চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমালো দুই ঋণদাতা সংস্থা বিশ্ব ব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি। সংস্থা দুটি বলছে, প্রবৃদ্ধি কমার মূল কারণ, আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা, মূল্যস্ফীতি ও বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রভাব।

এমন পরিস্থিতি বিশ্ব ব্যাংক বলছে, চলতি অর্থবছরে দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে পাঁচ দশমিক দুই ভাগ। অন্যদিকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বলছে, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে পাঁচ দশমিক তিন ভাগ।

মঙ্গলবার প্রকাশিত এডিবির ডেভেলপমেন্ট আউটলুক এপ্রিল সংস্করণে এসব তথ্য দেওয়া হয়। এ উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এডিবির ঢাকা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। প্রতিবেদনটির সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন সংস্থাটির সিনিয়র কান্ট্রি স্পেশালিস্ট সুন চান হোং।

গত সেপ্টেম্বরে এডিবির ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে বলা হয়েছিল, চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। ছয় মাসের ব্যবধানে সংস্থাটি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ১ দশমিক ৩ শতাংশীয় পয়েন্ট হ্রাস করেছে।

চলতি এপ্রিলের প্রতিবেদনে এডিবি পূর্বাভাস দিয়েছে চলতি অর্থবছরের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৭ শতাংশ থাকবে। জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়েছে।

আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছর দেশের অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করে প্রতিষ্ঠানটি। এডিবির পূর্বাভাস, আগামী অর্থবছর জিডিপির প্রবৃদ্ধি হতে পারে সাড়ে ৬ শতাংশ। অন্যদিকে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসতে পারে।

তবে, এশিয়ার অন্য দেশের তুলনায় এই হারকে ইতিবাচক বলছে সংস্থা দুটি। এছাড়া পরিস্থিতি উন্নয়নে আর্থিক খাতে ও বাণিজ্য কাঠামোতে সংস্কারের সুপারিশ করেছে তারা।

মূলত ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বহুমুখী চাপে পড়ে দেশের অর্থনীতি। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি ও দেশের ভেতরে টাকার অবমূল্যায়ন তৈরি করেছে নানা ঝুঁকি। রিজার্ভের পতন ঠেকাতে আমদানি কমানোর নীতি নিয়েছে সরকার। কাটছাঁট করেছে উন্নয়ন ব্যয়ও। এতে কমেছে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ। আবার মূল্যস্ফীতির কারণে কমেছে মানুষের ভোগব্যয়। যার প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আদায়ে।

এদিকে সংকট সমাধানে সরকারের নেয়া কিছু নীতির সমালোচনা করেন বিশ্ব ব্যাংকের অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, প্রবৃদ্ধি সঠিক পথে রাখতে জরুরি, সঠিক সংস্কার পদক্ষেপ। বিশ্বব্যাংক বলছে, বাজারভিত্তিক ডলারের দাম, ব্যাংক ও রাজস্ব খাতের সংস্কারের পাশাপাশি বাণিজ্য কাঠামোর বড় ধরনের সংস্কার বাংলাদেশকে দ্রুত উচ্চ প্রবৃদ্ধিতে ফিরতে সাহায্য করবে।

এডিবি বলছে, আর্থিক খাতসহ বিভিন্ন খাতে অব্যাহত সংস্কার আগামী অর্থবছরে ছয় ভাগের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে।