গত সপ্তাহের মাঝপথে জিনোরার কাছে অপ্রত্যাশিত হারের পর কম সমালোচনা শুনতে হয়নি রিয়াল মাদ্রিদ খেলোয়াড়দের। কিন্তু এটা এমন এক দল, যারা যে কোনো মুহূর্তে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা রাখে। হলোও তাই। পরের ম্যাচেই পয়েন্ট টেবিলের শেষের দিকে থাকা আলমেরিয়াকে ৪-২ গোলে বিধ্বস্ত করে ছাড়লো রিয়াল।

দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিক করলেন করিম বেনজেমা। তার এই এক হ্যাটট্রিকেই বলতে গেলে উড়ে গেছে ১৫তম স্থানে থাকা আলমেরিয়া। রিয়ালের হয়ে বাকি গোলটি করেন ব্রাজিলিয়ান তারকা রদ্রিগো। আলমেরিয়ার হায়ে গোল দুটি করেন ল্যাজারো এবং লুকাস রবার্তোন।

এমন একটি জয়ের পরও অবশ্য কোনো লাভ হচ্ছে না রিয়ালের। পয়েন্ট টেবিলে দ্বিতীয় স্থানে রইলো তারা। ৩২ ম্যাচে ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে বার্সার সঙ্গে ব্যবধান ৮-এ নামিয়ে এনেছিল তারা। কিন্তু পরক্ষণে রিয়াল বেটিসকে হারিয়ে ব্যবধান সেই ১১ পয়েন্টে উন্নীত করে নিয়েছে বার্সা। লিগের আর মাত্র ৬টি ম্যাচ বকি।

ম্যাচের শুরু থেকেই ছিল রিয়ালের দাপট। ভিনিসিউস-বেনজেমা জুটিতে ম্যাচের চতুর্থ মিনিটে এগিয়ে যেতে পারতো রিয়াল। বাঁ-দিক দিয়ে আক্রমণ শাণিয়ে ছয় গজ বক্সের মুখে ক্রস বাড়ান ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড, তবে প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জের মুখে ঠিকমতো শট নিতে পারেননি রিয়াল অধিনায়ক বেনজেমা।

পরের মিনিটে (৫ম মিনিট) আর বিফলে যায়নি তাদের প্রচেষ্টা। এবারও বাঁ থেকে একজনকে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে ছয় গজ বক্সের বাইরে বেনজেমাকে খুঁজে নেন ভিনিসিউস। অরক্ষিত ফরাসি ফরোয়ার্ড অনায়াসে বাঁ পায়ের শটে বল জালে জড়ান।

অধিকাংশ সময় বল দখলে রেখে দারুণ সব আক্রমণ করতে থাকে রিয়াল। ১৭তম মিনিটে দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় তারা। ডান দিক থেকে বক্সে ঢুকে রদ্রিগো প্রতিপক্ষের কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে অসাধারণ দৃঢ়তায় পজেশন ধরে রেখে বাইলাইন থেকে কাটব্যাক করেন। আর প্রথম ছোঁয়ায় জোরাল শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন বেনজেমা।

এ গোলের পর মোট ২৩৫ গোল নিয়ে সাবেক মেক্সিকান ফরোয়ার্ড হুগো সানচেজকে টপকে লা লিগার সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় চতুর্থ স্থানে বসলেন বেনজেমা। তালিকায় তার ওপরে আছেন কেবল লিওনেল মেসি (৪৭৪), ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (৩১১) ও তেলমো জারা (২৫২)।

৩৭তম মিনিটে আলমেইরার ডিফেন্ডার মেন্দেস কর্তৃক ফাউলের শিকার হয়ে মেজাজ হারান ভিনিসিউস। প্রতিপক্ষকে হলুদ কার্ড দেখানোর দাবিতে তর্ক জুড়ে দেন রেফারির সঙ্গে। তাতে তিনিই উল্টো দেখেন হলুদ কার্ড।

৪২তম মিনিটে সফল স্পট কিকে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন বেনজেমা। বক্সে লুকাস ভাসকজ ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টিটি পায় রিয়াল। এবারের লা লিগায় ২১ ম্যাচে বেনজেমার গোল হলো ১৭টি।

চলতি মৌসুমে এই নিয়ে তৃতীয় হ্যাটট্রিক করলেন ফরাসি ফরোয়ার্ড এবং সবগুলোই এই মাসে। গত ২ এপ্রিল লা লিগায় রিয়াল ভাইয়াদলিদের বিপক্ষে দলের ৬-০ ব্যবধানে জয়ের ম্যাচে এবং এর তিনদিন পর কোপা দেল রেতে বার্সেলোনার মাঠে ৪-০ গোলে জয়ের পথে তিনবার করে জালে বল পাঠান বেনজেমা।

বিরতির ঠিক আগে খেলার ধারার বিপরীতে ব্যবধান কমায় আলমেরিয়া। বাঁ দিক থেকে সতীর্থের পাস ছয় গজ বক্সের মুখে পেয়ে জালে ঠেলে দেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ল্যাজারো। দ্বিতীয়ার্ধের দ্বিতীয় মিনিটে ফের তিন গোলের ব্যবধানে এগিয়ে যায় রিয়াল। দানি সেবাইয়োসের পাস পেয়ে বক্সের বাইরে থেকে জোরাল শটে আসরে নিজের ষষ্ঠ গোলটি করেন রদ্রিগো।

নিজেদের ভুলের খেসারত দিয়ে ৬১তম মিনিটে দ্বিতীয় গোল হজম করে স্বাগতিক রিয়াল। গোলরক্ষক কুর্তোয়ার ছোট পাস টনি ক্রুস ধরে বক্সেই রুডিগারকে বল বাড়ান। তার ওই দুর্বল পাস নিয়ন্ত্রণেই নিয়েই আক্রমণ শাণায় আলমেরিয়া। হেডে গোলটি করেন লুকাস রবের্তোনে।

৬৫তম মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন রদ্রিগো। বেনজেমার পাস বক্সে ফাঁকায় পেয়ে যান তিনি, সামনে একমাত্র বাধা ছিলেন গোলরক্ষক। চিপ শটে তাকে ফাঁকি দিতে গিয়ে বাইরে মারেন তরুণ ফরোয়ার্ড।

৭৯তম মিনিটে বক্সে বেনজেমাকে গোলরক্ষক ফাউল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। তবে তার আগে বেনজেমার পায়ে লেগে শেষ ডিফেন্ডার পড়ে যাওয়ায় ওখানে ফাউলের আবেদন করতে থাকে আলমেরিয়ার খেলোয়াড়রা। ভিএআর মনিটরে দেখে সিদ্ধান্ত পাল্টান রেফারি।

৮৬তম মিনিটে দারুণ পাসিং ফুটবলে আক্রমণ শাণায় রিয়াল। কিন্তু কামাভিঙ্গার পাস বক্সে পেয়ে বেনজেমার কোনাকুনি শট দূরের পোস্টে লাগে। পরের মিনিটে মার্কো আসেনসিওর শটও পোস্টে বাধা পেলে ব্যবধান আর বাড়েনি।