২০১৯ সালের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে সর্বপ্রথম করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব শনাক্ত হয়। এরপর বিশ্বজুড়ে এ মারণ ভাইরাসটি মহামারি রূপ নেয়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, ফ্রান্স, ভারত ও ব্রাজিলের মতো দেশগুলো করোনার ছোবলে হয়ে ওঠে মৃত্যুপুরী। তবে উহানকে করোনার উৎসমুখ ধরা হলেও বিশ্বের অন্য দেশগুলোর তুলনায় চীন ছিল অনেকটাই অক্ষত। দেশে দেশে যখন কোভিড-১৯ রোগীদের মৃত্যুর মাতম তখনো চীনে তুলনামূলক শিথিল ছিল সংক্রমণ পরিস্থিতি। অথচ অনেক দেশ এটিকে ‘চীনা ভাইরাস’ হিসেবেও আখ্যা দিয়েছে। এমনকি সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে শি জিন পিংয়ের দেশকে।

কিন্তু আসলেই কি চীনে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু কম ছিল? এ প্রশ্নের জবাব এসেছে চীনেরই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে। চীনা প্রশাসনের বিরুদ্ধে কোভিড সংক্রমণের সঠিক তথ্য প্রকাশ না করার অভিযোগ থাকলেও এবার বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় চীনে করোনার বিস্তার নিয়ে একটি সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারির শুরু থেকে গত ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত গত তিন বছরে দেশটিতে করোনাভাইরাসে মোট ৯০০ মিলিয়ন মানুষ বা ৯০ কোটি চীনা নাগরিক আক্রান্ত হয়েছেন। খবর বিবিসির।

আরও পড়ুন: বিদেশফেরত যাত্রীদের ওপর আরোপ করা বিধিনিষেধ তুলে নিলো চীন

সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে, বর্তমানে চীনের মোট জনসংখ্যার ৬৪ শতাংশ মানুষ কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় গানসু প্রদেশে। সেখানে এখন প্রায় ৯১ শতাংশ অর্থাৎ ২৩৯ মিলিয়ন বা ২৩ কোটি ৯০ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত। এছাড়া ইউনান প্রদেশে ৮৪ শতাংশ ও কিংহাই প্রদেশে আক্রান্ত ৮০ শতাংশ।

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের আশঙ্কা, করোনার নতুন ঢেউয়ে সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে। এছাড়াও আগামী ২১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হতে যাওয়া লুনার নিউ ইয়ার বা চন্দ্রবর্ষ ঘিরে চীনের গ্রামীণ অঞ্চলে করোনার ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। কারণ, দেশটির সর্ববৃহৎ এই উৎসবের সময় লাখ লাখ চীনা অভিবাসী শ্রমিক স্বজনদের কাছে গ্রামে ফেরে। বিপুল সংখ্যক মানুষের স্থানান্তরে সংক্রমণ ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে। যদিও এরই মধ্যে দেশটির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: চীনে লকডাউন তুলে নেওয়ায় যেভাবে চাপে পড়বে বিশ্ব অর্থনীতি

বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চীনা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের সাবেক প্রধান জেং গুয়াং জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণের এই স্রোত আরও অন্তত দু-তিন মাস স্থায়ী হবে। তবে এই সংকট পরিস্থিতিতে দেশটির গ্রামীণ এলাকার নাগরিকেরা পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না বলেও জানান তিনি।

চীনে মহামারি করোনাভাইরাসের চতুর্থ ঢেউ চলছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটির সরকার। সবশেষ ঘোষণায় দেশটির বয়স্ক ব্যক্তিদের কাছ থেকে যারা এখনো আক্রান্ত হননি তাদের দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়েছে। বর্তমানে বেইজিং এবং সাংহাইয়ের মতো বড় শহরগুলো সবচেয়ে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ সময় পার করছে বলে চীনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে।

আরও পড়ুন: চীনে ভ্রমণ সতর্কতা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত

জনবিক্ষোভের মুখে গত ডিসেম্বরে ‘জিরো কোভিড’ নীতি বাতিলের ঘোষণা দেয় চীন সরকার। গত ৮ জানুয়ারি এই নীতির সর্বশেষ বিধিনিষেধ ভ্রমণকারীদের জন্য কোয়ারেন্টাইন বাধ্যবাধকতা তুলে নিয়ে সীমান্ত খুলে দেয় চীন। এরই মধ্যে দেশটিতে করোনার নতুন ঢেউ ভয়াবহ হয়ে ওঠে।