দেশের পাঁচ জেলায় বজ্রপাতে ছয়জন প্রাণ হারিয়েছেন। এদের মধ্যে নেত্রকোনায় একজন, যশোরে একজন, বগুড়ায় একজন, পাবনায় দুজন ও বরগুনায় একজনের মৃত্যু হয়। শনিবার (২৯ এপ্রিল) দুপুর ২ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে পৃথক স্থানে এসব ঘটনা ঘটে।
নেত্রকোনা
ধানের শুকানো খড় বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার সময় তুলতে গিয়ে বজ্রপাতে মোস্তফা (৫০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়।
সন্ধ্যায় নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার গোহালাকান্দা ইউনিয়নের হাট-বারেঙ্গা গ্রামের মধ্যপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, বৃষ্টির সময় মোস্তফা শুকানো খড় ঘরে তুলতে যান। এ সময় বজ্রপাতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে পুর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স বলেন, বজ্রপাতে মৃত ব্যক্তির মরদেহ দাফনের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৃতের পরিবারকে আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে।
যশোর
জেলার চৌগাছায় বছির উদ্দিন (৫০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়নের তেঘরী গ্রামের মাঠে এ ঘটনা ঘটে। বছির উদ্দীন ওই গ্রামের মোহাম্মাদ আলীর ছেলে।
বছিরের চাচাতো ভাই কামাল হোসেন বলেন, ভাইয়ের কোনো ছেলে সন্তান নেই। তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। এজন্য জমিতে নিজেই কাজ করেন। অন্য দিনের মতো শনিবারও তিনি দুপুরের খাবার খেয়ে মাঠে যান। ধান কাটা ও গোছানোর কাজ শেষে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় বজ্রপাতে আহত হন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (এসএসিএমও) মুহিবুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
বগুড়া
নন্দীগ্রামে বজ্রপাতে লোকমান আলী (৬৫) নামে এক কৃষক মারা গেছেন। শনিবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার বুরইল ইউনিয়নের সিংজানি ময়নাখা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। লোকমান ওই গ্রামের মৃত জিলহজ্বের ছেলে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নন্দীগ্রামে বিকেল থেকেই আকাশে মেঘ গর্জন করছিল। এর মধ্যে লোকমান আলী বাড়ির পাশেই মাঠে ঘাস কাটতে যান। হঠাৎ বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। বিষয়টি এলাকার ও পরিবারের লোকজন জানতে পেরে তার মরদেহটি বাড়িতে নিয়ে যায়।
বুড়ইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, শনিবার বিকেলে কৃষক লোকমান আলী মাঠে ঘাস কাটতে যান। এ সময় বিকট শব্দে বজ্রপাত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
পাবনা
পাবনার আটঘরিয়া এবং সুজানগর উপজেলায় বজ্রপাতে দুজন মারা গেছেন। বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
বজ্রপাতে মৃতরা হলেন আটঘরিয়া উপজেলার এনামুল হক (১৮)। তিনি একদন্ত ইউনিয়নের বাড়ইপাড়া গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে। এছাড়া মৃত মো. মনিরুজ্জামান (৪২) সুজানগর উপজেলার চরগোবিন্দপুর মমিনপাড়া গ্রামের মৃত আকবর হোসেনের ছেলে।
এরমধ্যে এনামুল পাবনা সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র এবং মনিরুজ্জামান পেশায় কৃষক ছিলেন।
একদন্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন আলাল বলেন, এনামুল শনিবার বিকেলে বাড়ির পাশে মাঠে ঘাস কাটতে গিয়েছিলেন। বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
এদিকে, সুজানগর উপজেলার আহম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন মিয়া বলেন, শনিবার বিকেল ৩টার দিকে মনিরুজ্জামান বাড়ির পাশে মাঠে ঘাস কাটতে যান। এসময় বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই মনিরুজ্জামান মারা যান।
আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিসুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, নিহতের পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হবে।
বরগুনা
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় বজ্রপাতে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। শনিবার (২৯ এপ্রিল) দুপুর ২টার দিকে উপজেলার চরদুয়ানি ইউনিয়নের তাফালবাড়িয়া এলাকায় এ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।
নিহত খলিল মৃধা (৬০) চরদুয়ানি ইউনিয়নের তাফালবাড়িয়া এলাকার লেহাজ উদ্দিন মৃধার ছেলে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চরদুয়ানি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান জুয়েল বলেন, দুপুরের দিকে ওই কৃষক তার বাড়ির পাশে মুগডাল তোলার কাজ করছিলেন। এ সময় হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড় শুরু হলে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম হাওলাদার বলেন, বজ্রপাতে নিহতের ঘটনাটি শুনেছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।