দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঈদের পরে কূটনৈতিক তৎপরতা আরও জোরদার করবে বিএনপি। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কূটনৈতিক পদক্ষেপে নজরদারি করবে দলটি। ঈদ-পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ের কৌশলে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠকের চেষ্টা করবে দলটি। একটি প্রতিনিধি দলের ভারত সফর পাশাপাশি নিরপেক্ষ নির্বাচন চেয়ে জাতিসংঘে চিঠি দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের।
বিএনপি নেতারা বলেছেন, আগামী নির্বাচনে যেন জনগণ স্বাধীনভাবে মতামত প্রতিফলন করতে পারে সেজন্য একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে বিএনপির কূটনৈতিক অঙ্গনের কর্মকাণ্ড আগের চেয়ে বেশি। দেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে বাইরের গণতান্ত্রিক শক্তির সমর্থন চাওয়া দোষের নয়।
সূত্র মতে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপি এখন রাজপথমুখী। দলটি এখন রাজপথে কর্মসূচি আদায়ের পাশাপাশি সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে কূটনৈতিক সমর্থনে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। বিশ্বের প্রভাবশালী কয়েকটি দেশকে টার্গেট করে এগোচ্ছে বিএনপি। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলোর পাশাপাশি ভারত, চীনকে টার্গেট করে এখন কাজ করছেন বিএনপির নীতি নির্ধারকরা। ঈদের পরপরই বিএনপির সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল ভারত সফরে যাবে। এছাড়া দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের সুরক্ষায় জাতিসংঘকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে চিঠি দেওয়া হবে। আবারও একটি পাতানো নির্বাচন সরকার করতে চায় বলে বিএনপির পক্ষ থেকে উদ্বেগ জানানো হবে। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), কমনওয়েলথ থেকেও একই বিষয়ে চিঠি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
এছাড়া ঈদ-পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ের কৌশলে বিএনপি ঈদের পরপরই কূটনীতিকদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করতে এরইমধ্যে তোড়জোড় শুরু করেছে। বিএনপির বিদেশবিষয়ক কমিটির নেতারা বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। গত বছরের জুলাইয়ে ঈদুল আজহার পরেও বিএনপি কূটনীতিদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেছিল।
বিএনপির আরও একটি সূত্র বলছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করতে বেড়েছে পশ্চিমা ও তাদের মিত্র দেশগুলোর তৎপরতা। তাই তাদের আস্থায় আনতে রোজার ঈদের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর করবেন। এদিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখছে বিএনপি। দলটির এই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা এ বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি রাখছেন।
সূত্র জানায়, গোটা পশ্চিমা বিশ্ব এখন বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রকৃত অর্থে নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে সোচ্চার। গত দুই সংসদ নির্বাচনের ত্রুটি নিয়েও তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে কথা বলেছেন। ফলে আগামী সংসদ নির্বাচন প্রশ্নে তাদের এ অবস্থান অনেকটাই বিএনপির দাবির সঙ্গে মিলে যায়। এসব দেশের কূটনীতিকদের কাছে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগে কাজ করছেন বিএনপি নেতারা। পাশাপাশি ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন, কর্মসূচি পালনে সরকারের কঠোরতা ও মানবাধিবকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তাদের সামনে তুলে ধরছেন বিএনপি নেতারা।
এরইমধ্যে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের নিয়ে জমকালো ইফতার পার্টি করেছে বিএনপি। এতে ২২টি দেশের কূটনীতিকরা অংশগ্রহণ করেন। এর আগে গত ১২ মার্চ বিএনপির একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) আটটি দেশের কূটনীতিকদের বৈঠক শুরু হয়। ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির বাসায় ওই বৈঠক হয়েছিল। বৈঠকে আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গ গুরুত্বপূর্ণ স্থান পায়। কেন এ সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যেতে চায় না সেটিও রাষ্ট্রদূতদের পরিষ্কার করেন দলটির প্রতিনিধিরা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ এবং মানবাধিকার সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বৈঠকে অংশ নেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকে পর গত ১৬ মার্চ বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার আমন্ত্রণে তার বাসায় নৈশভোজে অংশ নেন।
ওই বৈঠকেও নেতৃত্বে দেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রতিনিধিদলে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ। এ বৈঠকেও আগামী নির্বাচন ও চলমান আন্দোলন নিয়ে কথা হয় বলে বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন।
এর আগে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বিএনপি নেতারা বৈঠক করেন। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিদেশ বিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ নিয়মিত কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন।
তিনি বলেন, বিএনপি মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে। একটি বড় দল হিসেবে আমরা কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করছি। সেখানে দেশের গণতন্ত্রহীনতা, গত দুই নির্বাচনে ভোটের নামে প্রহসন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি উঠে আসবে এটা খুব স্বাভাবিক।
এছাড়া ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কোনো দিনও খারাপ ছিল না। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ বলে প্রচারণা চালিয়ে আওয়ামী লীগ ফায়দা নেয় বলেও দাবি তার।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিদেশবিষয়ক কমিটির প্রধান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফেরাতে জনগণের সমর্থনই বড় শক্তি। তবে, গণতন্ত্র ফেরাতে বিশ্বের গণতন্ত্রমনা দেশগুলোর একটা ভূমিকা থাকে। আমরা সেটিও কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ এখন গণতন্ত্রহীন, আমরা তাদের সেটি বোঝানোর চেষ্টা করছি।
সম্প্রতি কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তু আগামী নির্বাচন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পরিবেশ নেই তা প্রমাণিত। সরকার যে মিথ্যা তথ্য বিভিন্ন স্থানে দেয় আমরা প্রকৃত সত্যটা জানানোর চেষ্টা করছি। একইসঙ্গে এই সরকারের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় সেটিও জানাচ্ছে বিএনপি।
ঈদের পর বিএনপি নেতাদের ভারত সফরের ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু না বললেও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। এর বাইরে কিছু বলার মতো অগ্রগতি আমি জানি না।