দেহের একটি ছোট অঙ্গ হলো হৃৎপিণ্ড। এটি আকারে ছোট ও ভেতরে ফাঁপা। হৃৎপিণ্ডের পেশীগুলোর প্রয়োজন হয় নিজস্ব রক্তের সরবরাহ। শরীরের বাকি অংশের মতো হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে অক্সিজেন ও অন্যান্য পুষ্টির দরকার পড়ে।
এ কারণে হৃদযন্ত্র করোনারি ধমনীর মাধ্যমে রক্তে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়। হৃৎপিণ্ড যখন তার কাজ ঠিকমতো করতে পারে না, তখন হার্ট ফেইলর হয়। একজন ব্যক্তির শ্বাস যতক্ষণ চলে ততক্ষণ তার হৃদস্পন্দনও চলতে থাকে।
যখন ওই ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস থেমে যায়, তখন হৃদস্পন্দনও থেমে যায়। আর তখনই ওই ব্যক্তিকে মৃত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। যখন হৃৎপিণ্ডের রক্তের ধমনীর ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় তখন রক্ত প্রবাহ না হওয়ায় হার্ট অ্যাটাক হয়।
বর্তমানে হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা বিশ্বব্যাপী বাড়ছে। শুধু বয়ষ্কদেরই নয় কমবয়সীরাও এখন হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে অকালে মৃত্যুবরণ করছে। এর পেছনে কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করছেন, অনিয়মিত জীবনযাপন, উচ্চ রক্তচাপ, পারিবারিক হৃদরোগের ইতিহাস ইত্যাদি।
তাই সচেতন থাকা জরুরি। হার্ট অ্যাটাক যখন তখনই হতে পারে, তাই এর থেকে বাঁচার স্বার্থে ব্যাগে কয়েকটি ওষুধ রাখতে হবে বলে জানান, ভারতের বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আশিস মিত্র।
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ কী কী?
১. বুকে চাপ লাগা
২. বুকে ব্যথা
৩. শ্বাস বন্ধ হয়ে আসা
৪. ব্যথা বুক থেকে চোয়ালে বা বাম হাতের দিকে যেতে পারে
৫. অত্যধিক ঘাম ইত্যাদি।
এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলেই যত দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
হার্ট অ্যাটাকের কারণ কী?
পরিবারে কারও হৃদরোগ থাকলে আপনারও এর ঝুঁকি আছে। তাই পরিবারে কারও ৬০ বছর বয়সের আগে এই অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস থাকলে সতর্ক হন।
সেক্ষেত্রে বয়স ৩০ পেরলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রসঙ্গত আরও কয়েকটি কারণে হার্টের অসুখের ঝুঁকি বাড়তে পারে। যেমন-
১. ধূমপান
২. অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস
৩. উচ্চ রক্তচাপ
৪. কোলেস্টেরল বেশি থাকা ইত্যাদি।
হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচতে সঙ্গে যে ওষুধগুলো রাখবেন?
এ বিষয়ে ডা. মিত্র জানান, অনিয়ন্ত্রিণ ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেশার, কোলেস্টেরল থাকার পাশাপাশি বাড়িতে কারও এই অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস থাকলে অবশ্যই ব্যাগে কয়েকটি ওষুধ রাখতে হবে।
এক্ষেত্রে বুকে ব্যথা হলেই অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ চিবিয়ে খেয়ে নিন। এই ওষুধ আপনার প্রাণ বাঁচাতে পারে। এছাড়া আগে থেকে হার্টের অসুখ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো জিভের তলায় সরবিট্রেট ওষুধটি রাখতে পারেন।
হার্ট অ্যাটাক হলে দ্রুত করণীয়
>> জরুরি ভিত্তিতে অভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।
>> হার্ট অ্যাটাকের পরপরই রোগীকে শক্ত জায়গায় হাত-পা ছড়িয়ে শুইয়ে দিন। গায়ের জামা-কাপড় ঢিলা করে দিতে হবে।
>> রোগীর শরীরে বাতাস চলাচলের সব রাস্তা উন্মুক্ত করে দিতে হবে, যাতে রোগী গভীরভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারেন।
>> হার্ট অ্যাটাকের পর যদি রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে তাকে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস দিতে হবে।
>> রোগী বমি করলে তাকে একদিকে কাঁত করে দিন। যাতে সহজেই সে বমি করতে পারে।
>> হার্ট অ্যাটাকের পর হৃৎপিণ্ডের রক্তের সরবরাহ বাড়ানোর জন্য বাজারে প্রচলিত ৩০০ মি.গ্রা. ডিসপ্রিন (অ্যাসপিরিন), ৩০০মি.গ্রা. ক্লোপিডোগ্রেল, ৪০ মি.গ্রা. অ্যার্টভাস্টাটিন এবং ৪০ মি.গ্রা. ওমিপ্রাজল খেয়ে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছাতে হবে।