অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ অনুমোদন মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হলো যে, আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক এলাকাগুলো শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে আছে এবং অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় ভালো।
আইএমএফের বোর্ডসভায় বাংলাদেশ সরকারকে দুটি খাতে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন দেওয়ার পর মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, অনেকেই সন্দেহ পোষণ করেছিলেন যে আইএমএফ হয়তোবা আমাদের এ ঋণ দেবে না। তারা ভেবেছিল আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক এলাকাগুলো দুর্বল, তাই আইএমএফ এ ঋণ দেওয়া থেকে বিরত থাকবে। এ ঋণ অনুমোদনের মাধ্যমে এটাও প্রমাণিত হলো যে, আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক এলাকাগুলো শক্ত ভিতের উপরে দাঁড়িয়ে আছে এবং অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় ভালো। বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে সোমবার (৩০ জানুয়ারি) ঋণ দিতে অনুমোদন দেয় আইএমএফ বোর্ডসভা। এ জন্য আইএমএফের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গত বছরের জুলাইয়ে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ চেয়ে আইএমএফকে চিঠি দেওয়া হয়। এরপর ২৬ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করে রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল। সেসময় প্রতিনিধি দলটি ঢাকা ছাড়ার আগে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে ৯ নভেম্বর একটি বৈঠক করে। ওই বৈঠকের পর আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমরা যেভাবে চেয়েছিলাম সেভাবে আইএমএফের ঋণ পেতে যাচ্ছি। আগামী ফেব্রুয়ারি (চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি) মাসে ঋণের প্রথম কিস্তি পাওয়া যাবে। ২০২৬ সালের মধ্যে সব ঋণ পাওয়া যাবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আইএমএফ তিন মাসের মধ্যে ঋণ প্রস্তাবের সব আনুষ্ঠানিকতা এবং চূড়ান্ত বোর্ড অনুমোদ সম্পন্ন করবে। ঋণটি ২০২৬ সাল পর্যন্ত চার বছর মেয়াদি। এ ঋণ মোট সাত কিস্তিতে পাওয়া যাবে। মোট ঋণের পরিমাণ ৩ দশমিক ৪৬৮ বিলিয়ন এসডিআর (বিশ্বব্যাংকের স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস), যা বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তিনি বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে আইএমএফ প্রথম কিস্তি ৩৫২ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন এসডিআর অর্থ ছাড় করবে। বাকি ঋণ প্রতি ছয় মাস ৫১৯ মিলিয়ন এসডিআর হিসেবে ছয়টি সমান কিস্তিতে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পাওয়া যাবে। বর্তমান এসডিআর ইন্টারেস্ট রেট অনুযায়ী ঋণের গড় সুদ হার ২ দশমিক ২০ শতাংশ। মুস্তফা কামাল বলেন, ঋণের মোট তিনটি অংশ। এর মধ্যে প্রথম অংশের ৮২২ দশমিক ৮২ মিলিয় এসডিআরের জন্য কোনো সুদ দিতে হবে না। ঋণের বাকি অংশের মধ্যে ১ হাজার ৬৪৫ দশমিক ৬৪ এসডিআরের সুদ হার নির্ধারিত হবে এসডিআর ফ্লোটিং রেটের সঙ্গে এক শতাংশ যোগ করে। আর বাকি ১ বিলিয়ন এসডিআরের সুদ হার হবে এসডিআর ফ্লোটিং রেটের সঙ্গে দশমিক ৭৫ শতাংশ যোগ করে।
তিনি বলেন, বিশ্বের অর্থনীতিই এখন একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। উন্নত থেকে উন্নয়নশীল সব দেশে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। প্রায় সব দেশের মুদ্রার মান ডলারের বিপরীতে কমে গিয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এ উত্তাপের আঁচ আমাদের অর্থনীতিতেও কিছুটা লেগেছে। এ অস্থিরতা যাতে কোনো ধরনের সংকটে ঘনীভূত না হয় তা নিশ্চিত করতেই আমরা আগাম সতর্কতা হিসেবে আইএমএফের ঋণের জন্য অনুরোধ করেছিলাম।
এরপর ঋণ সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনা করতে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি ঢাকায় আসেন আইএমএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) আন্তোয়নেট মনসিও সায়েহের। তার সঙ্গে ছিলেন আইএমএফ মিশনপ্রধান রাহুল আনন্দ। পাঁচদিনের সফর শেষে ১৮ জানুয়ারি ঢাকা ছাড়েন আইএমএফ ডিএমডি।
বাংলাদেশকে ৪২ মাসের জন্য নানা কর্মসূচির আওতায় এ ঋণ দেওয়া হয়েছে। দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা করতে, পিছিয়ে পড়া মানুষদের সুরক্ষা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সবুজ প্রবৃদ্ধিতে উৎসাহিত করতে এ ঋণ ব্যবহার করা হবে। বৃহত্তর সামাজিক ও উন্নয়নমূলক ব্যয় সক্ষম করার জন্য আর্থিকখাত তৈরিতে ফোকাস করবে আইএমএফ ঋণ। আর্থিক খাত শক্তিশালীকরণ, নীতি কাঠামো আধুনিকীকরণ এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা তৈরিতে সহায়তা করবে এ ঋণ। শিগগির ৩৫২ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন এসডিআর বা প্রায় ৪৭৬ মিলিয়ন ডলার অর্থ ছাড় করা হবে বলে আইএমএফের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।