বিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ট্রেনযোগে ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে আজ। সোমবার (১৭ এপ্রিল) সকাল ৬টা ২০ মিনিটে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে রাজশাহী অভিমুখী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়ে যায়। এ বছর ঈদযাত্রায় শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ফলে স্টেশনে সেই চিরচেনা ভিড় ও ভোগান্তি পোহাতে হয়নি যাত্রীদের। তবে যারা অনলাইনে টিকিট কিনতে পারেননি, তারা যাত্রা শুরুর আগে স্ট্যান্ডিং টিকিট নিতে কাউন্টারে যাচ্ছেন। এতে ভোর থেকে কমলাপুর স্টেশনে বেশ ভিড় দেখা গেছে।

স্ট্যান্ডিং টিকিটের জন্য সেহরির পরপরই স্টেশনে এসেছেন পারাবত এক্সপ্রেসের যাত্রী মাহমুদ। তিনি সিলেট যাবেন। কিন্তু অনলাইনে টিকিট পাননি। মাহমুদ বলেন, এবার আমি অনেক চেষ্টা করেও টিকিট পায়নি। যেহেতু গ্রামে যেতে হবে, তাই স্ট্যান্ডিং টিকিট পেতে আজ এসেছি। বাসা থেকে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি, টিকিট পেলে আজই চলে যাবো।

শহিদুল ইসলাম যাবেন খুলনায়, তিনিও অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করতে পারেননি। শহিদুল বলেন, আমি অনলাইনে নিবন্ধনই করতে পারিনি। এজন্য টিকিট কাটতে পারিনি। এখন দাঁড়ানো টিকিট হলেও চলবে। কষ্ট করে হলেও বাড়ি ফিরতে হবে। বাসভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে। তাই ট্রেনের স্ট্যান্ডিং টিকিট নিতে ভোর থেকে অপেক্ষা করছি।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এবার আন্তঃনগর ট্রেনে ৩০ হাজার যাত্রী যাত্রা করবেন। তারা প্রত্যেকে এরইমধ্যে টিকিট সংগ্রহ করেছেন। যারা টিকিট পাননি, তাদের জন্য আরও ১৫ হাজার স্ট্যান্ডিং টিকিটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে আন্তঃনগর ট্রেনে এবার প্রায় ৪৫ হাজার যাত্রী প্রতিদিন যাত্রা করবেন।

এদিকে, কমলাপুর স্টেশনে টিকিট ছাড়া কেউ প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছেন না। টিকিট না থাকলে তাকে স্ট্যান্ডিং টিকিট কিনে স্টেশনে প্রবেশ করতে হচ্ছে। যাত্রীদের নিরাপত্তায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

রোববার (১৬ এপ্রিল) দুর্ঘটনার কারণে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের সাতটি কোচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় সোমবার (১৭ এপ্রিল) ঢাকা থেকে চট্টগ্রামমুখী সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের অসুবিধার কথা বিবেচনায় নতুন রেক প্রস্তুত করে বাতিল হওয়া ট্রেনটি ১৯ এপ্রিল সকাল ৮টায় ঢাকা স্টেশন থেকে ছেড়ে যাবে।

ঈদযাত্রায় উত্তরাঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা সাতটি ট্রেন রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশনে থামবে না। ট্রেনগুলো সরাসরি কমলাপুর স্টেশনে চলে যাবে। ঈদযাত্রায় ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঠেকাতে এমন উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

রেলপথ মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়, ঈদযাত্রা শুরুর দিন অর্থাৎ ১৭ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ঢাকাগামী একতা এক্সপ্রেস, দ্রুতযান, পঞ্চগড়, নীলসাগর, কুড়িগ্রাম, লালমনি ও রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে না।

এছাড়া ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আন্তঃদেশীয় মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন ১৮ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত এবং মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন ২০ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে আন্তঃদেশীয় বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন যথারীতি চলাচল করবে।

ঈদযাত্রায় টিকিট ছাড়া কোনো যাত্রীর ট্রেনে ভ্রমণ করার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি বলেন, প্রত্যেক যাত্রীকে টিকিট প্রদর্শনপূর্বক স্টেশনে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। টিকিটবিহীন যাত্রীর প্রবেশ বন্ধে ঢাকামুখী ট্রেনগুলো এবার ঈদযাত্রায় বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে না।

এবার ঈদযাত্রায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয় গত ৭ এপ্রিল। ওইদিন বিক্রি হয় ১৭ এপ্রিলের টিকিট। এরপর ৮ এপ্রিল ১৮ এপ্রিলের, ৯ এপ্রিল ১৯ এপ্রিলের, ১০ এপ্রিল ২০ এপ্রিলের এবং ১১ এপ্রিল বিক্রি হয় ২১ এপ্রিলের টিকিট।

একইভাবে ঈদের ফিরতি যাত্রার টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে গতকাল ১৫ এপ্রিল থেকে। ফিরতি যাত্রার টিকিট বিক্রি শুরুর প্রথম দিন অর্থাৎ ১৫ এপ্রিল বিক্রি হয়েছে ২৫ এপ্রিলের টিকিট। ১৬ এপ্রিল বিক্রি হয়েছে ২৬ এপ্রিলের, আজ ১৭ এপ্রিল বিক্রি হচ্ছে ২৭ এপ্রিলের, ১৮ এপ্রিল ২৮ এপ্রিলের, ১৯ এপ্রিল ২৯ এপ্রিলের এবং ২০ এপ্রিল বিক্রি করা হবে ৩০ এপ্রিলের টিকিট।