ইউক্রেনের বাখমুত শহরের বেসামরিক নাগরিকরা বাড়িঘর ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এতে সহায়তা করছেন ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। অনেকের দাবি, বেসামরিকদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি ইউক্রেনীয় সেনাদের বাখমুত থেকে পিছু হটার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা বলছে, শনিবার (৪ মার্চ) অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) সাংবাদিকরা ইউক্রেনীয় সৈন্যদের বাখমুতের অবশিষ্ট কিছু বাসিন্দাকে নিকটবর্তী গ্রাম ক্রোমোভে পৌঁছাতে সহায়তা করতে দেখেছেন।
আরও জানা যায়, বর্তমানে রুশ বাহিনী বাখমুতের কাছে রয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনারের সদস্যরাও ঢুকে পড়েছেন। ইউক্রেন এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে বাখমুত ছাড়ার কথা না বললেও, ধারণা করা হচ্ছে যে কোনো সময় এ ঘোষণা আসবে।
ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও পশ্চিমা বিশ্লেষকদের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩৬ ঘন্টার মধ্যে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী বাখমুতের ঠিক বাইরে দুটি মূল সেতু ধ্বংস করেছে। যার মধ্যে একটি এ শহরকে নিকটবর্তী শহর চাসিভ ইয়ারের সঙ্গে যুক্ত করেছে।
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়মিত টুইটার আপডেটে জানিয়েছে, বাখমুতের উত্তরাঞ্চলে রুশ যোদ্ধাদের প্রবেশ ঠেকাতে সেতুগুলো ধ্বংস করা হয়। রুশ সেনাবাহিনী ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে।
শুক্রবার (৩ মার্চ) ওয়াশিংটন ভিত্তিক দ্য ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ) জানিয়েছিল, কিয়েভের পদক্ষেপগুলো বাখমুতের কিছু অংশ থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নিতে পারে।
আল-জাজিরা বলছে, সেনাবাহিনী সাহায্য করলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত বাখমুত থেকে সরে যেতে বেসামরিক নাগরিকদের বেগ পেতে হচ্ছে। শনিবার শহর ছেড়ে পালানোর সময় এক নারী রুশ বাহিনীর গোলার আঘাতে মারাত্মক আহত হন। পরে তার মৃত্যু হয় বলে জানা যায়।
নাম না প্রকাশের শর্তে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর একজন প্রতিনিধি এপিকে জানায়, বর্তমানে বাখমুতের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। এমনকি, সেখানকার বাসিন্দাদের জন্য গাড়িতে করে শহর ছেড়ে অন্য কোথাও যাওয়াটাও রীতিমতো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে সবাই হেঁটে শহর ছাড়ছেন।
দীর্ঘ আট মাস ধরে বাখমুতে অব্যাহত হামলা চালাচ্ছে রুশ সেনাবাহিনী। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে রাশিয়ার ভাড়াটে সেনবাহিনী ওয়াগনার গ্রুপ। কয়েক মাস আগে থেকেই মুহুর্মুহু হামলা চালিয়ে ধীরে ধীরে শহরটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল তারা।
শুক্রবার (৩ মার্চ) ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন বলেছিলেন, তার যোদ্ধারা বাখমুতকে ঘিরে ফেলেছে। সর্বশেষ ভিডিওতে, প্রিগোজিন সরাসরি জেলেনস্কিকে শহরটি থেকে সেনা সদস্যদের প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান।
বাখমুতের বাসিন্দা হেন্নাদি মাজেপা ও তার স্ত্রী নাটালিয়া ইশকোভা বলেন, ভয়ঙ্কর যুদ্ধগুলো শহরের বেশিরভাগ অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। শনিবার এপির সঙ্গে কথা বলার সময় ইশকোভা বলেন, আমরা খাদ্য ও মৌলিক সুবিধার অভাবে ভুগছেন।
‘মাসে একবার আমাদের মানবিক সাহায্য দেওয়া হয়। এখানে বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই, গ্যাসও নেই। এরপরও আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, এ শহরের সবাই বেঁচে থাকবে।’
এদিকে, বাখমুতকে রক্ষা করার সর্বোচ্চ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এর জন্য তিনি তার মিত্রদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এরই মধ্যে শনিবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট রবার্টা মেটসোলা ইউক্রেন সফর করেন। সেসময় তিনি দেশটিকে এ বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যপদ নিয়ে আলোচনা শুরুর অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানান।
এদিকে, ইউক্রেনে ট্যাংক সরবরাহ নিয়ে অংশীদারত্বে প্রদর্শনে শুক্রবার বৈঠক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ।
এ বৈঠকের আগে, ক্রেমলিন সতর্ক করেছিল, ইউক্রেনে পশ্চিমা দেশগুলোর অস্ত্র সরবরাহ সংঘাতকে আরও দীর্ঘায়িত করবে ও ইউক্রেনের জনগণের জন্য দুর্দশা বয়ে আনবে। অন্যদিকে, ইউক্রেনকে আরও ৪০ কোটি ডলারের নিরাপত্তা সহায়তার প্রস্তাব দিয়ে মস্কোর সতর্কতার জবাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।