ঈদের পর কঠোর কর্মসূচি বাস্তবায়নের আগে এবার রমজানেও মাঠে বিএনপি। স্বাভাবিকভাবে রমজানে ইফতার প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকলেও দলটি এবার মাঠের কর্মসূচিতেও ব্যস্ত। এসব কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি ঘটিয়ে আগামী দিনের এক দফা আন্দোলনে প্রভাব ফেলতে চায় দলটি। অবস্থান ধর্মঘট ও বিক্ষোভ সমাবেশের মতো কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে রমজানেও মাঠের রাজনীতিতে সরব থাকবে বিএনপি।
জানা গেছে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ কয়েকটি দাবিতে আন্দোলনমুখী বিএনপি ২০২২ সালের জুলাই থেকেই ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচিতে মাঠে আছে। বিশেষ করে জ্বালানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে দৃঢ়ভাবে মাঠে রয়েছে রাজপথের এই বিরোধী দল। একইসঙ্গে ভোটাধিকার হরণসহ দলীয় নেতাকর্মীদের দমন-পীড়ন ইস্যুও ছিল। সারাদেশে বিএনপি এসব ইস্যুতে মহানগর, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, এমনকি ইউনিট ও হাট-বাজারে কর্মসূচি পালন করে।
এসব কর্মসূচি পালনের পর নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ১০টি সাংগঠনিক বিভাগে সমাবেশ করে চাঙা হয় দলটি। বেশিরভাগ সমাবেশেই নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি ছিল। তবে আলোচনার তুঙ্গে ছিল গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশ। নয়াপল্টনে সমাবেশ করাকে কেন্দ্র করে ৭ ডিসেম্বর বিএনপি অফিসের সামনে পুলিশ ও নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির কয়েকশ’নেতাকর্মী গ্রেফতারসহ নানা ঘটনার জন্ম হয় ওই সমাবেশকে কেন্দ্র করে
অবশেষে ১০ ডিসেম্বর গোপীবাগ মাঠে সমাবেশ থেকে আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি ঘোষণা করে বিএনপি। এসব দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিএনপিসহ তাদের সঙ্গে সরকারবিরোধী আন্দোলনে শরিক হওয়া দলগুলো এখন যুগপৎভাবে মাঠে রয়েছে। কয়েকটি জোট, দল ও সংগঠন এখন বিএনপির সঙ্গে এই আন্দোলনে যুক্ত। বিএনপি ও তার শরিকরা এখন পদযাত্রা, অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে। এরইমধ্যে দলটি ঢাকাসহ সব মহানগর, জেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে এসব কর্মসূচি পালন করেছে।
দলটির তৃণমূলের নেতারা মনে করেন, ডিসেম্বর নাগাদ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে নভেম্বরে তফসিল হতে পারে। তাই দল নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হলে বিএনপিকে আগামী জুন বা জুলাইকে আন্দোলনের রোডম্যাপ ধরে মাঠে নামতে হবে। একেবারে শেষ মুহূর্তে একদফার আন্দোলন’যখন শুরু হবে তখন ওয়ার্ড, ইউনিয়নসহ সর্বত্র আন্দোলন ছড়িতে দিতে হবে।
সে লক্ষ্যে চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে কর্মসূচির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এবার রমজানজুড়ে কর্মসূচি ঘোষণা করছে বিএনপি। ১ রমজানের ইফতার পার্টিতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে শনিবার (১ এপ্রিল) সারাদেশের সব মহানগর ও জেলায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। আগামী শনিবার (৮ এপ্রিল) সারাদেশের সব মহানগরের থানা ও জেলার উপজেলা পর্যায়ে বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি।
এছাড়া ১০ দফা, রাষ্ট্র কাঠামো মেরামত, সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে ১০ এপ্রিল রাজশাহী ও সিলেট বিভাগ, ১১ এপ্রিল খুলনা ও কুমিল্লা বিভাগ, ১২ এপ্রিল ঢাকা ও বরিশাল বিভাগ, ১৩ এপ্রিল ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর ও ১৬ এপ্রিল রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের সব ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রচারপত্র বিলি, মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।
এছাড়া ২৮ মার্চ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশের সব মহানগর, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবে দলটি। পাশাপাশি অসহায় মানুষের সহায়তাসহ গণসংযোগমূলক কর্মসূচিতে বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণেরও নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সংগঠন। অর্থাৎ রমজানে মাসব্যাপী বিএনপির কর্মসূচি রয়েছে।
দলটির নেতারা বলছেন, কর্মসূচির ছন্দপতনে যেন নেতাকর্মীরা মাঠ থেকে দূরে সরে না থাকে তার জন্যই এবার রমজানে কর্মসূচি। তাছাড়া আসন্ন ঈদের পর দলটির নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে এক দফার আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি আছে বলেও জানা গেছে। সেই আন্দোলনের প্রস্তুতি হিসেবে রমজানেও নেতাকর্মীদের মাঠে রাখতে বিএনপির এসব কর্মসূচি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় বিএনপি মহাসচিব জানান, মানুষের কিছুটা কষ্ট জেনেও রমজানে কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় এবার রমজানের মধ্যে কর্মসূচি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, এই মুহূর্তে মাঠে থাকার কোনো বিকল্প নেই। আন্দোলনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতেই এবারের রমজানেও মাঠে কর্মসূচি। এসব কর্মসূচি ঈদ-পরবর্তী আন্দোলনে ব্যাপক প্রভাব পড়বে।
বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, কর্মসূচির ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে রমজানের মধ্যেও কর্মসূচি চলমান। আন্দোলনের যেন ছন্দপতন না হয় এজন্য আমাদের কর্মসূচি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের দাবিতে দল আন্দোলনে আছে। সময় বুঝে এবং জনগণের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়েই কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে। সেই গুরুত্বের জায়গা বিবেচনা করে এবার রমজানে কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, বিএনপির সামনে আন্দোলন ছাড়া কোনো পথ নেই। আগামীতে আরও কঠোর আন্দোলনের প্রস্তুতিতে রমজানের কর্মসূচি।