বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত এবং রোমান্টিক চলচ্চিত্রের কথা বললে সবার আগে যে চলচ্চিত্রটির কথা চলে আসে, সেটি হলো ‘টাইটানিক’। সিনেমাটি পরিচালনা করেছিলেন হলিউডের বিখ্যাত পরিচালক জেমস ক্যামেরন।

২৫ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৯৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন হলিউডের সবচেয়ে নামকরা দুই অভিনেতা এবং অভিনেত্রী। তারা হলেন সবার রোমান্টিক জুটি লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও ও কেট উইন্সলেট। তবে একটু অন্যভাবে ঘুরিয়ে বলা ভালো যে, এই ছবিতে অভিনয় করেই তারা আজ বিশ্ববিখ্যাত হয়েছেন।

‘টাইটানিক’ সিনেমা মুক্তির ২৫ বছর পরে দর্শকরা যেটা নিয়ে প্রশ্ন করছেন তা হলো হলিউডের অন্যতম সেরা ছবি ‘টাইটানিক’ সিনেমার সমাপ্তি বা শেষ দৃশ্য মোটেও পছন্দ হয়নি দর্শকদের। জ্যাক ও রোজের সমুদ্রের মতো গভীর ভালোবাসার মধ্যে জাহাজ ডুবির নির্মমতা নেমে আসলেও, রোজকে বাঁচিয়ে রেখে জ্যাকের ঠান্ডা পানিতে ডুবে মরে যাওয়াকে মেনে নিতে পারেননি জেমস ক্যামেরনের ভক্ত এবং সাধারণ দর্শকরা।

তাই ১৯৯৭ সালে ছবি মুক্তি দেওয়ার পরও গত ২৫ বছর ধরে জেমস ক্যামেরনকে তার ভক্ত এবং সিনেমার দর্শকদের শোনাতে হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা। সবার প্রশ্ন ছিল- কিভাবে জ্যাক এবং রোজ দুজনকেই সিনেমায় শেষ পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখা যেত? পরিচালক জেমস ক্যামেরন তার টাইটানিক সিনেমায় দেখিয়েছিলেন আটলান্টিক মহাসাগরের হিমশীতল পানিতে একটি কাঠের দরজার ওপর শুয়ে নিজের জীবন বাঁচিয়েছে রোজ।

অপরদিকে ঠান্ডা হিমশীতল পানিতে তার শরীরের অধিকাংশ অংশ ডুবে থাকায় ঠান্ডায় জমে গিয়ে প্রাণ হারায় জ্যাক। তবে দর্শকরা এই সিনেমায় ব্যাপারটি নিয়ে বিভিন্ন বিকল্প উপায় খুঁজে দেখিয়েছেন।

‘দ্য সান মিথবাস্টার’ শো’র মাধ্যমে দেখানো হয়েছে যে, দরজার নিচে রাখা নিজেদের লাইফ জ্যাকেট দিয়ে রাখলেই দরজাটি ভাসিয়ে রাখতে পারতেন জ্যাক এবং রোজ। একটা পর্যায়ে দুজনেই দরজায় উঠে তাদের প্রাণ রক্ষা করতে পারতেন।

বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়া এবং অনলাইনে অনেক ছবি পাওয়া যাবে, যেখানে দেখানো হয়েছে ভাসমান যে দরজাটি তাদের কাছে ছিল সেখানে দুজন মানুষ উঠে বসার জন্য আকারে যথেষ্ট বড় ছিল। সমালোচনা এবং আলোচনা নিয়েই যার পথচলা তিনি ২৫ বছর পর সেই মর্মান্তিক দৃশ্য নিয়ে মুখ খুলেছেন।

পরিচালক জেমস ক্যামেরন জানিয়েছেন, যে তিনি ‘বৈজ্ঞানিকভাবে’ প্রমাণ করেছেন যে জ্যাক এবং রোজ দুজনেই বেঁচে থাকতে পারত না। সিনেমার গল্পের প্রয়োজনে তাদের দুজনের একজনকে মরতেই হতো। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বিশ্ববিখ্যাত এই হলিউড পরিচালক বলেন যে, সিনেমার ওই কাঠের দরজার দৃশ্যটিকে বিশ্বাসযোগ্য করতে তিনি বৈজ্ঞানিকভাবে গবেষণা করেছেন এবং সফল হয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জেমস ক্যামেরন বলেন, ‘আমরা ফরেনসিক বিশ্লেষণ এবং একজন হাইপোথার্মিয়া বিশেষজ্ঞকে সঙ্গে নিয়ে গবেষণা চালিয়েছি। আমরা কেট ও ডিক্যাপ্রিওর সমান শারীরিক কাঠামোর দুজন ডেমি স্টান্টম্যান নিয়ে তাদের সারা শরীরে সেন্সর লাগিয়ে বরফশীতল পানিতে রাখি এবং দেখার চেষ্টা করি যে তারা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় তাদের নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে পারে কিনা।

গবেষণার ফলাফল হিসেবে যা পেয়েছি তা হলো, সম্ভব নয়। জ্যাক এবং রোজ দুজন থেকে শুধুমাত্র একজনই প্রাণে বাঁচতে পারতো। জেমস ক্যামেরনের ঐতিহাসিক এই গবেষণার ফলাফল সামনে আসছে ফেব্রুয়ারি মাসে। এটি ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেলে প্রতিবেদন আকারে দেখানো হবে।’

জেমস ক্যামেরনের মতে, সিনোমর গল্পের প্রয়োজনে জ্যাককে মরতেই হতো। এটা অনেকটা রোমিও এবং জুলিয়েটের প্রেম কাহিনির মতো। আর ‘টাইটানিক’ হলো প্রেম-ভালোবাসা, বিচ্ছেদ ও নৈতিকতার সিনেমা। ত্যাগ বা বিচ্ছেদের মাধ্যমেই ভালোবাসার সঠিক পরিমাপ করা যায়।

জেমস ক্যামেরনের ১৯৯৭ সালের ‘টাইটানিক’ ২০০৯ সালের আগ পর্যন্ত হলিউডের সর্বকালের সবচেয়ে ব্যবসাসফল সিনেমা ছিল। কিন্তু ২০০৯ সালে নতুন সিনেমা ‘অ্যাভাটার’ নির্মাণ করে সারাবিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়। হলিউডে ‘টাইটানিক’কে ছাড়িয়ে ব্যবসায়িক সফল সিনেমার নির্মাতা হিসেবে শীর্ষে অবস্থান করছেন জেমস ক্যামেরন।