ঈদের আগে চুলের যত্ন নিতে অনেক নারী-পুরুষ ঢুঁ মারেন বিউটি পার্লারে বা স্যালুনে। তবে চাইলে ঘরেও পার্লারের মতোই চুলের যত্ন নিতে পারবেন প্রাকৃতিক এক উপাদান দিয়েই। আর তা হলো জবা ফুল। দেখতে সুন্দর ও আকর্ষণীয় এ ফুল কিন্তু চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে দারুণ কার্যকরী।

হিবিস্কাস বা জবা ফুলে আছে একাধিক পুষ্টিগুণ যেমন- ভিটামিন সি, ফসফরাস, রিবোফ্লাভিন’সহ বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। যা চুলের গোড়াকে মজবুত ও মসৃণ করে। একই সঙ্গে লোমকূপে জমা টক্সিন দূর করে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এসব পুষ্টি।

চুল পড়া বন্ধ করতে ও টাক পড়া রোধ করতে সাহায্য করে জবা ফুল। ভিটামিন সি, ফ্ল্যাভোনয়েডস, অ্যামিনো অ্যাসিড, মিউকিলেজ ফাইবার ও অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর জবার পাতা ও ফুলের নির্যাস চুলকে পুষ্টি দেয় ও চুল লম্বা করে। এমনকি চুল আরও নরম ও সিল্কি করে তোলে।

২০০৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, জবা পাতার নির্যাস চুল লম্বা করতে পারে। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, জবা পাতার নির্যাসে ব্যাকটেরিয়ারোধী ক্ষমতা আছে, যা চুলের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে অবদান রাখে ও খুশকি প্রতিরোধে সহায়তা করে। এছাড়া এই ফুল ও পাতা চুলের বৃদ্ধি, চুল ঘন করতে ও ভলিউম যোগ করতে সাহায্য করে।

চুল লম্বা ও ঘন করতে জবা ফুলের তেল ব্যবহার করুন। এই তেল দিয়ে নিয়মিত স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করলে চুল লম্বা হয় ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। কীভাবে এই তেল তৈরি করবেন?

এজন্য ৮-১০টি জবা ফুল ও পাতা নিয়ে ধুয়ে পিষে নিন। তারপর এক কাপ নারকেল তেল গরম করে তাতে পেস্ট মিশিয়ে নিন।

এবার মিশ্রণটি ২-৩ মিনিট সেদ্ধ করুন ও তারপর পাত্রে ঢাকনা দিয়ে ঠান্ডা হওয়ার জন্য আলাদা করে রাখুন। ব্যাস আপনার জবা ফুলের তেল প্রস্তুত।

চুলের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে নিয়মিত জবা ফুলের নির্যাস ও পেঁয়াজের রস ব্যবহার করতে পারেন। এই হেয়ার মাস্ক ব্যবহারে চুলের সুপ্ত ফলিকলগুলো বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।

এই হেয়ার মাস্ক তৈরি করতে ৩-৪ চা চামচ জবা ফুলের রস নিন ও সমান পরিমাণ তাজা পেঁয়াজের রসের সঙ্গে মিশিয়ে নিন।

চুল ভাগ করে করে সিঁথিতে অর্থাৎ চুলের গোড়ায় গোড়ায় এই হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করে চুল ম্যাসাজ করুন। তারপর কিছুক্ষণ রেখে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

এবার জেনে নিন চুলের যত্নে জবা ফুল কতটা উপকারী-

১. জবা ফুল ও পাতার সক্রিয় উপাদান হলো ফ্ল্যাভোনয়েড ও অ্যামিনো অ্যাসিড, যা মাথার ত্বক ও চুলের গোড়াকে পুষ্ট করে। ফ্ল্যাভোনয়েডগুলো চুলের ফলিকলগুলোতে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে, যা চুলকে গোড়া থেকে শক্তিশালী করে তোলে।

২. জবা ফুলে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড চুলের ফলিকল কোষে কেরাটিন উৎপাদন বাড়ায় ও স্বাস্থ্যকর চুলের বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। পর্যাপ্ত কেরাটিনের উপস্থিতি চুলের ডগা ভাঙাও রোধ করে।

৩. জবা ফুল চুলের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা বজায় রাখে। এটি একটি প্রাকৃতিক আল্ট্রা-ইমোলিয়েন্ট হিসেবে কাজ করে, যা চুলে আর্দ্রতা আটকে রাখে ও চুলকে শুষ্ক ও ঝরঝরে হতে বাধা দেয়।

জবা ফুল ও পাতায় প্রচুর পরিমাণে মিউকিলেজ থাকে, যা প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে। এটি আপনার চুলকে সিল্কি ও মসৃণ করে তুলতে সাহায্য করে।

৪. খুশকি ও চুলকানির সমস্যায় যারা ভোগেন তাদের জন্য কার্যকরী এক দাওয়াই হতে পারে জবা ফুল। এই ফুলে থাকা পুষ্টি উপাদান গ্রন্থিগুলোর মাধ্যমে অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ কমাতে সাহায্য করে।

এছাড়া জবা পাতার অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য মাথার ত্বকে খুশকি সৃষ্টিকারী জীবাণু কমাতে সাহায্য করে। এটি চুলের ফলিকল থেকে খুশকি দূর করে। জবা পাতার নির্যাস নিয়মিত ব্যবহারে চুলের পিএইচ ভারসাম্য বজায় থাকে।

৫. চুল পাকা রোধ করে জবা ফুলে থাকা প্রাকৃতিক রঙ্গক, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন। অকাল ধূসর চুল প্রাকৃতিকভাবে কালো করতে ব্যবহার করতে পারেন জবা ফুলের মাস্ক। এতে থাকা ভিটামিন ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট মেলানিন সংশ্লেষণকে প্রভাবিত করে, যা চুলকে তার প্রাকৃতিক রং দেয়।

৬. টাক পড়া প্রতিরোধেও কাজ করে এই ফুল। কারেন্ট ড্রাগ ডিসকভারি টেকনোলজিসের একটি নিবন্ধ অনুসারে, জবা ফুলের নির্যাসের মতো ভেষজ ওষুধগুলোর কোনো ক্ষতিকারক পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নেই, ফলে চুলের পুনর্গঠনের জন্য নিরাপদ এটি।

কোন রঙের জবা ফুল চুলের জন্য ভালো?

লাল, গোলাপি, হলুদ, কমলা ও সাদার মতো বিভিন্ন আকার ও রঙের বিভিন্ন জাতের জবা পাওয়া যায়। তবে এই উদ্ভিদের মূল উজ্জ্বল লাল ফুল বহন করে। অর্থাৎ লাল টকটকে জবা ফুলেই সবচেয়ে বেশি পুষ্টি আছে। তাই চুলের যত্নে লাল জবা ব্যবহার করুন নিশ্চিন্তে।