‘আমরা খুশি। আরও খুশি হবো চাল, ডাল, তেলের দাম কমালে।’ বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়ায় পাবনা পৌর শহরের চা বিক্রেতা শামসুল বিশ্বাস এভাবেই তার প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছিলেন। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রত্যাশা এবার পাবনার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।

রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন কমিশনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন জমা দেওয়ার খবরের পর থেকেই পাবনায় বইছে আনন্দের বন্যা। রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত দফায় দফায় আনন্দ মিছিল হয়েছে। এতে সামাজিক রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক ও সুশীল সমাজের মানুষ অংশগ্রহণ করেন। অনেকে মিষ্টি বিতরণও করেছেন।

আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে একক প্রার্থী, বাকি শুধু আনুষ্ঠানিকতা

মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ডেপুটি স্পিকার এবং পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলামা ফারুক প্রিন্স, সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন, সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবীর, সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস, সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আ স ম আব্দুর রহিম পাকন, পাবনা পৌরসভা মেয়র শরীফ উদ্দিন প্রধান, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল, চেম্বার্স অব কমার্স, জেলা আইনজীবী সমিতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও অনেকে অভিনন্দন বার্তা দিয়েছেন।

এদিকে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি হতে যাওয়ায় পাবনাবাসী নানা প্রত্যাশার কথাও জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জেলা পরিষদের সাবেক সভাপতি রেজাউল রহিম বলেন, ‘মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন পাবনার অহঙ্কার। তিনি একজন নিরহঙ্কার ও সজ্জন মানুষ। এমন একজন ব্যক্তিত্বকে রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন দেওয়ায় আমরা খুব আনন্দিত। একজন যোগ্য মানুষকে তার যোগ্য সম্মান দেওয়া হয়েছে। পাবনাবাসীর কল্যাণে তিনি অবশ্যই কাজ করবেন।’

আরও পড়ুন: মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের বর্ণাঢ্য জীবন

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পাবনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স বলেন, ‘বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী এমন একজন সৎ সর্বজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে দেশের রাষ্ট্রপতি মনোনীত করায় পাবনাবাসী আনন্দিত।’

পাবনার সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলি বলেন, ‘একজন সৎ ও দক্ষ ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন দেওয়ায় পাবনাবাসীর সঙ্গে আমিও আনন্দিত।’

পাবনার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবক অধ্যক্ষ মাহাতাব উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘পাবনার উন্নয়ন এবার নিশ্চয়ই ত্বরান্বিত হবে। নানামুখী সমস্যার সমাধান হবে।’

সাধারণ মানুষজনও জানান তাদের প্রত্যাশার কথা। আটঘরিয়া উপজেলার চান্দাই গ্রামের আলী আকবর বলেন, ‘তিনি রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন জেনে খুব খুশি। এলাকার মানুষ হিসেবে তিনি আমাদের একজন ভাই। আর তার দ্বারা পাবনার অনেক উন্নয়ন হবে, এটাই খুশির বিষয়।’

পাবনা পৌর শহরের ব্যবসায়ী রনজিত কুমার প্রামানিক বলেন, ‘এতদিন আমরা যা চিন্তাও করিনি তাই পেয়ে গেলাম। এবার পাবনার নানামুখী উন্নয়ন বেগবান হবে আশা করি।’

মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ১৯৪৯ সালে পাবনা শহরের জুবিলি ট্যাঙ্কপাড়ায় (শিবরামপুর) জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শরফুদ্দিন আনছারী ব্যবসায়ী ও মাতা খায়রুন্নেসা গৃহিণী ছিলেন। চার ভাই ও ছয় বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। ছাত্রজীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

পাবনা প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্য মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিনের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। তিনি ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডার হিসেবে যোগ দেন। বিচারকের বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২৫ বছর পর ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন।

২০১১-২০১৬ সাল পর্যন্ত মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।