প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় একটু হলেও চিনি রাখেন কমবেশি সবাই। বিশেষ করে রমজানে ইফতারে বিভিন্ন ধরনের পানীয় বা শরবত তৈরিতে কমবেশি চিনির ব্যবহার করেন অনেকেই। তবে চিনি কিন্তু শরীরের জন্য ভালো নয়, এ কথা সবারই জানা। তাহলে চিনির বিকল্প হিসেবে কোনটি খাবেন?

অনেকে অবশ্য চিনির বিকল্প হিসেবে তাল মিছরি কিংবা গুড় ব্যবহার করেন বিভিন্ন শরবত কিংবা খাবারে। এগুলো কি চিনির স্বাস্থ্যকর বিকল্প নাকি ক্ষতিকর? চলুন জেনে নেওয়া যাক-

মিছরি মূলত চিনির অপরিশোধিত রূপ। আখ ও খেজুরের রস থেকে এটি তৈরি করা হয়। যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বলে বিবেচনা করা হয়। নিয়মিত মিছরি ভেজানো পানি খেলে একাধিক অসুস্থতার সমাধান ঘটে।

অন্যদিকে গুড় ও চিনি দুটোই তৈরি হয় আখের রস থেকে। যদিও উভয়ের প্রক্রিয়াকরণ তৈরিতে ভিন্ন। উপকারের কথা আসলে অবশ্যই গুড়ের উপকারিতা চিনির চেয়েও বেশি।

গুড় একটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক শর্করা, যা প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়। যখন চিনিতে ব্লিচিং ব্যবহার করা হয়, যার কারণে চিনিতে রাসায়নিক আসে। অর্থাৎ চিনি তৈরিতে অনেক ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়।

তাল মিছরির উপকারিতা

১. সর্দি-কাশি ও গলা ব্যথার একটি কার্যকরী ঘরোয়া দাওয়াই হলো মিছরি। আধা চা-চামচ মিছরি ও কালো গোলমরিচ পেস্ট তৈরি করে রাতে খেলে গলা ব্যথা সেরে যায়।

২. হজমশক্তি বাড়ায় তাল মিছরি। খাবারের পরে সামান্য তাল মিছরি খেলে হজম ভালো হয় ও বদহজম কিংবা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে।

৩. তাৎক্ষণিক শক্তি বাড়ায় তাল মিছরি। নিস্তেজ মেজাজকে সতেজ করে ও মেনোপজ-পরবর্তী মেজাজ পরিবর্তনের সময় তাল মিছরি খেলে সুফল পাবেন।

৪. তাল মিছরি স্মৃতিশক্তি উন্নত করে ও মানসিক ক্লান্তি দূর করে। রাতে এক গ্লাস গরম দুধে মিছরির সঙ্গে পান করলে স্মৃতিশক্তি বাড়বে।

৫. গরমে প্রশান্তি পেতে এক গ্লাস ঠান্ডা মিছরির পানীয়ের বিকল্প নেই। রিফ্রেশিং এ পানীয় মন ও শরীরের ওপর একটি শান্ত প্রভাব ফেলে ও মানসিক চাপ কমায়।

এমনকি মিছরির তৈরি পানীয় পান করলে তাৎক্ষণিক শক্তি মেলে ও শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষমতা বাড়ে। এমনকি ইন্দ্রিয়গুলো শিথিল হয়।

৬. আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞরা অ্যানিমিয়ার রোগীদের ক্ষেত্রে নিয়মিত মিছরি খাওয়ার পরামর্শ দেন। এতে থাকা বিভিন্ন খনিজ, ভিটামিন ও অ্যামিনো অ্যাসিড রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় ও মাথা ঘোরা, ক্লান্তি ও দুর্বলতার মতো রক্ত স্বল্পতার লক্ষণ কমাতে সাহায্য করে।

৭. তাল মিছরি চিনির চেয়ে ভালো ও বিভিন্ন পুষ্টির একটি পাওয়ার হাউজ। প্রথাগত ওষুধ এটিকে ভালো দৃষ্টিশক্তির জন্য সুপারিশ করে, ছানি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এটি। দৃষ্টিশক্তির উন্নতির জন্য এটি দুধের সঙ্গে পান করুন।

৮. মাউথ ফ্রেশনার হিসেবেও দারুণ কার্যকরী হলো মিছরি। এটি কেবল নিশ্বাসের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি দেয় না বরং সঠিক হজমে সহায়তা করে, হজম রসকে উদ্দীপিত করে ও গ্যাস্ট্রিক সমস্যা প্রতিরোধে সহায়তা করে। উপকার পেতে আধা চা চামচ মিছরি মৌরি বীজের সঙ্গে খান।

গুড়ের উপকারিতা

১. বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকস্থলিতে গুড়ের শোষণ খুব ধীরগতিতে হয়। ফলে রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় থাকে। অন্যদিকে চিনি দ্রুত শোষিত হয় ও অবিলম্বে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

২. গুড় হলো একটি জটিল চিনি, যাতে সুক্রোজ অণুগুলো চেইনে থাকে। অন্যদিকে গুড়ের মধ্যে কার্বোহাইড্রেটের পাশাপাশি খনিজ, ভিটামিন ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে। চিনির ভেতরে ফাঁপা, শুধু ক্যালোরি বেশি থাকে।

৩. আয়ুর্বেদ অনুসারে, গুড়ের অ্যান্টি-অ্যালার্জিক বৈশিষ্ট্য আছে। যা হাঁপানি, সর্দি- কাশি ও বুকের শক্তভাব হওয়ার সমস্যা সারায়।

৪. খাবারের পর গুড় খেলে হজমশক্তি ভালো হয় ও শরীরে জমে থাকা টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে। এসব কারণে চিনির চেয়ে গুড় খাওয়া অনেক ভালো।

৫. রক্তশূন্যতার সমস্যায় গুড় খুবই উপকারী। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিংক ও সেলেনিয়াম থাকে।

শরবত বা পানীয় তৈরিতে চিনির পরিবর্তে তাল মিছরি বা গুড় দুটোই ব্যবহার করতে পারবেন। কারণ মিষ্টির এই দুটি বিকল্পই মোটামুটি স্বাস্থ্যকর।

তবে অতিরিক্ত মিষ্টি পানীয় বা খাবার খাবেন না। আর অবশ্যই ডায়াবেটিস রোগীদের উচিত চিকিৎসকের বিকল্প ছাড়া চিনির কোনো বিকল্পই খাদ্যতালিকায় না রাখা।