ফেলে দেওয়া কলাগাছ থেকে তৈরি হচ্ছে সোনালি আঁশ। সেই আঁশ দিয়ে তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব সুতা, পোশাক, পেপার, স্যানিটারি ন্যাপকিনসহ হাতে তৈরি বিভিন্ন পণ্য। শুধু তাই নয়, এ আঁশ রপ্তানি হচ্ছে ভারত, চীন, নেপালসহ বেশ কয়েকটি দেশে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ছয় মাস আগে নড়াইল সদরের মুলিয়া ইউনিয়নের বড়েন্দার গ্রামে গড়ে ওঠে চারটি ব্যানানা ফাইবার মেশিন। বর্তমানে এখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে অর্ধশত নারী-পুরুষের। এদের মধ্যে ৪০ জনই নারী। নারী উদ্যোক্তা গুলশান আরা পারভীন বড়েন্দর গ্রামে দেড় একর জমির ওপর গড়ে তুলেছেন এ কারখানা।
কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা জানান, কলা সংগ্রহের পর পরিত্যক্ত কলাগাছ থেকে বাকলগুলো আলাদা করা হয়। পরে সেগুলো মোটরচালিত মেশিনের মাধ্যমে ফাইবার ছাড়ানো হয়। পরে এগুলো পানিতে ধুয়ে বাঁশের আড়ায় ভালো করে শুকিয়ে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়। নড়াইলের পাশাপাশি যশোর, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা থেকে বেশি পরিমাণে পরিত্যক্ত কলাগাছ আনা হয়। কলা সংগ্রহের পর একশ্রেণির শ্রমিক এসব গাছ সংগ্রহ করে জোগানের ব্যবস্থা করেন। প্রতি ট্রাকে প্রায় ৭০০ গাছ আনা হয়। যার মূল্য আনুমানিক ২০-২৫ হাজার টাকা।
ব্যানানা কারখানায় কাজ করেন বিধবা মৃত্তিকা বিশ্বাস তিনি বলেন, সংসারের পাশাপাশি কারখানায় কাজ করি। মেয়েকে পড়াশোনা করাচ্ছি। কারখানায় সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কাজ করে দিনে আড়াইশ টাকা মজুরি পাই। এতে সংসারে সচ্ছলতা বেড়েছে।
শ্রমিক দিবাকর আঢ্য জানান, প্রতিদিন একটি মেশিনে ৫ ঘণ্টায় গড়ে ২০-২৫ কেজি ফাইবার তৈরি সম্ভব। এখানে দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করে ৪০০ টাকা মজুরি পান তিনি।
কথা হয় নারী উদ্যোক্তা গুলশান আরা পারভীনের সঙ্গে তিনি বলেন, পরিত্যক্ত পাঁচটি কলাগাছের বাকল থেকে এক কেজি আঁশ উৎপাদন করা সম্ভব। যার বাজারমূল্য ২০০-২৫০ টাকা। মেশিন খরচ বাদে প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা লাভ হয়। তার ছেলে প্রকৌশলী নাজমুল সাকিব ভারত, চীন ও নেপালে এ আঁশ রপ্তানি করেন।
প্রকৌশলী নাজমুল সাকিব জাগো নিউজকে বলেন, ভারত ও চীনে এ আঁশ রপ্তানি করে খরচ বাদে মাসে আমাদের ৫০ হাজার টাকা লাভ থাকছে।
নড়াইল ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) উপ-ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সোলায়মান হোসেন বলেন, কলাগাছ থেকে ফাইবার তৈরি একটি নতুন সম্ভাবনাময় খাত। উৎপাদন খরচও অনেক কম। এসব পণ্য বিক্রি করে নড়াইলের উদ্যোক্তারা মাসে লাখ টাকা আয় করছেন।
তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে কয়েকজন উদ্যোক্তা এ ধরনের কারখানা করতে চান বলে জানিয়েছেন। আমাদের পক্ষ থেকে মার্কেটিংসহ তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।