গরমে শুধু তেষ্টা মেটানো নয়, শরীরকে ভেতর থেকে আর্দ্র রাখতেও সাহায্য করে পানি। তবে তীব্র গরমে ঘামের সঙ্গে যে পরিমাণ পানি ও লবণ শরীর থেকে বের হয়ে যায়, তার ঘাটতি পূরণ করতে শুধু পানি পান করাই কিন্তু যথেষ্ট নয়! এমনটিই মত পুষ্টিবিদের।

এ বিষয়ে হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস এক্সপার্ট কোরি রদ্রিগেজ পুষ্টিবিদদের মতে, সাধারণ পানি পান করলে পিপাসা মিটলেও যে খনিজগুলো ঘাম ও প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, তার ঘাটতি পূরণ করতে পারে না। তাই শুধু পানি পান করাই যথেষ্ট নয়। পান করতে হবে ইলেকট্রলাইট।

ইলেকট্রলাইট কী?

পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের মিশ্রণে তৈরি একটি যৌগ হলো ইলেকট্রলাইট। যা পানিতে সহজেই গুলে যায়। বিভিন্ন খাবার বা পানীয়ের মাধ্যমে শরীর এই যৌগ সংগ্রহ করে।

ইলেকট্রলাইট বিভিন্ন শারীরিক কার্য সম্পাদনে সাহায্য করে যেমন- কোষে পুষ্টি যোগানো, কোষ থেকে বর্জ্য সরানো, ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু পুনর্গঠনে সাহায্য করা, শরীরের পিএইচ মাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখা ও স্নায়ু, পেশী, হৃদপিণ্ড ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করা ইত্যাদি।

পানিতে সাধারণত এই খনিজগুলো মিশে থাকে তবে, বিশুদ্ধকরণের কারণে তাদের কিছু হারিয়ে যেতে পারে। এছাড়া ওয়ার্কআউটের মতো তীব্র শারীরিক ক্রিয়াকলাপে নিযুক্ত হলে, শরীর ঘামের মাধ্যমে ইলেক্ট্রোলাইট হারাতে থাকে ও ডায়রিয়া বা বমির কারণে যে কেউ পানিশূন্য হয়ে পড়তে পারেন।

এ কারণে বিশেষজ্ঞ রদ্রিগেজ শরীরের হাইড্রেশনের জন্য পানিতে ইলেক্ট্রোলাইট যোগ করার পরামর্শ দেন। তার মতে, ‘সঠিকভাবে হাইড্রেটেড হওয়ার জন্য পানির পাশাপাশি ইলেক্ট্রোলাইটস প্রয়োজন। আপনি প্রতিবার প্রস্রাবের সঙ্গে সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম ইলেকট্রলাইটগুলো বের হয়ে যায়।’

‘তবে বেশিরভাগ মানুষেরই এ বিষয়ে তেমন কোনো ধারণা নেই। ফলে তারা শুধু পানি পান করেই পেট ভরান। সুতরাং আপনি যত বেশি পানি পান করবেন, তত বেশি প্রস্রাব করবেন, আর ততই আপনার ইলেক্ট্রোলাইটের প্রয়োজন হবে।’

বিশেষজ্ঞ রদ্রিগেজের সঙ্গে সম্মত ভারতের কনসালটেন্ট-ইন্টারনাল মেডিসিন, এসএল ডা. নিখিল কুলকার্নি। তার মতে, ‘একজন পুরুষের শরীরের ওজনের প্রায় ৬৫ শতাংশ ও একজন নারীর শরীরের ওজনের ৬০ শতাংশই হলো পানি।’

‘সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ক্লোরাইড সবই পানিতে পাওয়া ইলেক্ট্রোলাইট। যা প্রাকৃতিক ঝরনার পানি ও পাহাড়ের পানিতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। অন্যদিকে বিশুদ্ধ পানিতে প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রোলাইট নাও থাকতে পারে’।

ডা. কুলকার্নি সতর্ক করে বলেন, ‘ইলেকট্রলাইট যোগ করার প্রাকৃতিক উপায় থাকলেও, এটি গ্রহণে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। কারণ শরীরে ইলেকট্রলাইটের নিম্ন ও উচ্চ স্তর উভয়ই ক্ষতিকারক হতে পারে।’

অত্যধিক সোডিয়াম হাইপারনেট্রেমিয়া সৃষ্টি করে ও অত্যধিক পটাশিয়াম হাইপারক্যালেমিয়া হতে পারে। এটি কিডনির কার্যকারিতার উপর প্রভাব ফেলে ও অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের কারণ হতে পারে।

পানির সঙ্গে কীভাবে ইলেকট্রলাইট মেশাবেন?

ইলেকট্রলাইটের প্রাকৃতিক উৎস হলো ডাবের পানি। গরমে তাই প্রতিদিন ডাবের পানি খেতে পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা।

অতিরিক্ত ঘাম হলে, শরীরচর্চা করার পর বা রোদ থেকে ফিরে খুব ক্লান্ত বোধ করলে সাধারণ পানি পান না করে ‘ইলেকট্রলাইট’ পান করুন। কীভাবে তৈরি করবেন জেনে নিন-

উপকরণ

১. পানি ২ কাপ
২. কমলার রস আধা কাপ
৩. লেবুর রস ১০ চা চামচ
৪. সামুদ্রিক লবণ ১ চিমটি ও
৫. মধু ২ চা চামচ।

এবার সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে ইলেকট্রোলাইট। চাইলে সামান্য বরফও যোগ করতে পারেন এর সঙ্গে।