই লক্ষণগুলো দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
যৌনবাহিত রোগ
আপনি কি জানেন চোখের পরীক্ষাও যৌনবাহিত রোগ শনাক্ত করতে পারে? যেমন- গনোরিয়া, এসটিডির কারণে চোখ লালচে হয়ে যাওয়া ও ব্যথা, গুরুতর কনজেক্টিভাল ইনজেকশন, কর্নিয়াল পাতলা হয়ে যাওয়া ও কর্নিয়ার ক্ষতির মতো চোখের সংক্রমণ দেখা দিতে পারে।
ভিটামিনের অভাব
ভিটামিনের ঘাটতির লক্ষণও ফুটে ওঠে চোখে। যেমন- ভিটামিন এ, বি ১২ ও ই এর মতো কিছু ভিটামিনের অভাবে দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করলে তা দ্রুত শনাক্ত করা যায় ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট খেলেই সমস্যার সমাধান ঘটবে।
শরীরে ভিটামিন এ এর ঘাটতি হলে শুষ্ক চোখ, রাতকানা, কর্নিয়ার দাগ ও কর্নিয়ায় ঘা ইত্যাদি লক্ষন ফুটে ওঠে চোখে। তাই এসব লক্ষণ অবহেলা করবেন না।