অধিকৃত পশ্চিমতীরে সহিংসতা কমানোর বিষয়ে একমত হয়েছে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন। রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) মধ্যপ্রাচ্যের দেশ জর্ডানের বন্দরনগরী আকাবায় আয়োজিত বৈঠকে সহিংসতা কমাতে শিগগির কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় উভয় পক্ষ।

বৈঠক শেষে একটি যৌথ বিবৃতিতে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলেন, তারা দুই জাতির মধ্যে চলমান উত্তেজনা কমানোর জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে সহিংসতা প্রতিরোধে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে উভয় দেশ।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইসরায়েল চার মাসের জন্য পশ্চিম তীরে নতুন বসতি স্থাপনের আলোচনা বন্ধ করার ও ছয় মাসের জন্য সেখানে নতুন বসতি স্থাপনের অনুমোদন না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাছাড়া এবারের বৈঠকে অংশ নেওয়া সব দেশ এপ্রিলে মিশরের শারম আল-শেখ শহরে পুনরায় আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে।

মার্চের শেষের দিকে শুরু হতে যাওয়া পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে সহিংসতা বৃদ্ধির বিষয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও জর্ডানের কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে আয়োজিত বৈঠক শেষে এ যৌথ বিবৃতি আসে

বিবৃতিতে বলা হয়, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠক আয়োজনকারী দেশ জর্ডান এ সমঝোতাগুলোকে দুই পক্ষের মধ্যে পুনরায় সম্পর্ক স্থাপন ও সে সম্পর্ক গভীর করার দিকে বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে বিবেচনা করছে।

এদিকে, এ বৈঠকে অংশ নেওয়ায় পশ্চিম তীরভিত্তিক ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের তীব্র সমালোচনা করেছে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা শাসনকারী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। তাদের দাবি, বৈঠকটি একেবারেই ‘অর্থহীন’ ও এর ফলে কোনো কিছুরই পরিবর্তন ঘটবে না।

তবে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আকাবা বৈঠকে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্তটি পশ্চিম তীরে রক্তপাত বন্ধ করার ইচ্ছা থেকেই এসেছে।

এদিকে, পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনসংক্রান্ত দায়িত্বে থাকা ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ বলেছেন, আমরা বসতি স্থাপনের বিষয়ে কোনো চুক্তি মেনে চলবো না। জর্ডানে কি নিয়ে কথা হয়েছে, সে সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। তবে একটি বিষয় পরিস্কার, পশ্চিম তীরে জনবসতি স্থাপন থেকে থাকবে না। এমনকি, একদিনের জন্যও নয়। এটি পুরোপুরি আমার কর্তৃত্বাধীন।

পশ্চিম জেরুজালেম থেকে আল-জাজিরার সাংবাদিক সারা খাইরাত বলেন, এ বৈঠক অনেক ফিলিস্তিনিদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। কারণ, এটি আসলে ফলাফল শূণ্য। তাছাড়া ইসরায়েলের নতুন ডানপন্থী সরকারের আমলে পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমসহ দখলকৃত অঞ্চলগুলোতে ধ্বংসযজ্ঞ ও সামরিক অভিযানের প্রবণতা অনেক বেড়েছে।

এদিকে, আলোচনা চলাকালে অধিকৃত পশ্চিম তীরে এক ফিলিস্তিনি বন্দুকধারী দুই ইসরায়েলিকে গুলি করে হত্যা করেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলে, তারা বন্দুকধারীকে শনাক্ত করার চেষ্টা করছে ও পশ্চিম তীরে আরও বেশিসংখ্যক সৈন্য মোতায়েন করেছে।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, নাবলুসের নিকটবর্তী হাওয়ারা গ্রামে নিহত দুজনের মধ্যে একজন সেনা সদস্য ছিলেন। ইসরায়েল সরকার এ ঘটনাকে ‘ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী হামলা’ বলে আখ্যা দিয়েছে।

ওই ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর বসতি স্থাপনকারীদের একটি বড় দল একই গ্রামে প্রবেশ করে ও ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়তে থাকে। পরে তারা সেখানকার বাড়িঘর ও গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন। একপর্যায়ে ইসরায়েলি সেনারাও সেখানে উপস্থিত হন ও গুলি ছুঁড়তে থাকেন।

ফিলিস্তিনের দাবি, ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা কমপক্ষে ১৫টি বাড়ি ও একাধিক গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছেন। ‘অযাচিত’ এ হামলায় একজন ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। তাছাড়া বেশকয়েকটি পরিবার তাদের বাড়িঘর ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।